রবিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

নাটোরে শোকের মাতম

নিয়ন্ত্রণহীন বাসের ধাক্কায় ঝরে গেল ১৫ প্রাণ ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি

নাটোরে শোকের মাতম

নাটোরে গতকাল নিয়ন্ত্রণহীন বাসের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে গেছে লেগুনা (ওপরে)। পীরগঞ্জে বাস ছিটকে পড়েছে ধান খেতে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার সীমান্ত লালপুরের কদিমচিলান কিলিক মোড় এলাকায় নিয়ন্ত্রণহীন বাসের চাপায় প্রাণ গেছে ১৫ জনের। গতকাল বিকালে নাটোর-পাবনা মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটেছে। এই নিহতের ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

বনপাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিএম শামসুন নুর জানান,  বেপরোয়া বাসটি লেগুনাকে চাপা দিলে এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নিহতদের সবাই লেগুনার যাত্রী। হাইওয়ে থানার এসআই তরিকুল ইসলাম জানান, পাবনা থেকে বগুড়ামুখী চ্যালেঞ্জার পরিবহনের একটি বাস কদিমচিলান এলাকায় বিপরীতমুখী একটি লেগুনাকে সামনে থেকে চাপা দেয়। এতে লেগুনার সব যাত্রী ছিটকে পড়লে চাপা পড়ে ২ শিশু, ৬ নারীসহ ১৩ যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন।  এ সময় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে বাসের অন্তত ১৩ যাত্রী আহত হন। আহতদের মধ্যে ২ জনকে গুরুতর অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের বনপাড়ার বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতরা হলেন উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের তাহের উদ্দিনের স্ত্রী শেফালী বেগম (৪৫), রূপচাঁদ প্রামাণিকের স্ত্রী সেবু বেগম (৩৫), জামাইদিঘা গ্রামের নওফেল হোসেনের স্ত্রী লাগেনা বিবি (৫৫), মালিপাড়া গ্রামের লেগুনা চালক আবদুর রহিম (৩০)। অন্যদের পরিচয় এখনো জানাতে পারেনি পুলিশ। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহতদের স্বজনদের মাঝে শোকের মাতম শুরু হয়। এদিকে ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন নাটোরের এডিএম রেজ্জাকুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল আবুল হাসনাত ও বিআরটিএ নাটোরের সহকারী পরিচালক আশরাফুজ্জামান। এ ছাড়া আরেকটি দুর্ঘটনায় দুপুরে বড়াইগ্রাম উপজেলার রাজ্জাক মোড় এলাকায় বাস-ট্রাক সংঘর্ষে ট্রাকচালক বাবু হোসেন (৩০) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

তদন্তে কমিটি : সম্প্রতি ঈদুল আজহার আগে ও পরে নরসিংদী, নাটোর, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে গতকাল সন্ধ্যায় এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সফিকুল ইসলামকে ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও ৯ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এ দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে রাজশাহী, কুমিল্লা, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁওয়ে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

রাজশাহী : রাজশাহীর কাটাখালীতে অটোভ্যান উল্টে নানা-নাতি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন। তাদের মধ্যে একজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপরজনকে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কাটাখালীর সমশাদিপুর এলাকায় রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন কাটাখালীর দেওয়ানপাড়া এলাকার নাজিম (৫০) ও তার নাতি আরাফাত (৩)। আহতরা হলেন নাজিমের স্ত্রী আছিয়া বেগম (৪৫) ও তাদের আরেক নাতি নোমান (৫)।

নাজিমের চাচাতো ভাই ও কাটাখালী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল মোতালেব জানান, সকালে নাজিম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিজের অটোভ্যানে কাপাশিয়া এলাকায় শ্যালিকার বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। এ সময় ভ্যানের ডান পাশের চাকার শকাব ভেঙে রাস্তার ওপর উল্টে যায়। এতে তারা চারজন আহত হন। পরে তিনজনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা নাজিম ও তার নাতি আরাফাতকে মৃত ঘোঘণা করেন। আর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আছিয়া বেগমকে। তবে নোমানকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। কাটাখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ও দমকল কর্মীরা গিয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। তবে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই নাজিম মারা যায়। আর শিশু আরাফাত মারা যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায়।

কুমিল্লা : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দির পৃথক স্থানে গতকাল ভোরে শ্যামলী পরিবহনের দুটি বাস খাদে পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫০ জন। তাদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিহতরা হলেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে ইয়াছিন মিয়া ও বগুড়ার সোনাতলা এলাকার জামাল উদ্দিন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৩ জনকে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ১০ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। যাত্রীরা জানান, বেপরোয়া গতির কারণে বাস নিয়ন্ত্রণ হারায়। যাত্রীরা একাধিকবার চিৎকার করে বাস ধীরে চালাতে বললেও চালক শোনেননি। দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, জিংলাতলীতে দিনাজপুর থেকে চট্টগ্রামগামী শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে বাসটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে বাসের দুই পুরুষ যাত্রী নিহত হন। কমপক্ষে ৩৫ জন যাত্রী আহত হন। একই সময় রংপুর থেকে চট্টগ্রামগামী শ্যামলী পরিবহনের আরেকটি বাস দাউদকান্দির রায়পুরে মহাসড়কের পাশের খাদে পড়ে যায়। এতে কমপক্ষে ১৫ জন যাত্রী আহত হন। দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, দুটি দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত ও ৫০ জন আহত হন।

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় পাতাড়ি খাতুন (৩৫) নামে দুই সন্তানের জননী নিহত হয়েছেন। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছেন নসিমন চালক কামাল হোসেন। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত পাতাড়ি খাতুন শৈলকুপা উপজেলার মহিষাডাঙ্গা গ্রামের হজরত আলী মালিথার মেয়ে। শৈলকুপা থানার এসআই মতিয়ার রহমান জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাতাড়ি খাতুন শৈলকুপার শেখপাড়া আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়ানো শেষে নসিমনযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের গাড়াগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের কাছে এসে পৌঁছালে খুলনার শৈরপুর থেকে ছেড়ে আসা হিমেল পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস নসিমনটিকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে দুই সন্তানের জননী পাতাড়ি খাতুন নিহত হন।

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) :  গতকাল বিকাল পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গার হামেরদী ইউনিয়নের হামেরদী গ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় একজন নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছেন। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি শেখ মাহফুজার রহমান জানান, গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী কমফোর্ট লাইন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গাগামী একটি তিন চাকার যান মাহেন্দ্রর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় মাহেন্দ্রর যাত্রী ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের বিভাগদী গ্রামের সোহরাব মাতুব্বরের ছেলে শামীম শেখ (৩০) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। দুর্ঘটনায় মাহেন্দ্রর আরও ছয় যাত্রী আহত হন। তাদের দুজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) : ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে গতকাল সকালে পিকনিকের মিনিবাস উল্টে অর্ধশত নারী, পুরুষ ও শিশু আহত হয়েছেন। তাদের পীরগঞ্জ এবং দিনাজপুর এম আবদুুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, পীরগঞ্জ উপজেলার শাটিয়া ঈদগাহ ময়দান থেকে স্বপ্নপুরীতে পিকনিকে যাওয়ার উদ্দেশে ৫০/৬০ জন নারী-পুরুষ ও শিশু নিয়ে সুরুচি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি মিনিবাস যাত্রা করে। কিছুদূরে যাওয়ার পর সিঙ্গারোল এলাকায় বাসটি রাস্তার ধারে উল্টে ধানখেতে চলে যায়। এতে ওই মিনিবাসে থাকা সবাই আহত হন। খবর পেয়ে পীরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তাদের উদ্ধার করে পীরগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে সাবেক এমপি ইমদাদুল হক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ হাসপাতালে এসে আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং সুচিকিৎসার জন্য নির্দেশ দেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম মোস্তফা জানান, পিকনিকের মিনিবাস দুর্ঘটনায় ৩৯ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।

হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) : কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে দরিয়াবাজ মসজিদের মোয়াজ্জিন আ. গনি (৬৫) মোটরসাইকেলের চাপায় নিহত হয়েছেন। স্বজনরা জানান, গতকাল জোহরের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে রাস্তা পারাপারের সময় হোসেনপুর-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে একটি দ্রুতগামী মোটরসাইকেল চাপা দিলে এলাকাবাসী আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পথেই তিনি মারা যায়। এদিকে আশপাশের লোকজন  মোটরসাইকেলের চালকসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। আটককৃতরা হলেন আবু নাঈম (২১), মাসুম মিয়া (১৭), সাকিব মিয়া (২০)।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর