রবিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিচার দাবি গণহত্যা ধর্ষণ নির্যাতনের

মিয়ানমারের নাগরিকত্ব চেয়ে রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ

কক্সবাজার প্রতিনিধি

মিয়ানমারের নাগরিকত্ব চেয়ে রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ

কক্সবাজারে কুতুপালং ক্যাম্পে গতকাল বিক্ষোভ করে রোহিঙ্গারা —এএফপি

মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সে দেশের সেনাবাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের এক বছর পূর্ণ হওয়ায় ২৫ আগস্টকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করেছেন বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। এ উপলক্ষে টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা গতকাল সকাল ৯টায় গণহত্যার বিচার চেয়ে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, হাকিম পাড়া, জামতলীসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের বিচার দাবিতে এ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় বিক্ষোভ মিছিলে হাজার হাজার রোহিঙ্গা পুরুষ ও নারী, শিশু অংশগ্রহণ করে। রোহিঙ্গা আলেমরা মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মিছিলকারীরা প্লাকার্ডে ১০০ নারীকে ধর্ষণ, ৩০০ গ্রাম নিশ্চিহ্ন, ৩৪ হাজার শিশুকে এতিম, ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আরাকান রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত ও ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যার বিবরণ তুলে ধরেন। তারা মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দাবি করেন।

মিছিলের আগে টেকনাফ ক্যাম্পের শালবন মরকজ, কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পের বিভিন্ন মসজিদে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় তারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতার নেত্রী সম্বোধন করে ধন্যবাদ জানান এবং এ দেশের সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও উখিয়া-টেকনাফের মানুষের প্রতিও ধন্যবাদ জানান। বক্তব্যে তারা মিয়ানমার সরকারের বিচার, স্বদেশে ফিরার পরিবেশ তৈরিসহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেন। সমাবেশে নাগরিকত্ব ও দাবি-দাওয়া আদায়ের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরতে চান বলেও একাধিক রোহিঙ্গা নেতা জানান। সমবেত রোহিঙ্গারা অং সান সু চি-বিরোধী স্লোগান দেন। টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রণজিৎ কুমার বড়ুয়া জানান, অনুমতিসাপেক্ষে রোহিঙ্গারা প্রতিবাদ সমাবেশ ও শোক পালন করছেন। তবু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৫ আগস্ট গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, হাকিমপাড়া, জামতলীসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে। গতকাল সকালে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প এলাকায় মিছিল, সমাবেশ শুরু করেন। সকালে কুতুপালং এলাকায় সড়ক বন্ধ করে মিছিল করেন রোহিঙ্গারা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিভিন্ন ক্যাম্পে সমাবেশ চলছিল। উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) খাইরুজ্জামান জানান, ক্যাম্প অভ্যন্তরে বিভিন্ন দাবিতে রোহিঙ্গারা মিছিল, সমাবেশ করছেন। উল্লেখ্য, আরসা নামক একটি সশস্ত্র সংগঠনের সদস্যদের সেনাছাউনিতে হামলা ঘটনার অজুহাতে গত বছর ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। দেশটির সেনা, বিজিপি ও উগ্রবাদী রাখাইন যুবকরা গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দিয়ে রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুদের ওপর বর্বরোচিত নৃশংসতা চালায়। প্রাণ বাঁচাতে বানের পানির মতো বাংলাদেশের দিকে ছুটতে থাকেন রোহিঙ্গারা। বর্তমানে নতুন-পুরান মিলে উখিয়া-টেকনাফের ৩০টি অস্থায়ী ক্যাম্পে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৭ জন রোহিঙ্গা আশ্রয়ে রয়েছেন বলে সূত্রে জানা গেছে। এসব শিবিরে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আশ্রিত রোহিঙ্গারা সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলেও এভাবে অনিশ্চিত ও ভাসমান অবস্থায় দীর্ঘদিন থাকতে চান না।

সর্বশেষ খবর