মঙ্গলবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

নারীরা কেন তালাকে এগিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নারীরা কেন তালাকে এগিয়ে

রাজধানীতে শিক্ষিত দম্পতিদের মধ্যে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রবণতা। প্রতিদিন ২৪টিরও বেশি বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়ছে দুই সিটি করপোরেশনে। এই তালাকের আবেদনে পুরুষদের তুলনায় নারীদের সংখ্যা বেশি। স্বামীর মাদকে আসক্ত হওয়া এবং যৌতুক দাবিকে তালাকের জন্য দায়ী করা হচ্ছে। শুধু রাজধানীতে নয় পুরো দেশের চিত্রই এরকম।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ অনাকাঙ্ক্ষিত। নাগরিক ব্যক্তিজীবনে স্বাতন্ত্র্যবাদ বেড়েছে। মানুষ নিজেদের ভালোমন্দ সম্পর্কে মনোযোগী হচ্ছে। নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ায় আগে নির্যাতিত নিগৃহীত হলেও মেনে নেওয়ার যে প্রবণতা ছিল তা কমেছে। ফলে তারা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে। তিনি আরও বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়লে যে সমাজ ভেঙে পড়বে এটা চিন্তা করা ভুল। পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সমাজ চলতে পারে। একসঙ্গে বসবাস করে তিক্ত সম্পর্কের মধ্য দিয়ে সন্তানকে লালন-পালন করার চেয়ে আলাদা থেকে ভালোভাবে তাদের বড় করা যৌক্তিক হবে। বাবা-মাকে সন্তানদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। রাষ্ট্রীয় আইনেও সেই ধরনের বিধান থাকতে হবে। অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নের বিস্তর পার্থক্যের কারণে এটা ঘটছে। দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, স্ত্রীর পক্ষ থেকে তালাকের আবেদন বাড়ছে। উত্তর ও দক্ষিণে তালাকের আবেদনের প্রায় ৭০ শতাংশই স্ত্রীর পক্ষ থেকে এসেছে। অন্য নারীর সঙ্গে স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, সামাজিক বন্ধনমুক্ত থাকার প্রবণতাসহ বিভিন্ন কারণে উত্তর সিটি করপোরেশনের গুলশান ও বনানীর অভিজাত পরিবারের শিক্ষিত ও বিত্তবান নারীরা বেশি তালাকের আবেদন করছেন। আবার মোহাম্মদপুর, কারওয়ান বাজার এলাকায় পেশাজীবী নারীরা বেশি তালাক দেন। তালাকের সবচেয়ে বড় কারণ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ‘বনিবনা না হওয়া’। স্ত্রীর করা আবেদনে কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বামীর সন্দেহবাতিক মনোভাব, পরনারীর সঙ্গে সম্পর্ক, যৌতুক, দেশের বাইরে গিয়ে আর ফিরে না আসা, মাদকাসক্তি, ফেসবুকে আসক্তি, পুরুষত্বহীনতা, ব্যক্তিত্বের সংঘাত, নৈতিকতাসহ বিভিন্ন কারণ। আর স্বামীর অবাধ্য হওয়া, ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী না চলা, বদমেজাজ, সংসারের প্রতি উদাসীনতা, সন্তান না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে স্ত্রীকে তালাক দিচ্ছেন স্বামী। ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) তালাকের আবেদন পড়ে ৪ হাজার ৭৭টি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ৪ হাজার ৭৬১টি। ২০১৬ সালে ডিএনসিসিতে তালাকের আবেদন পড়ে ৪ হাজার ৮৪৭টি এবং ডিএসসিসিতে ৪ হাজার ৮৯৭টি। গত বছর ডিএনসিসিতে তালাকের আবেদন পড়েছে ৫ হাজার ৪৬টি এবং ডিএসসিসিতে ৫ হাজার ২৪৫টি। সারা দেশে গত সাত বছরে তালাকের প্রবণতা বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। তালাকের আবেদন সবচেয়ে বেশি বেড়েছে উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ৭৫ শতাংশ। দক্ষিণ সিটিতে বেড়েছে ১৬ শতাংশ।  তালাকের প্রবণতা সারা দেশের হিসাবেও বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গত জুন মাসে দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস শীর্ষক গবেষণায় দেখা যায়, গত বছর ১৫ বছরের বেশি বয়সী প্রতি এক হাজার নারী-পুরুষের মধ্যে গড়ে ১ দশমিক ৪টি তালাকের ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালে যা ছিল ১ দশমিক ৫। শিক্ষিত স্বামী-স্ত্রীদের মধ্যে তালাক বেশি হচ্ছে। এ ব্যাপারে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. মোহিত কামাল বলেন, নারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। আগে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হলে নারীরা মুখ বুঝে সহ্য করতেন কিন্তু এখন তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বাড়লে বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা আরও বাড়বে। শহরে বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ মাদক আর গ্রামে যৌতুক এবং কুসংস্কার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর