বুধবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

মন্ত্রীর বক্তব্যে ধোঁয়াশা টালমাটাল শ্রমবাজার

আলোচনার পর সিদ্ধান্ত : মাহাথির

জুলকার নাইন

মন্ত্রীর বক্তব্যে ধোঁয়াশা টালমাটাল শ্রমবাজার

পরপর কয়েকটি বড় শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং নতুন বাজার চালু করতে না পারায় জনশক্তি রপ্তানি খাতে যে অস্থিরতা চলছিল তা এখন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে জিটুজি পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তৈরি করেছে দমকা হাওয়া। টালমাটাল এ পরিস্থিতিতে যখন নতুন কর্মী যাওয়ার পথ সীমিত হয়ে আসছে তখন পুরনো কর্মীদের ফেরত পাঠানোর ঢল নামার শঙ্কাও আছে। লক্ষাধিক অবৈধ বাংলাদেশিকে ফিরতে হচ্ছে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে। এ ছাড়া নির্যাতন এতটাই অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে সৌদি আরবে বাংলাদেশের নারী কর্মী পাঠানোর বিষয়েও।

নানান উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবে নতুন শ্রমবাজার খুলছে না বাংলাদেশি কর্মীদের। ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশগুলোর দুয়ার এখনো বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য বন্ধ। চলতি বছরে বিদেশগামী ১০ লাখ কর্মীর ৯০ শতাংশেরই গন্তব্য পুরনো বাজার মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে। কিন্তু এর মধ্যে সৌদি আরবের নতুন নিয়ম, আমিরাতের ভিসা বন্ধ, কুয়েতের নতুন নিষেধাজ্ঞা, লিবিয়ার অস্থিরতা মধ্যপ্রাচ্যের সংকটকে দীর্ঘায়িত করেছে। শুধু মালয়েশিয়ায় সরকারি পর্যায়ে জিটুটি প্লাস পদ্ধতিতে কর্মী প্রেরণই আশার আলো ছড়াচ্ছিল। গত ২১ আগস্ট মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ইন্দেরা খাইরুল দাজমি বিন দাউদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে জানানো হয়েছে, সে দেশের বিগত সরকার বাংলাদেশের যে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি মারফত শ্রমিক নিত, তাদের এসপিএ সিস্টেম ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাতিল হয়ে যাবে। আগের সরকারের আমলে সিদ্ধান্ত হওয়া এই ১০টি এজেন্সির বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ করেছে দেশটির সরকার। এর সঙ্গে মালয়েশিয়ার আগের সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন মালয়েশিয়ার নাগরিকও জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বর্তমান পদ্ধতিতে আর কর্মী নেবে না বলে জানিয়েছে তারা। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ গত সপ্তাহে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার পর পরবর্তী পদ্ধতি ঠিক করে বাজার খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদিও ঢাকায় প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি গতকাল দাবি করেছেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধের যে খবর বেরিয়েছে তা সঠিক নয়। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়নি। তবে বিদ্যমান প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে আগের নিয়মেই লোক পাঠানো যাবে আশা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানায়নি মালয়েশিয়া। প্রকৃত অবস্থা জানতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনকে দেশটির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। একটি ‘ভারবাল নোট’ বা চিঠি দেওয়া হচ্ছে। আশা করি খুব শিগগিরই একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার এখনো চালু আছে, শুধু পদ্ধতিগত পরিবর্তনের কথা বলছে তারা। এখনো ৩০ হাজার ভিসাসংবলিত অপেক্ষমাণ শ্রমিক আছে। তারা তো বলেনি যে এরাও যেতে পারবে না। শুধু ৩১ আগস্ট পর্যন্ত যে এসপিপিএ সিস্টেম আছে সেই সিস্টেমে যেতে পারবে। এক প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম বলেন, ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেটের কথা বলা হচ্ছে তা বাংলাদেশ সরকারের নয়, মালয়েশিয়া সরকারের সৃষ্ট। এ বিষয়ে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অভিযোগ জানায়নি। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান পদ্ধতি বাতিলের বিষয়ে শিগগিরই প্রকৃত অবস্থা জানা সম্ভব হবে। তবে কর্মী যাচ্ছে এবং বর্তমান পদ্ধতি বাতিল হলে ১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে অটোমেটিকালি পুরনো পদ্ধতিতে যাবে। তবে এই পুরনো পদ্ধতির বিস্তারিত কিছুই জানাননি মন্ত্রী। ইতোমধ্যে যাদের মালয়েশিয়ার ভিসা হয়ে গেছে তারা মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রণালয়ের সচিব নমিতা হালদার বলেন, ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বর্তমান পদ্ধতি কাজ করবে। ২৫ থেকে ৩০ হাজার কর্মীর ভিসা হয়ে গেছে এই সময়ের মধ্যে তারা যেতে পারবেন। এদিকে, মালয়েশিয়ায় দীর্ঘদিন বসবাসের পরও অবৈধ হয়ে পড়া লক্ষাধিক বাংলাদেশিকে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে বাংলাদেশে ফিরতে হবে। না হলে জেল-জরিমানার বিষয়ে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। সরকারি সূত্রগুলো বলছে, অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশকে গত বছর থেকে যে চাপ দিচ্ছে তা দ্রুতই আনুষ্ঠানিক রূপ পাচ্ছে। এরই মধ্যে গত জুলাইয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিও হয়েছে। মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, ইউরোপে প্রবেশকারী অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা এখন সবচেয়ে বেশি। একসময় লক্ষ্য মধ্যপ্রাচ্য হলেও এখন অঞ্চলটি থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বাংলাদেশি অভিবাসীরা। তারা এখন ইউরোপমুখী হয়ে পড়ছেন।

সর্বশেষ খবর