মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চালানোর দায়ে দেশটির সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেশটির শীর্ষ ছয় সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত এবং বিচার হওয়া দরকার। এ প্রতিবেদনের পর কী হতে পারে? এর পরবর্তী পদক্ষেপগুলো কী? এসব বিষয় নিয়ে লিখেছেন বিবিসির জনাথন হেড এবং ইমোজেন ফুকস।
জনাথন হেড লিখেন, জাতিসংঘের এ রিপোর্টটি সাধারণভাবে বেশ শক্ত। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ওপর যে গণহত্যা চালানো হয়েছে সেটির জোরালো প্রমাণ পাওয়া গেছে। গণহত্যার জন্য দায়ী মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিচার দেশটির ভিতরে করা সম্ভব নয়। সে জন্য আন্তর্জাতিকভাবে এর উদ্যোগ নিতে হবে। এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে। এ প্রতিবেদনের পর মিয়ানমারের জেনারেলদের বিচারের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ আরও জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারবে। রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ-সংক্রান্ত অতীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেসব রিপোর্ট দিয়েছে সেগুলোকে বরাবরই খারিজ করে দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। কিন্তু জাতিসংঘের এ তদন্ত এক বছরের বেশি সময় ধরে চালানো হয়েছে।
তিনজন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ জাতিসংঘে তদন্ত প্যানেল পরিচালনা করেছেন। সে জন্য এ প্রতিবেদন জাতিসংঘের ভিতরে অনেকের সমর্থন পাবে এবং মিয়ানমারের পক্ষে সেটি খারিজ করে দেওয়া কঠিন হবে। ইমোজেন ফুকস লিখেছেন, জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলেছেন, মিয়ানমারের এ ঘটনা বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানো উচিত। কিন্তু সেটি করতে হলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন লাগবে।এ ধরনের কোনো উদ্যোগের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন ভিন্নমত পোষণ করবে। তারা এটি চাইবে না। ফলে বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানো যাবে না।
তদন্তকারীরা পরামর্শ দিয়েছেন, রোয়ান্ডা এবং সাবেক যুগোশ্লাভিয়ার যুদ্ধাপরাধের বিচার যেভাবে হয়েছে, সে রকম স্বাধীন একটি অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
চাপ প্রয়োগে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে না : মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশটির ওপর চাপ প্রয়োগ করলে তা সমাধানে সহযোগিতা করবে না বলে জানিয়েছে চীন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ উল্লেখ করে প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদনের বিষয়ে গতকাল চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এ মন্তব্য করেন। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ অপরাধে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের বিচার হওয়া উচিত বলে জানায় জাতিসংঘ।
বিপন্ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনা হলেও চীনের অবস্থান মিয়ানমারের পক্ষে। রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাব আটকে দিয়েছিল তারা। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী চীন। মিয়ানমারে তাদের বিপুল বিনিয়োগও রয়েছে। এ প্রতিবেদন সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নারী মুখপাত্র হুয়া চুনিয়াং জানান, রাখাইনের ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও জাতিগত ইস্যু অনেক বেশি জটিল। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি একতরফা সমালোচনা বা চাপ প্রয়োগ সংকট সমাধানে সহযোগিতা করবে না।’ মুখপাত্র দাবি করেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সম্প্রতি আলোচনায় অগ্রগতি ঘটিয়েছে। দুই বছরের মধ্যে স্বেচ্ছায় পুনর্বাসন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে উভয় দেশ এ আলোচনা করছে। তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত সংলাপ ও পরামর্শের ভিত্তিতে সঠিকভাবে রাখাইন সংকট নিরসনে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের উদ্যোগে গঠনমূলক ভূমিকা রাখা।