পাবনায় কর্মরত একমাত্র নারী সাংবাদিক সুবর্ণা আক্তার নদীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে পাবনা সদর থানায় নদীর মা মর্জিনা খাতুন স্থানীয় ইড্রাল ফার্মাসিটিউক্যালের মালিক আবুল হোসেন ও তার ছেলে রাজীব হোসেনসহ তিনজনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। পুলিশ এ ঘটনায় সুবর্ণার সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে। সুবর্ণা হত্যায় সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিতসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দাম্পত্য বিরোধের কারণে সুবর্ণা আক্তার নদী নিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন। তার প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতা আরও তীব্র আকার ধারণ করে। বিষয়টি প্রশাসনকেও জানানো হয়েছিল দাবি পরিবারের। এদিকে গতকাল দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সাংবাদিকদের বিশাল মানববন্ধন থেকে হত্যাকারীদের গ্রেফতারে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। একই দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে।
জানা গেছে, সাংবাদিক সুবর্ণা আক্তার নদীর প্রথম স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হলে তিন বছর আগে শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের ছেলে রাজীবের সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে হয়। নদীর বড় বোন চম্পা খাতুন জানান, রাজীবের সঙ্গে দাম্পত্য কলহ তৈরি হলে সুবর্ণা পাবনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে গত বছরের ৩০ মে একটি যৌতুকের মামলা করেন। এ মামলায় সুবর্ণার সাবেক স্বামী রাজীব ও তার বাবা আবুল হোসেনসহ তিনজনকে আসামি করা হয়। এই মামলার মঙ্গলবার সুবর্ণা তার পক্ষে আদালতে সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেন। মামলায় ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কায় আসামিরা পরিকল্পিতভাবে সুবর্ণাকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন তিনি। সুবর্ণা নদী বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘আনন্দ টিভি’র পাবনা প্রতিনিধি এবং পাবনার অনলাইন নিউজ পোর্টাল দৈনিক জাগ্রত বাংলার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। তিনি জেলার আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর মেয়ে। তার ৬ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তিনি শহরের রাধানগর মজুমদারপাড়ার ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে কাজ শেষে ফেরার পথে বাসার সামনে এলে আগে থেকে ওতপেতে থাকা দুর্বৃত্তরা সুর্বণা নদীর পেটে, মাথা ও ঘাড়ে অতর্কিতভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এ সময় তার চিৎকারে বাসা থেকে মা ও মেয়ে এবং আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুবর্ণা আক্তার নদীকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে রাতেই পাবনা প্রেস ক্লাব ও পাবনা রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতারাসহ সাংবাদিকরা হাসপাতালে ছুটে যান। পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবায়দুল হক জানান, নিহত সুবর্ণা নদীর মা মোছা. মর্জিনা খাতুন বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫/৬ জনকে আসামি করে পাবনা সদর থানায় মামলা করেছেন। এ ঘটনায় নদীর সাবেক শ্বশুর শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, এই হত্যাকাণ্ড কোনো প্রকার সংবাদ সংক্রান্ত নয়। এটি তার ব্যক্তিগত। ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের ছেলে রাজীবের সঙ্গে প্রেম, বিয়ে ও সর্বশেষ ডিভোর্সকে কেন্দ্র করে ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি। তবে পুলিশের সব কটি ইউনিট এই বিষয়টি ছাড়াও বিভিন্ন দিক নিয়ে তদন্ত করছেন। ইতিমধ্যেই আমরা কিছু চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছি, সেগুলো তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে গতকাল দুপুরে পাবনা প্রেস ক্লাবের সামনে নারী সাংবাদিক সুবর্ণা আক্তার নদীকে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে সাংবাদিকরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। মানববন্ধন থেকে হত্যাকারীদের গ্রেফতারে পুলিশকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে।পাবনা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি আবদুল মতীনের সভাপতিত্বে মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি, সাধারণ সম্পাদক আখিনুর ইসলাম রেমন, পাবনা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী বাবলা, সংবাদপত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান শহিদ, দৈনিক বিবৃতি সম্পাদক ইয়াছিন আলী মৃধা রতন, এনটিভির এবিএম ফজলুর রহমান, সিনসা সম্পাদক মাহবুব আলম, পাবনা টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এ আসাদ প্রমুখ। বক্তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানান এবং মানববন্ধন থেকে হত্যাকারীদের গ্রেফতারে পুলিশকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন।