শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

আইনশৃঙ্খলা, বিআরটিএ দুর্নীতিতে শীর্ষে

টিআইবির রিপোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

আইনশৃঙ্খলা, বিআরটিএ দুর্নীতিতে শীর্ষে

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সেবা খাতের দুর্নীতি জরিপে শীর্ষে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। দুর্নীতির তালিকায় এর পরেই রয়েছে পাসপোর্ট, বিআরটিএ, বিচারিক সেবা, ভূমি সেবা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা পরিষদের উপদেষ্টা ড. সুমাইয়া খায়ের, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিভিন্ন সেবা খাতে দুর্নীতির শিকার খানার হারে সর্বোচ্চ দুর্নীতি হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাতে ৭২ দশমিক ৫ শতাংশ। পাসপোর্ট খাতে দুর্নীতির শিকার ৬৭ দশমিক ৩ শতাংশ, বিআরটিএতে ৬৫ দশমিক ৪ শতাংশ, বিচারিক সেবা খাতে ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ, ভূমি সেবা খাতে ৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ, শিক্ষা খাতে ৪২ দশমিক ৯ শতাংশ, স্বাস্থ্য খাতে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ।  সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ দিতে হয়েছে এ রকম খাতের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বিআরটিএ। এখানে সেবা নিতে গিয়ে ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ মানুষকে ঘুষ দিতে হয়েছে। এর পরে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ৬০ দশমিক ৭ শতাংশ, পাসপোর্ট ৫৯ দশমিক ৩ শতাংশ। ঘুষ দেওয়ার কারণ হিসেবে সেবা গ্রহীতারা জানিয়েছেন ঘুষ না দিলে সেবা না পাওয়া, হয়রানি বা জটিলতা এড়ানো, নির্ধারিত ফি জানা না থাকা, নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দ্রুত সেবা পাওয়া, অবৈধ সুবিধা বা সুযোগ প্রাপ্তির জন্য তারা ঘুষ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘ঘুষ-দুর্নীতি কমাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন পড়ে। ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যায় না এই কথাটা এখন সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা ঘুষ না নিয়ে সেবা দিচ্ছেন না তারা জবাবদিহিতার বাইরে থেকে যাচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের বছরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে এই খাতের স্বচ্ছতার কথাগুলো তুলে ধরতে দেখি আমরা। কিন্তু শুধু বললে হবে না যেটা ইশতেহারে দেওয়া হবে সেটা করে দেখাতে হবে।’ ধনীদের তুলনায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সেবা পেতে বেশি ঘুষ দিতে হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। কৃষি এবং মত্স্যচাষীরা ঘুষ দিয়েছেন ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ, জেলেরা ঘুষ দিয়েছেন ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ, পরিবহন শ্রমিকরা ঘুষ দিয়েছেন ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশ। জাতীয়ভাবে প্রাক্কলিত মোট ঘুষের পরিমাণ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ এবং জাতীয় বাজেটের (সংশোধিত) ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৭ সালের জাতীয়ভাবে প্রাক্কলিত মোট ঘুষের পরিমাণ ২০১৫ সালের তুলনায় ১ হাজার ৮৬৭ দশমিক ১ কোটি টাকা বেশি। অর্থাৎ ২০১৫ সালের তুলনায় ২১ দশমিক ২ শতাংশ বেশি ঘুষ দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৭ তে দুর্নীতি বেড়েছে গ্যাস, কৃষি এবং বিচারিক সেবা খাতে। দুর্নীতি কমেছে শিক্ষা, পাসপোর্ট এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে। তবে সেবা খাতে ঘুষের শিকার খানার সংখ্যা কমলেও বেড়েছে ঘুষ আদায়ের পরিমাণ। সার্বিক বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামন বলেন, ৮৯ শতাংশ মানুষ বলেছেন ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যায় না। ঘুষকে মেনে নেওয়ার মতো প্রবণতা তৈরি করা হচ্ছে। এভাবে ঘুষের লেনদেন অব্যাহত থাকা হতাশাব্যঞ্জক। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, বেতন বৃদ্ধির পরে দুর্নীতি কমবে।

 কিন্তু যারা দুর্নীতি করেন তাদের জন্য বেতন বৃদ্ধি কোনো উপাদান নয়। সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় সরকারি কর্মচারী আইনের খসড়া অনুমোদনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত অগ্রণযোগ্য, অসাংবিধানিক। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। দুদকের যে ক্ষমতা তাতে যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারে। জনপ্রতিনিধি এমনকি প্রধানমন্ত্রীকেও গ্রেফতার করার ক্ষমতা আছে, কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে অন্য নিয়ম হচ্ছে। দুদকের চেয়ারম্যানও এটিকে প্রকারান্তরে সমর্থন করেছেন। আমরা হতাশ হয়েছি।

সর্বশেষ খবর