শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
একান্ত সাক্ষাৎকারে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

অপচয় বন্ধে বাজেট ফিরিয়ে দিয়েছি

নিজামুল হক বিপুল

অপচয় বন্ধে বাজেট ফিরিয়ে দিয়েছি

ষাটের দশকে ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা, এক সময়ের প্রভাবশালী দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের মন্ত্রী হন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত সংসদ সদস্য। কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। এরশাদের গুড মিনিস্টার মঞ্জু। শেখ হাসিনার ১৯৯৬ এর শাসনামলে ছিলেন সফল যোগাযোগ মন্ত্রী। বর্তমান সরকারের আমলে প্রথমে ছিলেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। এখন পানিসম্পদ মন্ত্রী। এ মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়ে তিনি বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন। বিশেষ করে সরকারি অর্থের অপচয় রোধে পদক্ষেপ নিয়েছেন। ফিরিয়ে দিয়েছেন রিভাইজড বাজেটের টাকা। তার এই স্বল্প সময়ে নতুন কোনো প্রকল্প না নিলেও তিনি আগের গৃহীত প্রকল্প যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। আগামী নির্বাচন এবং ড. কামাল-বি. চৌধুরীর জোট নিয়েও কথা বলেন তিনি।   

প্রশ্ন : আপনার মন্ত্রণালয় তো ডেভেলপমেন্ট প্রোটেকশন দিয়ে থাকে। আপনি তো এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন মাসকয়েক হলো। দায়িত্ব নেওয়ার পর এই সময়ের মধ্যে কী ধরনের পরিবর্তন আনতে পেরেছেন বা এনেছেন।

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু : যখন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে ছিলাম তখন কাজ ছিল পরিবেশ নিয়ে। তখন আমাদের দেখলেই বলত ‘এই গাছ চোর।’ এখান থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। ‘ইমেজ অব দি মিনিস্ট্রি শুড বি আপডেট।’ 

এখানে যখন আমি এলাম তখন নতুন করে এখানে কোনো প্রজেক্ট নেওয়ার সুযোগ ছিল না। প্রজেক্ট ডেইলি নেওয়া যায়। কিন্তু সাধারণত যে প্রজেক্টগুলো অলরেডি নেওয়া হয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়নটা দেখা। আমি দেখলাম এখানে মেইটেন্যান্সের ব্যাপারে সবাই ইন্টারেস্টেড। রাজনীতিক বলেন, সুশীল সমাজ বলেন...। কোথায় খাল ভেঙে পড়ছে, বিল ভেঙে পড়ছে, কোথায় নদীর তীর ভেঙে পড়ছে... আমি বললাম, ভাই এগুলো আমার কাজ না। আমার কয়টা প্রজেক্ট আছে সেগুলো প্রোটেক্ট করা, আমার কতগুলো বেড়িবাঁধ আছে সেগুলো আমি রক্ষা করব। আমার কতগুলো পোল্ডার আছে এগুলো রক্ষা করা। এখন কোন স্কুল ভেঙে পড়ল সেখানে ইমার্জেন্সিতে আমার যাওয়ার কথা না। তাহলে তো সবাই আমার কাছে আসবে। এ ব্যাপারে যে আমাদের মধ্যে ঐকমত্য আছে তা না, কিন্তু আমি হ্যামারিং করতেছি। আমাদের মেইন চ্যালেঞ্জ কী ছিল—সুনামগঞ্জ। আল্লাহতায়ালার অশেষ রহমতে আমরা সাকসেসফুলি সুনামগঞ্জটাকে প্রোটেক্ট করেছি। অনেকে বলে আপনি সুনামগঞ্জে দাঁড়িয়ে যান।

এই যে আগাম বন্যা এটা প্রোটেক্ট করা সম্ভব নয়। কেননা আমাদের বন্যা, অতি বৃষ্টি এবং আসামের অতি বৃষ্টি এই দুইটা যদি একত্রিত হয়ে পড়ে তাহলে সেটা... ইমপসিবল। মানুষ কী চায়? মানুষ দেখতে চায় আমরা তাদের পাশে আছি কিনা। এইটা হলো আমাদের ভাবমূর্তি পরিবর্তনের মূল একটা চিন্তাভাবনা। অ্যাট দ্যা সেইম টাইম আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হবে। আমরা সব জায়গায় লাফাইয়া পড়তে পারি না। তাহলে কোনোটাই সঠিকভাবে হবে না। অতএব নয় মাসে মূল কাজ যেটা করতে পারলাম সেটা হচ্ছে— যে প্রজেক্টগুলো নেওয়া হয়েছে সেগুলো যেন ঠিকমতো চলে। কতগুলো কাজ আমি করতে দিচ্ছি না। আমি মনে করি, সেটা হলো ভাঙন দেখলেই তুমি লাফাইয়া পড়বে না। এসব বিষয়ে আমি সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমার মেইন চ্যালেঞ্জ হলো বাঁধ রক্ষা আর পোল্ডারগুলো রক্ষা করা। যত সংখ্যক পোল্ডার আমাদের আছে সেগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই হোক কিংবা প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের কারণেই হোক সেগুলোকে এখন আরও প্রশস্ত এবং উঁচু করা প্রয়োজন। সে জন্য আমাদের একটা প্রজেক্ট আছে অনেক অর্থ ব্যয়সাপেক্ষ। সেই কাগজপত্রগুলো আমরা তৈরি করছি। আর মন্ত্রণালয়ই হোক, অধিদফতরই হোক সবগুলোকে আমি বলি, নিয়মকানুনের মধ্যে থাকেন। রুলস অব বিজনেস আছে সেটি ফলো করেন।

কোয়েশ্চেন করলেও করা যায়। যেমন পানি উন্নয়ন বোর্ড, সেটি একটি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। এর উপরে একটা পরিষদ আছে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট। এখানে লেখা আছে ‘বোর্ড যাহা করিতে পারিবে পরিষদও তাহাই করিতে পারিবে।’ এগুলো হলো কনফ্লিক্টটেড। যারা এগুলো পাস করে তারা পড়ে দেখেনি। যদিও ১৫ জন সদস্য ছয়জনে কোরাম। তাহলে আমার এ অল্প দিনের মধ্যে যে প্রয়াস সেটা কী? মহাপরিচালককে কাজ করতে দেওয়া। এ প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে আমার সাহায্য করা। কিন্তু যত সহজ মনে হয়, বিষয় তত সহজ না। কেননা এখানে ক্ষমতার একটা দৃষ্টিভঙ্গি আছে। আমার সেখানে দৃষ্টিভঙ্গি হলো— ক্ষমতা আছে বলেই ক্ষমতাটা প্রয়োগ করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নাই। এটা দিয়ে রাখা হয়, হয়তোবা আমি মনে করি, যদি কখনো কোনো সময়, কোনো কারণে প্রয়োজন হয় তাহলে এটা অ্যাপ্লাই করা। যেমন— মন্ত্রণালয়ে সচিব মহোদয় প্রশাসন দেখবেন, ভালো। সে জন্য তাকে অনেক মিটিং করতে হয়, মিটিং করেন। কিন্তু সবাইকে মনে রাখতে হবে, কো-অর্ডিনেশন করার নামে যদি এত বেশি সভা করি তাহলে পরে যে অধিদফতরটা আছে, বোর্ডটা আছে ওরা কাজ করবে কখন? প্রশাসনটা একটা সিম্ফনির মতো। এই সিম্ফনিতে সবারই একটা ভূমিকা আছে। যদি বিচ্ছিন্নভাবে এই ভূমিকাটা ব্যবহার করে তাহলে ওখান থেকে সবাই উঠে যাবে। আর যদি সম্মিলিতভাবে সুসংগঠিতভাবে এটা ব্যবহার করে তাহলে শ্রুতিমধুর হবে, লোকে শুনবে। অতএব প্রথম কথাটা হলো, এই বোর্ডকে শক্তিশালী করতে হবে। আমাদের প্রশাসনে অনেক কন্ট্রাডিকশন আছে, কনফ্লিক্ট আছে আমি জানি, এগুলো চলে আসছে, চলবে। সে জন্য এই অল্প সময়ের মধ্যে আমি যেটা করছি তা হলো যেন সমন্বয়ভাবে কাজ করতে পারি।

এখন আসুন মন্ত্রীর ক্ষমতার বিষয়ে। আপনি যদি পড়েন তাহলে আপনার শরীর শিহরিত হয়ে যাবে। মন্ত্রীকে আপৎকালীন ক্ষমতা দিয়ে রাখা হয়েছে, সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। কেননা যদি এটা সার্বক্ষণিকের জন্য করা হতো তাহলে পরে আবার সচিবের যে দায়িত্ব আছে সেটা তিনি কীভাবে পালন করবেন! যাই হোক এগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়, যাতে কিনা সবাই উপলব্ধি করেন, সবাই ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘অব দি ওয়েলফেয়ার অব দি মিনিস্ট্রি অ্যান্ড দি বোর্ড’ তাদের মধ্যে যদি একটা সমন্বয় না থাকে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ না থাকে তাহলে পরে এটা অচল হয়ে যাবে। কিন্তু সরকারপ্রধান তো চাইবেন না কোনো মন্ত্রণালয় স্থবির হয়ে পড়ুক এবং তার কাছে যত শক্তি আছে, ক্ষমতা আছে সব তিনি তখন ব্যবহার করবেন। তখন মন্ত্রী-মিনিস্টাররা বুঝবেন তাদের যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল সেটা কত ভঙ্গুর।

আমি অল্প সময়ে যেটা করতে চেয়েছি সেটা হচ্ছে নিয়মকানুন, শৃঙ্খলার মধ্যে থাকুন। একে অন্যের প্রতি সম্মানসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি রাখুন। অ্যান্ড অব দ্য ডে এখানে এটাই আমার অ্যাচিভমেন্ট বলে আমি মনে করি।

যাই হোক এই অল্প দিনের ভিতরে সফলতা-ব্যর্থতা পরিমাপ করা যথেষ্ট নয়। পাঁচ বছর থাকলেও পরে মূল্যায়ন করা গেলেও যেতে পারে। পাঁচ মাসে ছয় মাসে, নয় মাসে এসে এটা যে ভেঙে পড়ে নাই, চতুর্দিকে মারমার কাটকাট সব খাইয়া ফালাইল— এই রব উঠে নাই, এটার জন্য মনে হয় আমাদের মন্ত্রণালয়কে আমাকে ধন্যবাদ দেওয়া প্রয়োজন। এটাই বড় প্রাপ্তি।

প্রশ্ন : বর্তমান সরকারের একটা অগ্রাধিকার হচ্ছে নদী খনন, ড্রেজিং—

আনোয়ার হোসেন : আমরা নদী খনন করছি কারা কারা? পানি উন্নয়ন, শিপিং মিনিস্ট্রি ইভেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে কতটা গুরুত্ব দেন ড্রেজিংয়ের উপরে...। ৫ ট্রিলিয়ন স্টোনস অ্যান্ড সিল্ক কাম ফর আদার কান্ট্রিজ। এটা কি সহজ একটা দায়িত্ব? আমরা বর্তমানে সেন্ট রপ্তানি করার চিন্তাভাবনা করছি। যারা নদী ড্রেজিং করতেছে (প্রাইভেট কোম্পানি) তারা এক দিন আমার সঙ্গে দেখা করতে এসে বলল স্যার, মনে হয় না আমরা এ কাজটা শেষ করতে পারব। কারণ আমরা আজকে যদি ৫০ ফুট খনন করি, পরদিন তো ওইখান থেকে আমরা সামনে যাব, কিন্তু পেছন ফিরে দেখি ওইটা অলরেডি ফিলাপ হয়ে গেছে। এটা একটা প্রায় অসম্ভব কাজ। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে অত্যন্ত দৃঢ়চেতা, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অতএব আমরা ড্রেজিং করে যাচ্ছি নদী-নালা, খাল-বিল, মেনই রিভার। শিপিং মিনিস্ট্রি করতেছে যেখান দিয়ে তাদের জাহাজ চলে, ফেরি চলে। কিন্তু আমাদের তো পুরো নদীটাই খনন করতে হচ্ছে। সেখানে সরকারের একটা পরিকল্পনা থাকে, স্টাডি থাকে। তো ওই লাইনে চলতে হবে তো। আমাদের সমস্যা আছে, সীমাবদ্ধতা আছে, তাই বলে সবখানে আমি লাফিয়ে পড়ব সেটা আমার দ্বারা হবে না। যারা আমাদের চাকরি দেন তারা এটা খুব ভালোভাবে জেনেশুনে দেন। আমি দীর্ঘ ১৮ বছর মন্ত্রী। এমতাবস্থায় নিয়ম-কানুনের বাইরে কোনো কাজ করব এটা আমার সিস্টেমের ভিতরে নেই। অতএব এই অল্প দিনের ভিতরে নতুন কোনো প্রজেক্টের চেয়ে আমার পূর্বে যারা ছিলেন তারা যে প্রজেক্ট নিয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গৃহীত হয়েছে সেগুলো কোনটা কোন অবস্থায় আছে দেখেন।

আমাদের একটা প্রজেক্ট আছে কেউ ওটার নামও জানত না। সীমান্ত নদী সংরক্ষণ প্রকল্প। এটা কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এবং ভারত সরকার যৌথভাবে নিয়েছে। আমি যদি পেপারটা না পড়তাম তাহলে এটা ওটিএম হয়ে যেত। ওখানে সিদ্ধান্ত ছিল এটা ... অতএব এটা ডিপিএভুক্ত হয়েছে। আমাদের এই মন্ত্রণালয়ে অল্প দিনে আমি যেটা শিখেছি বা দেখেছি তা হলো আমাদের এখানে রিভাইজড বাজেট হয় না, সব পানি সম্পদমন্ত্রী রিভাইজড বাজেটে টাকা চেয়েছে। আমি একমাত্র মন্ত্রী রিভাইজড বাজেটে টাকা চাইনি। যেখানে প্রজেক্টের টাকাই তুমি খরচ করতে পারছ না, সেখানে মেইনটেনেন্সে এসে টাকা চায়। প্রজেক্টের টাকা চায় না, সেটা তো দিয়ে দিচ্ছে। মেইনটেনেন্সের টাকা চায়, কারণ সেখানে হলো হালুয়া রুটি।

আমি আমার নিয়োগকর্তার কাছে অনুমতি নিয়েছি যে, আমার পোল্ডার ছাড়া আমি অন্য জায়গায় যাব না। রাস্তা ভাঙলে হাইওয়ে দেখবে, এলজিইডি দেখবে। দোয়ারিকা সেতু ভেঙে যাচ্ছে আমি কেন সেখানে যাব? সেজন্য এই মন্ত্রণালয়ে কোনো চাপ নাই, ভিড় নাই...।

প্রশ্ন : আপনি বলছিলেন পোল্ডারের কথা। পোল্ডার এবং বাঁধ উঁচু করার কথা...।

আনোয়ার হোসেন : এটা নিয়ে আমরা নেদারল্যান্ডসের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছি। আমরাও আছি সঙ্গে।  এটা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। একটা স্টাডি হবে যৌথভাবে। আরও মজার কথা। এই স্টাডির টাকা নেদারল্যান্ডসসহ চার-পাঁচটি দেশ মিলে দেবে। এটার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন।

প্রশ্ন : হাওর নিয়ে তো আপনার মন্ত্রণালয়ের বিরাট পরিকল্পনা আছে। আপনি আসার আগেই তো এসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেগুলোর বর্তমান অবস্থা কী?

আনোয়ার হোসেন : হ্যাঁ, বিরাট পরিকল্পনা আছে। এগুলো আন্ডার প্রসেস। আমরা সুনামগঞ্জের হাওরের চারপাশে যেসব নদী, খাল আছে সেগুলো পুনঃখনন করছি। হাওরের প্রজেক্টটা এখন পর্যন্ত ঠিক সেভাবে পাস হয় নাই। অনেক অর্থের পয়সা...।

প্রশ্ন : পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি বিশাল প্রতিষ্ঠান। তাদের দাবি সেখানে লোকবল সংকট রয়েছে...।

আনোয়ার হোসেন : না লোকবল সংকট নেই। কত হাজার আছে সেটা তারা জানে না। ১০ হাজারের রিকুইজিশন দিয়েছে তারা। আমি বলেছি সেখানে বসার জায়গা আছে কতটুকু, কাজটা দেবেন কী? আমাকে প্রায় বলা হয় কম্পিউটার নাই, সার্ভে ইকুইপমেন্ট নাই ইত্যাদি। কোনো প্রজেক্ট আমরা নেই না সেটা দুই কোটি, পাঁচ কোটি বা ১০ কোটি টাকারই হোক, সেখানে এগুলো থাকে, ইনক্লুডিং ট্রান্সপোর্ট। সেটা সাইকেল হোক বা মোটরসাইকেল হোক বা গাড়িই হোক। আমি বলি যে, প্রতিটা প্রজেক্টেই যদি আমি কম্পিউটার কিনি তাহলে কয় হাজার কম্পিউটার আমার আছে। পর্যাপ্ত জনবল থাকার পরও তারা সুপারিশ করতেছে এবং প্রশাসন অর্থ সব মিলিয়ে যেন এটা বাস্তবায়ন হয়...। আমি অবশ্য ফাইলটা আটকে রাখব না। তবে কতগুলো প্রশ্ন তুলে রেখে যাব। রিফর্মসও হবে, শুদ্ধাচারও হবে, সঙ্গে সঙ্গে কাজও হবে। কারণ দিনের শেষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মূল্যায়ন করবেন কোন মন্ত্রণালয়ের পারফরম্যান্স কত। এখানে যাতে আমি তলে না পড়ে থাকি সেজন্য...।

 

যখন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে ছিলাম তখন সুন্দরবন রক্ষার জন্য একটা অ্যালোকেশন নিলাম। কারণ গার্ড-টার্ডদের অবস্থান সেখানে খারাপ। থাকার জায়গার অভাব, নিরাপত্তার অভাব। সেই প্রজেক্টে আমি দেখলাম, পিডি তো একজন থাকবেই। ধরেন আমি নিয়ে এলাম ৩০ কোটি টাকা। দেখলাম ১৫ কোটি টাকাই বাড়ির আসবাবপত্র ইত্যাদিতে ব্যয় হয়ে গেছে।

এই মন্ত্রণালয়ে সেই যে ব্রিটিশ আমলে দুইটা জাহাজ ছিল আর কেনা হয়নি। আমরা এখন দুই জাহাজ নিচ্ছি, স্পিডবোট নিচ্ছি।  

প্রশ্ন : আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশ না নেয় তাহলে নির্বাচন কি প্রশ্নবিদ্ধ হবে- একটা দলের প্রধান হিসেবে আপনি কী মনে করেন?

আনোয়ার হোসেন : কেন তারা আসবে না? আপনি একটা বিষয় খেয়াল করেছেন, আপনার সঙ্গে কথা বলার সময় দুইটা কাগজ দেখিয়েছি। আমি ইত্তেফাক যেভাবে চালাই সেইভাবে তো মন্ত্রণালয় চালাতে পারব না। এমতাবস্থায় সংবিধানে যেটা নাই সেটা আপনারা চাইবেন কেন? সেটা যদি চাইতেই হয় যে কাউকে তাহলে তাকে বিদ্রোহী হতে হবে, বিপ্লবী হতে হবে। আমি বলেছি আমি বিদ্রোহীও নই, বিপ্লবীও নই। প্রশ্ন যাদের বিদ্ধ করার তারা করুক। বিদ্ধ যারা করার তারা করবেন। এক সময় আমরাও বিদ্ধ করেছিলাম। আল্লাহতায়ালা আমাদের সঙ্গে ছিলেন, দাবি করব জনগণও আমাদের সঙ্গে ছিলেন, তাই আমরা বাধ্য করেছিলাম দাবি মেনে নিতে। কিন্তু যে শক্তি আপনার নেই সেই শক্তি আপনি দেখাতে গেলে কী হবে সেটা আমি অনুমানও করতে চাই না।

প্রশ্ন : ড. কামাল হোসেন ও ডা. বদরুদ্দোজার নেতৃত্বে নতুন ফ্রন্ট...।

আনোয়ার হোসেন : আমি এখানে একটা কবিতা বলি, যারা কাপুরুষ তারা কাঁপে, আর যারা বীর তারা লড়ে যায়। তারা ঐক্য করুক। তাদের কোনো শক্তি নাই, তাদের ক্ষমতা নাই- এসব ঔদ্ধত্যপূর্ণ শব্দ আমি ব্যবহার করব না। আর রাজনীতি সম্পর্কে নির্বাচন সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত একটা চিন্তাভাবনা আছে। ডেমোক্রেসি শব্দ নিয়ে, ডেমোক্রেসির কোন ডেফিনেশন আমাদের জানা নাই। কবে কখন কী অবস্থায় লিংকন সাহেব বলেছিলেন, ‘অব দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল।’ আমি বলি গণতন্ত্র হলো স্টেট অব মাইন্ড। আমি আপনাকে সম্মান করি কি-না। আপনার অপিনিয়নটাকে আমি সম্মান করি কি-না। যারা ক্ষমতায় এসেছেন তারা নির্বাচনের মাধ্যমেই এসেছেন। পরবর্তীকালে আপনি বিদ্ধ করতেছেন, রক্তাক্ত করছেন। তার প্রথম আসাটা কি— একটা নির্বাচনের মাধ্যমেই তিনি এসেছেন। তাহলে আপনি আমাকে পছন্দ করেন না ভালো কথা, আপনি কিছু একটা চান সেটাও ভালো কথা। কিন্তু আপনি আমার সঙ্গে একটু সমীহ, সম্মানের সঙ্গে কথা বলেন। আমি অনির্বাচিত লোক নই। আপনি একটা নির্বাচনের কথা বলবেন কেন? আমি চার-পাঁচটা নির্বাচনে জয়ী হয়ে এসেছি, প্রত্যেকটা নির্বাচন কি প্রশ্নবিদ্ধ ছিল? বর্তমান সরকারও তো তাই, সরকারপ্রধানও তো তাই। এর আগেও তিনি নির্বাচিত হয়ে এসেছেন, তারও আগে তিনি নির্বাচিত হয়ে এসেছেন, সেগুলো তো প্রশ্নবিদ্ধ ছিল না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর