শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিশ্ব বিস্মিত মিয়ানমারের মিথ্যাচারে

প্রতিদিন ডেস্ক

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সম্প্রতি একটি বই প্রকাশ করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। বইয়ে থাকা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছবি ও তথ্য ভুয়া। শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এই মিথ্যাচার ধরা পড়েছে।

‘মিয়ানমারের রাজনীতি ও সেনাবাহিনী : পর্ব ১’ (মিয়ানমার পলিটিকস অ্যান্ড দ্য টাটমাডো : পার্ট ১) শিরোনামের বইটি গত জুলাই মাসে প্রকাশিত হয়। ১১৭ পৃষ্ঠার বইটি প্রকাশ করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জনসংযোগ ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ বিভাগ।

বইয়ে থাকা সাদাকালো একটি ছবিতে দেখা যায়, নদীতে ভাসমান দুটি লাশের পাশে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে। দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির হাতে কৃষিকাজে ব্যবহূত হাতিয়ার। ছবির বিবরণে (ক্যাপশন) লেখা হয়েছে, ‘স্থানীয় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার লোকজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে বাঙালিরা’।

রুয়ান্ডার শরণার্থীদের এই ছবিটি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। গত শতকের চল্লিশের দশকে মিয়ানমারে জাতিগত দাঙ্গার বিবরণ বইটির যে অংশে রয়েছে, সেখানে এই ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে। ছবির বরাত দিয়ে বইয়ে বলা হয়েছে, বৌদ্ধধর্মাবলম্বী মানুষজনকে হত্যা করেছে রোহিঙ্গারা। বইয়ে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মিয়ানমার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক বলে গণ্য করে না। রোহিঙ্গাদের অবৈধ অভিবাসী মনে করে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ।

ছবিটি যাচাই-বাছাই করে রয়টার্স। যাচাইয়ের পর রয়টার্স দেখতে পায়, ছবিটি আসলে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে তোলা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞের একটি ছবি। রয়টার্স দেখতে পেয়েছে, বইয়ে ব্যবহূত তিনটি ছবি ভুয়া। তিনটির মধ্যে দুটি ছবি বাংলাদেশ ও তানজানিয়ায় তোলা। আরেকটি ছবিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা সমুদ্রপথে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে প্রবেশ করছে। কিন্তু বাস্তবে অভিবাসীরা মিয়ানমার ছাড়ছিল।

সমুদ্রপথে থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় আটক ট্রলারবোঝাই রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অভিবাসীদের এই ছবিটি মিয়ানমারে বাঙালিদের অনুপ্রবেশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। নতুন বইটিতে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। সহিংসতার জন্য ‘বাঙালি’ সন্ত্রাসীদের দোষারোপ করা হয়েছে। বইয়ে রোহিঙ্গাদের ইতিহাস চিহ্নিত করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। ভুয়া ছবির বিষয়ে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দেশটির তথ্য মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব উ মাইও মিন্ত মং এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তার ভাষ্য, তিনি বইটি পড়েননি।

সর্বশেষ খবর