রবিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ডুবতে বসেছে সোনালী ব্যাংক ইউকে

♦ সিইও এম সারোয়ার হোসেনের স্বেচ্ছাচারিতা
♦ ৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ

আ স ম মাসুম, যুক্তরাজ্য

ডুবতে বসেছে সোনালী ব্যাংক ইউকে

সোনালী ব্যাংক ইউকের সিইও এম সারোয়ার হোসেনের স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যবস্থাপনায় ডুবতে বসেছে একসময় ব্রিটেনপ্রবাসী বাংলাদেশিদের গর্বের প্রতীক সোনালী ব্যাংক ইউকে। অথচ মোটা অঙ্কের বেতন নেওয়া সারোয়ার হোসেন বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলার একজন আসামি! ২০১৬ সাল থেকে বন্ধ থাকা জাগরণী টেক্সটাইল মিলের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে ৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একটি মামলা করা হয়। সে মামলায় সোনালী ব্যাংকের নয় কর্মকর্তা বাংলাদেশের আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। এম সারোয়ার হোসেন এ মামলার কোনো হাজিরাতেই উপস্থিত হননি। অথচ তিনি নিয়মিত আমেরিকায় ভ্রমণ করেন। পরিবারসহ নিয়েছেন আমেরিকার নাগরিকত্ব। ইতোমধ্যেই পরিবারকে পাঠিয়ে দিয়েছেন আমেরিকায়। এম সারোয়ার হোসেন সোনালী ব্যাংক ইউকের দায়িত্ব নেন ২০১৫ সালে। এর পরই যেন সোনালী ব্যাংকের দুর্দিন শুরু হয়। ’৭০ দশকের মাঝামাঝি সরকারি এ ব্যাংকটি ব্রিটেনে তাদের কার্যক্রম শুরু করার পর একে একে ব্রিটেনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিভিন্ন শহরে মোট পাঁচটি শাখা খোলা হয়। সেসব শাখায় রেমিট্যান্স ব্যবসা থেকে শুরু করে ফরেন ট্রেড, সেভিংস, কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, বন্ড ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদি কার্যক্রম  ছিল। ব্রিটেনের মূলধারার ব্যাংকের মতোই ছিল সোনালী ব্যাংক ইউকের কার্যক্রম। ১৯৯৯ সালে ব্রিটেনের ব্যাংকিংয়ে কড়াকড়ি আরোপিত হলে অব্যবস্থাপনার দায়ে প্রথমবারের মতো ব্যাংকিং সেবা বন্ধ করে সোনালী ব্যাংককে ডাউনগ্রেড করে শুধু রেমিট্যান্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়। একসময় পাঁচটি শাখা থাকলেও বর্তমানে শুধু লন্ডন ও বার্মিংহামে দুটি শাখা রয়েছে সোনালীর।

সারোয়ার হোসেনের দায়িত্বের তিন বছর মেয়াদ শেষ হলেও তিনি এখনো রয়েছেন বহাল তবিয়তে। একসময় ৮৬ হাজার গ্রাহকসমৃদ্ধ সোনালী ব্যাংকের রিটেইল ব্যাংকিং বন্ধ করে দেয় যুক্তরাজ্যে ফাইন্যানশিয়াল অথিরিটি (এফএসএ)। এটি সারোয়োর হোসেনের দায়িত্ব নেওয়ার দুই বছরের মাথায়। সারোয়ার হোসেনের অব্যবস্থাপনায় শুধু যে ব্যাংকিং বন্ধ হয়েছে তা নয়, ধীরে ধীরে ধস নামে রেমিট্যান্স ব্যবসায়। একসময় প্রতিদিন ৫০ থেকে ৭০ হাজার পাউন্ড রেমিট্যান্স গেলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে মাত্র ১৫ হাজার পাউন্ডের কাছাকাছি। আর এই রেমিট্যান্স ব্যবসায় ধস নামার পেছনের মূল কারণ দীর্ঘদিন কাজ করা দক্ষ বাঙালি কর্মীদের ছাঁটাই। এতে কমিউনিটি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ব্যাংকটি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ছাঁটাই করা হয় ১৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। আবার একই শূন্য পদগুলোয় বাইরে থেকে বিদেশি ও ফ্রিল্যান্সার নিয়োগ দিয়ে বেশি বেতনে কাজ করানো হচ্ছে। সেই ছাঁটাইয়ের পর নয় মাস যেতে না যেতেই মাত্র ২৫ জন কর্মী থেকে নয়জনকে ইতোমধ্যেই নোটিস দেওয়া হয়েছে চাকরি ছাড়ার জন্য। যেখানে রিটেইল ব্যাংকিং নেই, রেমিট্যান্স নেমে আসছে শূন্যের কোঠায় সেখানে বিশাল অঙ্কের টাকা দিয়ে পরামর্শক, কমপ্লায়েন্স অফিসার নিয়োগের কী দরকার তাও বুঝতে পারছেন না কেউ। সোনালী ব্যাংকের অব্যবস্থাপনা, গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ, মানি লন্ডারিং ইত্যাদি নিয়ে বেশ কয়েকবার নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অ্যান্টি মানি লন্ডারিং ব্যবস্থা না থাকায় ২০১৬ সালের অক্টোবরে যুক্তরাজ্যে ব্যাংকিং অথরিটি এফএসএ সোনালী ব্যাংক ইউকেকে ৩২ লাখ ৫০ হাজার ৬০০ পাউন্ড জরিমানা করে; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকার সমান। এ ছাড়া একই সময় এফএসএ রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য নতুন কাস্টমারের নিবন্ধন বন্ধ করে দেয় ১৬৮ দিনের জন্য।

সোনালী ব্যাংকের কর্মী ছাঁটাই, ব্যাংকের বর্তমান সার্বিক অবস্থা, দুদকের মামলায় হাজিরা না দেওয়াসহ নানা বিষয়ে জানার জন্য সোনালী ব্যাংক ইউকের ব্রিকলেন শাখায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সারোয়ার হোসেনকে পাওয়া যায়নি। তাকে ইমেইল করা হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। এদিকে সোনালী ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তাসহ কমিউনিটির বিশিষ্টজনেরা প্রশ্ন তুলেছেন, অর্থ আত্মসাতের জন্য দুদকের মামলার পলাতক আসামি কীভাবে সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকেন?

সর্বশেষ খবর