রবিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্বাচন নাও হতে পারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন নাও হতে পারে

ড. কামাল হোসেন

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, দেশের পরিস্থিতি এমন হচ্ছে যে, নির্বাচন নাও হতে পারে। কিন্তু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। কোনো সরকার মনে করে না তারা ভুল করেছে, কুশাসন করেছে। তারা মনে করে তারা সুশাসন করে দেশকে বেহেশত বানিয়েছে। যারা এত ভাল কাজ করেছে তারা ভোটকে ভয় পায় কেন? টাকা দিয়ে, ভয় দেখিয়ে তিন নম্বরি কায়দায় ভোট নেওয়ার চেষ্টা করে কেন? কারণ তারা নিজেরাই সেটা বিশ্বাস করে না। তাই আমাদের দায়িত্ব হলো যে ভোটের কথা বলা হচ্ছে সে ভোটটা যেন হয়। অনেকে মনে করেন তারা ভোট দিয়ে নিজের মতো করেই একটা নির্বাচন করে ফেলবে। কিন্তু এক পর্যায়ে এটা না-ও হতে পারে। কারণ ভোট না করলে সংকট আরও গুরুতর হবে। ড. কামাল গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন। ‘গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার : প্রেক্ষিত ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। বক্তৃতা করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন। ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, সব স্বৈরাচারী সরকারের পরিণতি আমরা দেখেছি। যারা দুই নম্বরি, তিন নম্বরি করেছে, ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে তাদের অবস্থান হয়েছে। ইতিহাস প্রমাণ করে, বাংলাদেশের জনগণ কখনো পরাজিত হয়নি। বড় বড় স্বৈরাচার আমরা দেখেছি, কেউ তাদের চিরস্থায়ী হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ড. কামাল বলেন, সরকারের দাবি ও কথা যদি ঠিক হয় তাহলে অবশ্যই সরকারকে ভোট দেবেন। কিন্তু দাবি ঠিক না হলে আপনার ভোট আপনি দেবেন। যারা জনগণকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে, সুশাসনের বদলে কুশাসন করেছে, তারা যেন আর তা না করতে পারে, সেজন্য ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। তিনি বলেন, মানুষ যদি সঠিকভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়, যদি তারা নিজেদের ভোট নিজেরা দিতে পারে তাহলে আমি মনে করি বাংলার মানুষ ভুল করবে না। আমাদের প্রধান কাজ হলো ভোট করানো।

১০ বছর হয়ে গেছে, এবার চলে যাও : ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, কত বড় বড় স্বৈরাচার ছিল পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান, ১০ বছরের বেশি টেকেনি। দ্বিতীয় স্বৈরাচার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কত বছর টিকেছে? নয় বছর টিকেছে। বর্তমানে স্বেচ্ছাচারী সরকার আছে, তাদের মেয়াদও ১০ বছর। এটা খুব সিগনিফিকেন্ট। অনেক সহ্য করেছি, ১০ বছর হয়ে গেছে, এবার চলে যাও। যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বি চৌধুরী আরও বলেন, আমরা একটা কথা প্রায়ই শুনি, বাংলাদেশে নাকি ষড়যন্ত্রের রাজনীতি হচ্ছে। বিদেশিদের সঙ্গে নাকি ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে অন্যরকমের সরকার, সংবিধানের বাইরের সরকারের জন্য। আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, আমরা কোনো ষড়যন্ত্রের অংশীদার নই। অসাংবিধানিক কোনো সরকারকে আমরা স্বীকৃতি দেব না। অগণতান্ত্রিক সরকারকে আমরা মেনে নেব না। তিনি আরও বলেন, এক স্বেচ্ছাচারীর পরিবর্তে অন্য এক স্বেচ্ছাচারীকে আমরা আনতে দেব না। যারাই গণতন্ত্রের পক্ষে, আমরা তাদের সঙ্গে থাকব। শুধু যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল তাদের সঙ্গে আমরা যাব না, এটা পরিষ্কার কথা। আমরা চাই এ সরকার নির্বাচন সময়ের জন্য একটি নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা করবে। আমরা নির্বাচন বর্জনের কথা বলি না, সরকারকে বাধ্য করব নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা করতে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের ইভিএমে দুই ধরনের ষড়যন্ত্র আছে। একটি হলো ভোট চুরির ষড়যন্ত্র। অন্যটি হলো মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নিয়ে রাত-দিন খালি ইভিএম নিয়ে পড়ে থাকা, আর ভুলে যাও ছেলে-মেয়ে ও বাচ্চাদের ওপর যেসব জুলুম হয়েছে। সাবেক এই রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো নির্বাচন, নির্বাচনের ভিত্তি হলো একটা সঠিক, নিরপেক্ষ নির্বাচন। তাই নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ হতে হবে। সেইসঙ্গে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করতে হবে। সামরিক বাহিনীকে নির্বাচনের এক মাস আগেই ব্যবহার করতে হবে এবং তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিতে হবে।

‘আর কোনো অনুমোদন নেব না’ : সভাপতির বক্তব্যে আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘যুক্তফ্রন্ট-গণফোরাম মিলে যে ঐক্য হয়েছে আমরা একে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে নিয়ে যাব। স্বৈরাচার সরকার ও স্বাধীনতাবিরোধীরা ছাড়া বাংলাদেশের সবাইকে আহ্বান জানাব আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য। মাহমুদুর রহমান মান্নার বাসায় ডিবির তল্লাশির নিন্দা করে তিনি বলেন, সরকারবিরোধী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে যারা আছেন, আগামীতে যদি তাদের কারও বাসায় হামলা করা হয়, পরিণতি ভালো হবে না, ভয়াবহ হবে। আমরা জবাব দেব। তিনি বলেন, সভা-সমাবেশের জন্য আর কোনো অনুমোদন নেব না। সংবিধানের কোথাও লেখা নেই মিছিল-মিটিংয়ের জন্য অনুমোদন নিতে হবে। মিছিল হবে, মিটিং হবে, অনুমোদন না দিলে যেখানে বাধা দেওয়া হবে সেখানে বসে পড়ব। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নির্বাচন কমিশন ইভিএম আনার জন্য আগেই এলসি খুলে বসে আছে। একনেকের অনুমোদন নেই, কোনো মন্ত্রিসভার বৈঠক নেই; কী করে এলসি খুললেন? কীভাবে অনুমোদন দিলেন? এটা ফোরটোয়েন্টির ব্যাপার। এরা সব লুটেরা, লাখ-লাখ, কোটি-কোটি টাকা লুট করেছে। এটা একটা লুটের প্রকল্প। একই সঙ্গে টাকাও লুট করবে, ভোটও লুট করবে। দেশের সব মানুষ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এমন একটা লোক দেখান যে নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর