সোমবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ঢাকায় আন্তর্জাতিক কনফারেন্স

রোহিঙ্গা নিয়ে বিশ্বকে সরব হতে হবে

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিশ্বকে সরব হওয়ার আহ্বানের মাধ্যমে শেষ হয়েছে দুই দিনব্যাপী রোহিঙ্গা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন।

গতকাল বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে প্রবন্ধ উপস্থাপন শেষে এই সম্মেলনের সমাপ্তি হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগ ‘রোহিঙ্গা : পলিটিক্স, এথনিক ক্লিনজিং অ্যান্ড আনসার্টেইনটি’ বিষয়ক এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে। আয়োজনের মিডিয়া পার্টনার ছিল বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সম্মেলনে ২১টি সেশনে মোট ৭২টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে শেষ দিনে ৯টি সেশনে ভারত ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষক ও গবেষকদের ৩৭টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।

গতকাল ‘দ্য রোহিঙ্গা ক্রাইসিস : আনসার্টেইনটিস, চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড সলুশানস’ শিরোনামে এক প্যানেল আলোচনার মাধ্যমে সম্মেলন শেষ হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারাকাত, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ পাপা কিসমা সিলা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমান আলোচনার পরিচালনা করেন।

বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গা জাতিগত নিধনকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এখন পর্যন্ত ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। অথচ রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ বলার মতো সব কারণ রয়েছে। ফলে রোহিঙ্গা নিধনকে আন্তর্জাতিকভাবে ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করার দাবি জানানো হয়েছে।

সলিমুল্লাহ খান বলেন, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ভূমি চায় তাদের নয়। তারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি মুসলমান হিসেবে আখ্যায়িত করতে চায়। এজন্য তারা রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) নিধনকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। শুধু হত্যা করলেই সেটাকে গণহত্যা বলে এমন নয়। যদি কোনো জনগোষ্ঠীকে উত্খাত করার জন্য ষড়যন্ত্র করা হয় সেটাও গণহত্যার পর্যায়ে পড়ে। গণহত্যা চালিয়ে মিয়ানমারের বার্মিজ মৌলবাদী গোষ্ঠী সেটাকে বৈধতা দিতে অপ্রপচার চালিয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে তাদের এক ধরনের রাজনৈতিক অর্থনীতি রয়েছে। এ সমস্যার সমাধান নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন।

আবুল বারাকাত বলেন, অনেক বছর ধরে রোহিঙ্গা সমস্যা চলছে। তবে বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা সংকট আমাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতা। রোহিঙ্গা সংকট সৃষ্টিতে রয়েছে আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি। মিয়ানমার বিশ্বে অন্যতম ধনী দেশ। দেশটি খনিজসম্পদে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই সম্পদগুলো রয়েছে দেশটির উপজাতি প্রধান অঞ্চলে। রোহিঙ্গা সংকটের পেছনে এটাও একটি বড় কারণ। এই সংকট নিরসনে কারণগুলোর দিকে লক্ষ্য রেখে ব্যবস্থা নিতে হবে।

পাপা কিসমা সিলা বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য আমরা কাজ করছি। আমরা আনন্দিত, কারণ এই অমানবিক অবস্থার প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পেরেছি। আমরা দুই দেশের সরকার, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলছি যাতে দ্রুতই রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে পারে। তবে আমরা এখনই এটাকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করছি না। কারণ আমরা এটাকে পর্যবেক্ষণ করছি। তবে খুব শিগগিরই আমরা এ সম্বন্ধে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারব।

সর্বশেষ খবর