মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ট্রেড ইউনিয়নে লাগবে ২০% শ্রমিকের সমর্থন

১৪ বছরের নিচে শিশুশ্রম নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে সংশ্লিষ্ট কারখানার প্রয়োজনীয় শ্রমিক সদস্যের সমর্থনের হার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব রেখে বাংলাদেশ শ্রম        (সংশোধন) আইন, ২০১৮-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ১৪ বছরের নিচে শিশুশ্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে সংশোধিত খসড়ায়। গতকাল সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন করার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক সদস্যপদ কমানো হয়েছে। এতদিন ৩০ শতাংশ শ্রমিকের সমর্থন না পেলে ট্রেড ইউনিয়ন করা যেত না। সংশোধিত আইন অনুযায়ী এখন ২০ শতাংশ শ্রমিকের সমর্থন মিললে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে। ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধনের আবেদন পাওয়ার ৫৫ দিনের মধ্যে সরকারকে নিবন্ধন দিতে হবে। আবেদন প্রত্যাখ্যান হলে ৩০ দিনের মধ্যে শ্রম আদালতে আপিল করা যাবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) চাহিদা অনুযায়ী শ্রমবান্ধব নীতি সব জায়গায় কার্যকর করতে সংশোধিত শ্রম আইন প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী কারখানার শ্রমিকদের উৎসব ভাতা দেওয়া হবে। নারী শ্রমিক প্রসূতিকল্যাণ সুবিধাসহ প্রসবের পর আট সপ্তাহ পর্যন্ত অনুপস্থিত থাকতে পারবেন। কোনো মালিক মহিলা শ্রমিককে প্রসূতিকল্যাণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করলে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো কারখানায় ২৫ জনের বেশি শ্রমিক থাকলে তাদের জন্য পানির ব্যবস্থাসহ খাবার কক্ষ রাখতে হবে, সেখানে বিশ্রামেরও ব্যবস্থা থাকতে হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শ্রমিকরা ইচ্ছা করলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কাজ করে পরে তা উৎসব ছুটির সঙ্গে ভোগ করতে পারবেন। উৎসবের ছুটিতে কাজ করালে এক দিনের বিকল্প ছুটিসহ দুই দিনের ক্ষতিপূরণ মজুরি দিতে হবে। তিনি জানান, শিশুশ্রমের বিষয়ে সংশোধিত শ্রম আইনে ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ শব্দটি বাদ দিয়ে সেখানে ‘কিশোর’ শব্দটি যোগ করা হয়েছে। আগে ১২ বছর বয়সী শিশুরা কারখানায় হালকা কাজের সুযোগ পেত। সংশোধিত আইন অনুযায়ী ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোররা হালকা কাজ করতে পারবে। ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশু শ্রমিক কাজ করতে পারবে না। সংশোধিত শ্রম আইন পাস হলে খাবার ও বিশ্রামের সময় বাদে টানা ১০ ঘণ্টার বেশি কোনো শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানো যাবে না।

শফিউল আলম বলেন, বলপ্রয়োগ, হুমকি প্রদর্শন, কোনো স্থানে আটক রাখা, শারীরিক আঘাত এবং পানি, বিদ্যুৎ বা গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বা অন্য কোনো পন্থায় মালিককে কোনো কিছু মেনে নিতে বাধ্য করলে তা অসদাচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। সংশোধিত আইন পাস হলে শ্রম আদালতগুলোকে মামলা দায়েরের তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে রায় দিতে হবে। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে আবশ্যিকভাবে রায় দিতে হবে। এতদিন রায় দেওয়ার জন্য ৬০ দিন নির্ধারিত ছিল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে কেউ আপিল করলে তা ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে আবশ্যিকভাবে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে তা শেষ করতে হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, কোনো মালিক বা শ্রমিক অসৎ শ্রম আচরণ করলে এক বছর কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আগে দুই বছর সাজার সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। বেআইনি ধর্মঘট করলে সংশোধিত আইনে সাজা ছয় মাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে অর্থদণ্ড আগের মতো ৫ হাজার টাকা রাখা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে বেআইনি ধর্মঘটের জন্য এক বছর কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হতো। তিনি আরও জানান, কোনো ব্যক্তি একই সময়ে একাধিক ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হলে এক মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিদ্যমান আইনে এ অপরাধে ছয় মাস কারাদণ্ড রয়েছে। আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী সংশোধিত আইনে মালিক, শ্রমিক ও সরকার মিলে একটি ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ গঠন করতে পারবে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, শ্রমিকরা কর্মরত অবস্থায় মারা গেলে ১ লাখ টাকার বদলে ২ লাখ এবং স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে সোয়া ১ লাখ টাকার পরিবর্তে আড়াই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন। কোনো ব্যক্তি কোনো শিশু বা কিশোরকে চাকরিতে নিযুক্ত করলে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

নতুন আইনে প্রধান পরিদর্শকের পদকে হালনাগাদ করে মহাপরিদর্শক এবং উপ-প্রধান পরিদর্শকের পদকে অতিরিক্ত প্রধান পরিদর্শক করা হয়েছে। এ ছাড়া যুগ্ম-মহাপরিদর্শক, উপমহাপরিদর্শক ও সহকারী মহাপরিদর্শক ছাড়াও বেশকিছু নতুন পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সংশোধিত শ্রম আইন ইপিজেড এলাকার কারখানার জন্য প্রযোজ্য নয়, তবে বিদ্যমান আইনগুলোকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার চেষ্টা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর