বুধবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সমুদ্রপথে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ ভারত শ্রীলঙ্কা মালদ্বীপ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সমুদ্রপথে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ ভারত শ্রীলঙ্কা মালদ্বীপ

বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ এই চার দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচলের বিষয়ে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে— চার দেশীয় সি-ক্রুজ সার্ভিস চালুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।

সূত্র জানায়, গত ৩১ জুলাই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ এ চারটি দেশের সমন্বয়ে সি-ক্রুজ ও পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য যদি প্রচলিত আইন, নৌ প্রটোকল সংশোধনের প্রয়োজন পড়ে তবে তাও করা যেতে পারে বলে ওই সভায় মতামত দেওয়া হয়।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুস সামাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চার দেশের মধ্যে সমুদ্রপথে যোগাযোগ সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা চলছে। আগামী ৯ ও ১০ অক্টোবর মেরিক্যাল লজিস্টিক ফোরামের বৈঠক হবে। আমরা ওই ফোরামে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আরও আলোচনা করব। সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল নিয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়েছে। এমওইউ অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে এখন যাত্রীবাহী ক্রুজ সার্ভিস পরিচালনার জন্য এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর) স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে যাত্রীবাহী জাহাজ পরিচালনার সম্ভাব্যতার বিষয়টিও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে উপকূলীয় জাহাজ চলাচলের বিষয়ে একটি চুক্তি সম্পাদনের বিষয়ে কাজ করছে দেশ দুটি। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে জাহাজ চলাচল সম্পর্কিত এসব চুক্তি কার্যকর হলে তখন চার দেশীয় জাহাজ চলাচলের বিষয়ে কাজ করা সহজ হবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচলের প্রক্রিয়া শুরু হলেও সমুদ্রপথে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের সঙ্গে বাংলাদেশের সি-ক্রুজ বা উপকূলীয় পর্যটকবাহী জাহাজ চালুর বিষয়ে কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। আমরা সেটি সমাধানের জন্য বেসরকারি ক্রুজ লাইনার এবং অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আরও আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছি। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে সড়কপথে চার দেশীয় পণ্য ও যাত্রীবাহী যান (বিবিআইএন) চলাচল চুক্তির প্রক্রিয়ার সময় পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্রপথেও যোগাযোগ গড়ে তোলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ছাড়াও পুর্ব এশিয়ার মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গেও সমুদ্র যোগাযোগ সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে উদ্যোগ নিতে বলা হয়। ওই সময় মিয়ানমারের সঙ্গে উপকূলীয় জাহাজ চলাচলের বিষয়ে বেশ কিছুটা অগ্রগতি হলেও রোহিঙ্গা সংকটের পর থেকে সেই উদ্যোগ থেমে যায়। তবে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমুদ্রপথে যোগাযোগ সম্পর্ক স্থাপন প্রক্রিয়ার বিষয়গুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে স্থল যোগাযোগ চুক্তি কার্যকরের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি আরও বাড়বে। প্রসার ঘটবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পর্যটনশিল্পে। তবে প্রধানমন্ত্রী শুধু এখানেই থেমে থাকতে চান না। তিনি স্থলপথের পাশাপাশি সমুদ্রপথেও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করতে চান। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ‘এশিয়া প্যাসিফিক ওশান ক্রুজ’-এ বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এর ফলে একদিকে যেমন মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের মতো পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়বে, পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ তিন দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের সঙ্গেও সমুদ্র-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।

সর্বশেষ খবর