বৃহস্পতিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আপনারা যা খুশি করেন যতদিন ইচ্ছা সাজা দেন

আদালতে বেগম খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

আপনারা যা খুশি করেন যতদিন ইচ্ছা সাজা দেন

নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভিতরে বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে হাজির হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিচারকের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনাদের যা ইচ্ছা করেন, যতদিন ইচ্ছা সাজা দেন, আমি এ অবস্থায় বার বার আসতে পারব না। এই আদালতে ন্যায়বিচারও হবে না।’ এ সময় নিজের অসুস্থতার কথাও তুলে ধরেন তিনি। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার এজলাস পরিবর্তন করে মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারির পর পুরনো কারাগারে গতকালই ছিল প্রথম কার্যক্রম। এর আগে রাজধানীর বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসেই এই মামলার কার্যক্রম চলেছে।

খালেদা জিয়াসহ এ মামলার তিন আসামিকে এজলাসে হাজির করা হলেও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা কেউ না আসায় বিচারের শেষ পর্যায়ে থাকা এ মামলার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া যায়নি। আধা ঘণ্টারও কম সময় আদালতের কার্যক্রম চলার পর ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর শুনানির নতুন তারিখ ঠিক করে দেন। যুক্তিতর্কের শুনানি শেষ হলেই সোয়া তিন কোটি টাকা আত্মসাতের এ মামলা রায়ের পর্যায়ে যাবে। এদিকে, পুরনো কারাগার ভবনে অস্থায়ী এজলাসে মামলার শুনানিকে কেন্দ্র করে আশপাশের এলাকায় নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। আশপাশের রাস্তায় যানচলাচলও সীমিত করা হয়। এর আগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালনায় এজলাস পরিবর্তন করে গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। অন্য মামলায় পাঁচ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে এই কারাগারেরই একটি কক্ষে বন্দী থাকা খালেদা জিয়াকে বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে হাজির করা হয় এজলাসে। হুইলচেয়ারে বসিয়ে তাকে আনা হয়। পরনে ছিল হালকা বেগুনি রঙের শাড়ি। তার পায়ের ওপরের অংশ থেকে নিচ পর্যন্ত সাদা চাদর দিয়ে ঢাকা ছিল। এ সময় তার ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমাও সঙ্গে ছিলেন। আদালতে অবস্থানের সময় খালেদা জিয়াকে কিছুটা অসুস্থ দেখাচ্ছিল। মাঝে মাঝে তার হাত কাঁপতেও দেখা গেছে।

শুনানির শুরুতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে বলেন, ‘আজ (বুধবার) এ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য ছিল। গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়। এরপর থেকে অসুস্থতার কারণে খালেদা জিয়াকে এখন পর্যন্ত আদালতে হাজির করা যায়নি। তার অসুস্থতা ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পুরনো কারাগারে আদালত বসানোর বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনটি যথাযথভাবে আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়াকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আর অন্য আইনজীবীদের ব্যক্তিগতভাবে আজকের শুনানির বিষয়ে জানানো হয়েছে। এমনকি বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা-সংলগ্ন অস্থায়ী আদালত যেখানে বসত সেখানেও তা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর তিনি আদালতের কার্যক্রম শুরুর আরজি জানান।

এ সময় বিএনপিপন্থি এক আইনজীবী ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা খান আদালতে খালেদা জিয়ার কোনো আইনজীবী দেখতে না পেয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি আদালতের অনুমতি নিয়ে বলেন, ‘আমি এখানে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে এসেছি। খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনা করেন, এমন কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত হননি। রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী কারাগারে আদালত বসবেন, এ ধরনের প্রজ্ঞাপন গত রাতে আসামিপক্ষের এক আইনজীবীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এটা যথাযথভাবে আসামিপক্ষকে জানানো হয়নি।’ তাই আদালতকে সার্বিক বিবেচনায় নতুন তারিখ ধার্য করতে অনুরোধ জানান তিনি। এ পর্যায়ে বিচারক আখতারুজ্জামান বলেন, গত রাতে গেজেট হয়েছে। আমরা সবাই পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনে খবর দেখেই এখানে এসেছি। বকশীবাজারের আদালতের সামনেও গেজেটের কপি টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তো কারও না আসার কথা না। আমি ১ ঘণ্টার জন্য মুলতবি করছি, সবাইকে আসতে বলেন। এ পর্যায়ে খালেদা জিয়া বলেন, আমি অসুস্থ। বাম পা সোজা হয়ে থাকে, বাঁকা করতে পারি না। ডান হাতটাও ঠিকমতো কাজ করে না। এ অবস্থায় আমি বার বার আদালতে আসতে পারব না। আপনাদের যা ইচ্ছা করেন, যা সাজা দেবেন দিয়ে দেন। এই আদালতে আমি ন্যায়বিচার পাব না। আদালতের উদ্দেশে খালেদা জিয়া আরও বলেন, এই গেজেট কেন একদিন আগে করা হবে। এক সপ্তাহ আগে কেন করা হলো না। আমার আইনজীবীদের আদালতে আসতে দেওয়া হয়নি। এই বিচার চলতে পারে না। পরে বিচারক আগামী ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। একই সঙ্গে খালেদা জিয়া এবং আসামি মনিরুল ইসলাম ও জিয়াউল ইসলাম মুন্নার জামিনও ওইদিন পর্যন্ত বহাল রাখেন। গতকাল আইনজীবীরা আদালতে না আসায় খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের সাদা কাগজে লিখেই হাজিরা উপস্থাপন করতে দেখা গেছে। অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের পর খালেদা জিয়াকে এক দিনও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় শুনানিতে হাজির করা হয়নি। প্রায় প্রতি তারিখেই আদালতকে তার অসুস্থতার কথা জানানো হয়েছে কারাগারের পক্ষ থেকে। ফলে এ মামলায় যুক্তিতর্কের শুনানি আটকে রয়েছে সাত মাস ধরে।

কঠোর নিরাপত্তা : কারাগারের ভিতরে নতুন এজলাসে এই শুনানিকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে কারাগারের সামনের সড়কে বন্ধ করে দেওয়া হয় গাড়ির চলাচল। বন্ধ রাখা হয় আশপাশের দোকানপাট। বকশীবাজার মোড়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করা না হলেও সেখানে অন্তত ৩০ জন পুলিশ সদস্যকে সকালে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা গেছে। যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় নাজিমউদ্দিন রোডের মাক্কুশা মাজারের কাছেও। চকবাজার মোড়ে, বেগমবাজার মোড়ে ও আবুল হাসনাত রোডেও দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া পাহারা। বিভিন্ন স্থানে পথচারীদের তল্লাশি করা হচ্ছে। কারাগারের কাছে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। ঢাকা মহানগর পুলিশের চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনার সানওয়ার হোসেন বলেন, ‘পুলিশ স্বাভাবিকভাবেই সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে।’

সর্বশেষ খবর