বৃহস্পতিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ঢাকা-চট্টগ্রামে অভিযান

সড়কে হঠাৎ ভিন্ন চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম

গাড়ির পেছনে গাড়ি। নেই কোথাও কোনো প্রতিযোগিতা। সারিবদ্ধ গাড়িগুলো চলছে নিজ নিজ লেন মেনে। তাদের সঙ্গে থাকা প্রতিটি গণপরিবহন দাঁড়াচ্ছে নির্দিষ্ট স্টপেজে। এ সময় চোখে পড়েনি কোনো হিউম্যান হলার ও লেগুনা। মোটরসাইকেল আরোহী সবাইকে হেলমেট ব্যবহার করতে দেখা গেছে। পথচারীরাও রাস্তা পারাপার হচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থান দিয়েই। গতকাল জাহাঙ্গীর গেট ক্রসিং থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কে দেখা যায় এমন চিত্র। আগের দিন মাসব্যাপী ট্রাফিক কার্যক্রম-সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে এই সড়ককে মডেল ট্রাফিক করিডর ঘোষণা করেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। ওই করিডরের পরিক্ষামূলক যাত্রার পাশাপাশি রাজধানীতে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী ট্রাফিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম। এদিকে চট্টগ্রামেও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে অভিযানে নেমেছে পুলিশ।

ঢাকায় মডেল ট্রাফিক করিডরে যানবাহনকে সুশৃঙ্খল রাখতে ট্রাফিক পুলিশ, রোভার স্কাউটস, গার্লস গাইড সদস্যদের পাশাপাশি রাখা হয় দুটি ভ্রাম্যমাণ ভিডিও ক্যামেরা। যারাই ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করেছেন, তাত্ক্ষণিক ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেন। এ সময় নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া কোনো স্থানে গণপরিবহনের দরজা খুলতে দেওয়া হয়নি। রাস্তা পারাপারে জেব্রাক্রসিং কিংবা ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। বিজয় সরণি ও সোনারগাঁও মোড়ে জেব্রাক্রসিং ব্যবহারে পথচারীদের সহায়তায় রাখা হয় অন্তত ৫০ জন রোভার স্কাউটস সদস্য।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের (তেজগাঁও) অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ডা. মনজুর মোর্শেদ জানান, মডেল করিডরে যানবাহনের শৃঙ্খলা নিশ্চিতের সব ধরনের চেষ্টা চালানো হয়। হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহীকে এ সড়ক ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি এতে লেগুনা ও হিউম্যান হলারের চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডিএমপির ঘোষণা অনুযায়ী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লেগুনা বা হিউম্যান হলার চলাচলে কঠোর নজরদারি রাখা হয়। রুট পারমিট ছাড়া চলতে দেওয়া হয়নি কোনো গণপরিবহন। ছিল যেখানে-সেখানে রাস্তা পারাপারে বিধিনিষেধ। বিভিন্ন সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে চলেছে ট্রাফিক পুলিশের অভিযান। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ কমে যায় যানবাহনের চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীবাসী। নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের দীর্ঘ সময়। আবার কোনো কোনো স্থানে নির্দিষ্ট স্টপেজের বাইরের যাত্রী ওঠানামাও করে গণপরিবহনগুলোয়।

মাসব্যাপী এই কর্মসূচির আওতায় ফুটওভারব্রিজ, জেব্রাক্রসিং ও আন্ডারপাস ব্যবহার করতে নগরবাসীকে অনুরোধ করা হয়। শুধু মোটরসাইকেলের চালক নয়, আরোহীকেও হেলমেট পরতে বলা হয়। আর এসব জনসচেতনতা সৃষ্টিতে পুলিশকে সহায়তা করতে রাজধানীর ১২টি স্পটে রোভার স্কাউটের অন্তত ৩২২ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। তারা উত্তরার হাউস বিল্ডিং, আবদুল্লাহপুর, কাকলী, বনানী, মহাখালী, ফার্মগেট, সোনারগাঁও মোড়, শাহবাগ, ফকিরাপুল, শাপলা চত্বর, বিজয়নগর মোড় ও হাই কোর্ট মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় তারা পথচারীদের মধ্যে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক লিফলেট বিতরণ করেন।

রোভার স্কাউটের জাতীয় কমিশনার সারওয়ার মোহাম্মদ শাহরিয়ার এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ট্রাফিক সচেতনতা কর্মসূচিতে আমাদের স্কাউট সদস্যরা প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের পাশাপাশি প্রতিটি স্পটে দুজন করে নেতাও নিয়োজিত আছেন।’

ফুটওভারব্রিজে পথচারীদের সারি : উত্তরায় মাসকট টাওয়ারের সামনে ফুটওভারব্রিজে উঠতে পথচারীদের দীর্ঘ সারি লক্ষ করা গেছে। এ সময় জেব্রাক্রসিং কিংবা ফুটওভারব্রিজ ছাড়া পথচারী কাউকেই সড়ক পার হতে দেওয়া হয়নি। পুলিশের কঠোর নজরদারিতে কেউ গাড়ি থামিয়ে সড়ক পার হওয়ারও ঝুঁকি নেননি।

হেলমেট ছাড়া মেলেনি তেল : প্রায় মাসখানেক আগে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে নেমে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নানা কৌশল হাতে নেয় পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে হেলমেট ছাড়া পাম্পগুলো থেকে তেল না দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এমন নির্দেশনায় গতকাল হেলমেট ছাড়া বাইকচালকদের তেল দেওয়া হয়নি। সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। পাম্পগুলোতে ‘হেলমেট ব্যতীত মোটরসাইকেলে জ্বালানি ইস্যু করা হইবে না’ এমন লেখা পেট্রল ও অকটেন সরবরাহের মেশিনে লেমিনেটিং করা কাগুজে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়।

নির্দিষ্ট স্টপেজের বাইরে যাত্রী ওঠানামা : ১২১টি স্থান নির্ধারণের পরও যেখানে-সেখানে যাত্রী উঠান-নামান পরিবহন শ্রমিকরা। যে যেখানে দাঁড়িয়ে হাত তোলে সেখানেই বাস থেমে যাত্রী ওঠায়। আবার চলন্ত অবস্থায় রাস্তার মধ্যেই যাত্রী নামানো হয়। রাজধানীর শ্যামলী থেকে নিউমার্কেটমুখী মিরপুর রোডের কয়েকটি স্থানে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। এ সময় ট্রাফিক পুলিশ দেখামাত্রই অনেকে গেট লক করে দেয়।

সর্বশেষ খবর