শুক্রবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

জিয়াই প্রথম কারাগারের মধ্যে আদালত বসান : প্রধানমন্ত্রী

ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দেওয়া হবে না আইসিসিবিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহের উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক

জিয়াই প্রথম কারাগারের মধ্যে আদালত বসান : প্রধানমন্ত্রী

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ ২০১৮-এর উদ্বোধন শেষে গতকাল ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

খালেদা জিয়ার বিচারে কারাগারে আদালত বসানো অসাংবিধানিক নয় মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা নতুন কিছু নয়। অতীতেও বাংলাদেশের কারাগারের মধ্যে আদালত স্থাপন করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমানই প্রথমে কারাগারের মধ্যে আদালত বসিয়ে কর্নেল তাহেরের বিচার করেছিলেন। সেই বিচারে কর্নেল তাহেরের ফাঁসি হয়েছিল। খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলায় কোনো প্রতিহিংসা বা রাজনীতি নেই। এটি ক্যামেরা টায়ালও নয়। আদালতের দরজা খোলা। তিনি অপরাধ করেছেন, এতিমের টাকা আত্মসাত্ করেছেন। তার বিচার হবেই। গতকাল রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় ছিল বলেই বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়েছে সেভাবেই এগিয়ে যাবে। এই উন্নয়নের গতিধারা ধরে রাখতে হলে অবশ্যই নৌকায় ভোট দিতে হবে। আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় অনতে হবে। আর এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে ৩০ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা অর্থবহ হবে। এর জন্য দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি আনতে হবে। আর এটা একমাত্র আওয়ামী লীগই আনতে পারবে।

বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার বিচারে কোনো রাজনীতি নেই, কোনো প্রতিহিংসা নেই। তিনি এতিমের টাকা খেয়েছেন বলেই আদালত তাকে সাজা দিয়েছে। তিনি যদি নির্দোষ হতেন তাহলে তার আইনজীবীরাই প্রমাণ করতে পারতেন যে তিনি নির্দোষ। কাজেই অপরাধীর সাজা তো হবেই।

ভবিষ্যতে বিদ্যুত্ খাতে ভর্তুকি দেওয়া হবে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন খরচ ৬ টাকা ২৫ পয়সা। কিন্তু বিদ্যুত্ বিক্রি করা হচ্ছে ৪ টাকা ৮২ পয়সায়। আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বিদ্যুত্ খাতে ভর্তুকি দেওয়া হবে না। উত্পাদন খরচ গ্রাহককেই দিতে হবে। গতকাল সকালে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) বিদ্যুত্ ও জ্বালানি সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ‘অনির্বাণ আগামী’ প্রতিপাদ্যে বিদ্যুত্ ও জ্বালানি খাতে সরকারের সাফল্য তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যত্ পরিকল্পনার বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদানে এই জ্বালানি সপ্তাহ উদ্যাপন হচ্ছে। জ্বালানি সপ্তাহের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা, জ্বালানিবিষয়ক সেরা প্রতিবেদনের জন্য সাংবাদিক ও দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুরস্কার এবং গৃহস্থালি, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে  বিদ্যুত্-সাশ্রয়ী গ্রাহকদের সম্মাননা প্রদান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ হাজার মেগাওয়াট ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের মহাপরিকল্পনা নিয়ে আমরা যাত্রা করেছি। বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নেপালের জ্বালানি, পানিসম্পদ ও সেচবিষয়ক মন্ত্রী বর্ষা মান পুন অনন্ত, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত্ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম, বিদ্যুত্ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম বক্তৃতা করেন। বিদ্যুত্ বিভাগের সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস অনুষ্ঠানে বিদ্যুত্ বিভাগে সরকারের সাফল্য ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোহম্মদ রহমাতুল মুনিম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে সরকারের বিদ্যুত্ খাতের সাফল্য নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী মেলা ঘুরে দেখেন।

মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আদালতে বলেছেন, ‘আমাকে সাজা দেওয়ার জন্যই এখানে আদালত বসানো হয়েছে। এখানে ন্যায়বিচার নেই। আপনাদের যা মন চায়, আমাকে যত দিন ইচ্ছা তত দিন সাজা দিয়ে দেন। আমি অসুস্থ। বারবার আদালতে আসতে পারব না।’ এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা কোন ধরনের কথা! একজন মানুষ, যিনি সংবিধান মানেন, আইন মানেন, তিনি কীভাবে বলেন যে আমি আদালতে যাব না, আপনারা পারলে সাজা দিয়ে দেন। নিজেকে নিরপরাধ মনে করলে তিনি অবশ্যই আদালতে আসবেন। আদালতে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা কি কোনো নাগরিক বলতে পারেন? যিনি আইন মানেন, যিনি সংবিধান মানেন, তার কাছ থেকে কি এমন কথা শোভা পায়? শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার নামেও তো মামলা ছিল। কই, আমি তো পালিয়ে যাইনি!’ আদালতে বিএনপি আইনজীবীদের না আসা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপির অনেক আইনজীবী খালেদা জিয়ার হাজিরা সময় আসেন না। এটা বুঝতে হবে যে, হয় আইনের লড়াইয়ে তাকে তারা নিরপরাধ প্রমাণ করতে পারবেন না, অথবা তাকে বয়কট করেছেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় যে দলের জন্ম, সেই দলের কাছ থেকে সংবিধানের কথা শুনতে হয়। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যে গৃহপরিচারিকা থাকে, তাকে কোন আইনের বলে তার সঙ্গে রাখেন তিনি? খালেদা জিয়া ঘুমাতে পারবেন না বলে বিশেষ অর্থোপেডিক গদি সরবরাহ করেছি, এটা কোন আইনে আছে? অথচ খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিলেন তিখন বিমানবাহিনীর প্রধান, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও রওশন এরশাদকে কারাগারের ফ্লোরে রেখেছেন।’

ড. কামাল হোসেনসহ কয়েকজন রাজনীতিবিদের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া গঠনকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিকল্প থাকুক, এটা তারাও চান। এখানে উচ্চশিক্ষিত জ্ঞানী-গুণী আইনজীবী, হোমরাচোমরাদের অনেকেই আছেন। আমরাও চাই, তারা আসুক। নির্বাচনে অংশ নিক। তবে তারা যেন স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীসহ সামপ্রদায়িক গোষ্ঠীকে কাছে না টানেন, এটাই আশা করি।’ ড. কামালের নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি নিজেকে সংবিধানপ্রণেতা হিসেবে দাবি করেন। তাহলে তিনি কীভাবে সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচনের কথা বলেন, সরকার গঠনের কথা বলেন?’

সর্বশেষ খবর