শুক্রবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বলার এখতিয়ার একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর : কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে বলার এখতিয়ার একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি ছাড়া এ বিষয়ে কেউ জানেন না। গতকাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাজশাহী মহানগরী ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

আগামী ২০ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার— অর্থমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সেতুমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার কখন হবে, সাইজ কী, আকার কী, ক্যাবিনেটে কতজন থাকবেন— প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ জানেন না। আমি পার্টির সাধারণ সম্পাদক, আমিও এখন পর্যন্ত জানি না। তিনি বলেন, ২৭ ডিসেম্বর নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নিশ্চিত হলেও তা বলার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশনকে বিব্রত করা আমাদের কাজ নয়। এটা বলার দায়িত্ব সরকার, সরকারের কোনো মন্ত্রীর কিংবা দলের কোনো নেতারও নয়। আমাদের যার যার এরিয়ার মধ্যে সীমিত থেকে রেসপনসিবল ভূমিকায় থাকলে দেশ, গণতন্ত্র ও সরকারের জন্য ভালো। এরপর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং, শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দলের কমিটি ভাঙা বা নতুন কমিটি গঠন বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ওবায়দুল কাদের। বৈঠকসূত্র জানায়, সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, নির্বাচন সামনে রেখে কোনো ধরনের কোন্দল, কাউকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, বিদ্রোহী আচরণ বরদাশত করা হবে না। সবার আমলনামা প্রধানমন্ত্রীর হাতে আছে। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন সবাইকে তার পক্ষে কাজ করতে হবে। মতবিনিময় সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজশাহীর নেতাদের ডাকার নিশ্চয় কারণ আছে। প্রতিযোগিতা অসুস্থতা, অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় দলের নেতাদের ডাকতেই হবে। এখন সবার এমপি হওয়ার প্রতিযোগিতা দলের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলার বিচ্যুতি ঘটাচ্ছে। দায়িত্বশীল নেতারা যদি অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন, তাহলে কর্মীরা কী শিখবেন! নির্বাচন করার ইচ্ছা থাকতেই পারে, শুধু একজনই মনোনয়ন চাইবেন, তা তো নয়। অন্যরাও চাইতে পারেন। দলের ফান্ডে ২৫ হাজার টাকা করে দিতে হয়, এবার এর পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে। সেতুমন্ত্রী বলেন, চা দোকানে বসে গ্রুপ মিটিং করে দলের একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে প্রচারণা করেন, যেটা হওয়ার কথা ছিল বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে। এসব আত্মঘাতী প্রবণতা বন্ধ করতেই হবে। তিনি বলেন, শূন্যতা না থাকলে নির্বাচন পর্যন্ত কোনো কমিটি ভাঙা যাবে না। নতুন কোনো কমিটিও করা যাবে না। আর নিজেদের মধ্যে দলাদলি করে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করাকে কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। বরগুনা ও দিনাজপুরে এটি ঘটেছে। এসব দল মোটেও গ্রহণ করবে না। কারও অভিযোগ থাকলে সরাসরি লিখিত আকারে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেবে। এটি দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা সমাধান করবেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, অসুস্থ প্রতিযোগিতা করে কেউ যদি মনে করেন এমপি হওয়ার পথ সুগম হবে, তাহলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন। জরিপ রিপোর্ট আছে, আমলনামা, এসিআর আছে। ছয় মাস পরপর আপডেট হচ্ছে। সর্বশেষটাও যোগ হয়ে গেছে। এগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞ দল যাচাই-বাছাই করছে। আওয়ামী লীগ জনমতের ভিত্তিতেই মনোনয়ন দেবে। যিনি বেশি গ্রহণযোগ্য, তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে যতই প্রভাবশালী নেতা হোন না কেন, মনোনয়ন দেওয়া হবে না। নির্বাচন আর দল এক কথা নয়। জাতীয় ঐক্যে আওয়ামী লীগ যাবে কিনা— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ঐক্যে বিশ্বাসী। জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন হলে আমরা ডাক দেব। এখন আমরা জনগণের ঐক্য চাই। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা গণতন্ত্রের বিষয়। আমরা এটাকে ওয়েলকাম জানাই। আমরা যে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনে যাচ্ছি এমন তো নয়। ঐক্যও হতে পারে। নির্বাচন এলে জোট হবেই। আওয়ামী লীগও জোট করে, অন্যান্য দলও জোট করে। বিএনপিরও জোট আছে। আমাদের ১৪-দলীয় জোট আছে, জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের জোট হয়েছে, সরকারে আমরা একসঙ্গে আছি। সেই মহাজোটের সরকারই তো বর্তমানে বাস্তবে দেশ চালাচ্ছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তাই এ বড় দলের সমর্থক ও ভোটারদের বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হাস্যকর। আওয়ামী লীগ ছাড়া ১৪ দল আছে। এ দলগুলোকে বাদ দিয়ে যেটা হবে তা হলো সাম্প্রদায়িক ঐক্য। জাতীয় ঐক্যের নামে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ হচ্ছে। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হয় নাকি? ‘জাতীয় ঐক্য’ শব্দ ব্যবহার না করাই ভালো। মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, খায়রুজ্জামান লিটন, অসীম কুমার উকিল, আবদুস সবুর, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু, এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর