মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

চলছে ইভিএমের প্রস্তুতি

৩০ অক্টোবরের পর যে কোনো দিন তফসিল

গোলাম রাব্বানী

আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের প্রস্তুতি রাখছে নির্বাচন কমিশন। এজন্য নির্বাচন কমিশনের জেলা-উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২২৫ জন কর্মকর্তাকে ইভিএমের ব্যবহারের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের আগে সব জেলা-উপজেলা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ গণনা শুরু হওয়ার পর তথা ৩০ অক্টোবরের পর যে কোনো সময় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। এদিকে সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী প্রস্তাব ইসির অনুমোদন পেয়েছে। তা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে ইসি আশা করছে—আরপিওর সংশোধনী পাস হবে। এজন্য সংসদ নির্বাচনে আংশিকভাবে হলেও ইভিএম ব্যবহারের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি।

সম্প্রতি ইভিএম বিষয়ে ইসি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, যদি সরকার আইন প্রণয়ন করে, যদি সেটা ব্যবহার করার মতো পরিবেশ পরিস্থিতি আমাদের থাকে, তখন আমরা র‌্যানডমভিত্তিতে ইভিএম ব্যবহার করার চেষ্টা করব। এখন প্রস্তুতিমূলক অবস্থানে আমরা রয়েছি। সিইসি দাবি করেন, ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচন আয়োজনে আর্থিক সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারবে না। তিনি জানান, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম সুচারুভাবে ব্যবহার হচ্ছে। ৪ হাজার ৫৭১টি ইউপি, ৩৩২ পৌরসভা, ৪৯১ উপজেলায় পর্যায়ক্রমে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইসির সামনে। আসছে ডিসেম্বরের শেষ ভাগে এ নির্বাচনের তারিখ ফেলা হতে পারে বলে ইতিমধ্যে আভাসও দিয়েছে কমিশন।

ইভিএম প্রকল্প নিয়ে আজ পিইসি সভা : একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য নির্বাচন কমিশনের হাতে নেওয়া নতুন প্রকল্প নিয়ে আজ বসছে পরিকল্পনা কমিশন। আজ বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে এ প্রকল্পের ওপর পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির) সভা অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে ইসি সূত্র জানিয়েছে। এ প্রকল্পের অধীনে দেড় লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনা হচ্ছে। নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্রয়, সংরক্ষণ ও ব্যবহার’ শীর্ষক এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হচ্ছে ৩ হাজার ৮২১ কোটি ৪০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প প্রস্তাবনাটি রয়েছে। প্রকল্প পাস হলে পরে ইভিএম বিষয়ে পরিকল্পনা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন সিটি নির্বাচনে নতুন ইভিএমের সফল প্রয়োগের পর ইসি একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই নির্বাচনকে আরও স্বচ্ছ করতে ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন তারা। 

ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪০ হাজার। প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার ভোটকক্ষ হতে পারে। আর প্রতিটি ভোটকক্ষের জন্য একটি ও প্রতিটি কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষের অতিরিক্ত একটি ইভিএম রাখা হয়। এ হিসাবে ৩০০ আসনের জন্য নির্বাচনে ২ লাখ ৬৪ হাজার ইউনিট ইভিএম দরকার হবে। কিন্তু ইসির হাতে এত ইভিএম নেই। আর নতুন এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ সম্ভব হবে। তারা বলেন, বর্তমানে কমিশন প্রথমে ২ হাজার ৫৩৫টি ইভিএম কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। তার মধ্যে ৩৮০টি এসে পৌঁছেছে।

ইভিএম প্রশিক্ষণ : প্রতি ব্যাচে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২ লাখ : ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের জেলা-উপজেলা কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জেলা-উপজেলা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রতি ব্যাচে ২৫ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এজন্য ইসির ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।

৩০ অক্টোবরের পর যে কোনো দিন তফসিল : একাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হওয়ার পর যে কোনো দিন তফসিল ঘোষণার জন্য প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি। সচিব বলেন, ৩০ অক্টোবরের পর যে কোনো সময় নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হতে পারে। ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর আগে ইসি সচিব জানিয়েছিলেন, সংসদ নির্বাচনের ভোটের সময় ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ধরেই সব ধরনের প্রস্তুতি এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন করার জন্য রাজনীতি করে।

আমরা আশা করি প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজার ভোট কেন্দ্রে প্রায় দুই লাখ ভোটকক্ষ থাকবে। এক্ষেত্রে ৪০ হাজার প্রিসাইডিং অফিসারসহ সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার নিয়ে কয়েক লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রয়োজন হতে পারে। হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, জাতীয় নির্বাচন অনেক বড় একটি কাজ। তফসিল ঘোষণার আগে যেসব কাজ থাকে তার ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা প্রণয়ন করা এবং তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর