মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
শৃঙ্খলা নিয়ে কঠোর আওয়ামী লীগ

মিসবাহউদ্দিন সিরাজসহ ১০ নেতাকে শোকজ

রফিকুল ইসলাম রনি

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করার অভিযোগে শোকজ (কারণ দর্শাও) নোটিস দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে। একই অভিযোগে নোটিস পাঠানো হয়েছে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আসাদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ফসিউল চৌধুরী নাদেলকে। জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে বলে জানা গেছে।

শুধু এই তিন নেতাকেই নয়, দলীয় এমপির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে অনাস্থা আনায় ‘দলীয় শৃঙ্খলা’ বিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুম, দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক হামিদুল ইসলাম, বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া জাকা, বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টিপু, বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনকে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। সিলেট সিটি নির্বাচনে ৭টি ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী কেন দেওয়া যায়নি এবং নেতারা কেন বিরোধিতা করলেন— তা জানতে চাওয়া হয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন কামরানকে। সূত্র জানায়, শোকজ নোটিসে তাদের বিরুদ্ধে সংগঠনের ৪৭ (চ) ও (থ) ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত নোটিশ গতকাল ধানমন্ডি কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্টদের ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাদের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া আলাদা চিঠিতে কেন ঐক্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে আরও তিনজন দলীয় সংসদ সদস্যের কাছে। তারা হলেন— দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল, বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবং রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা। চিঠিতে কেন তারা দলীয় ঐক্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তাদেরও জবাবের জন্য ১৫ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিলেট সিটি নির্বাচনের পরাজয় এবং বরগুনা, রাজশাহী এবং দিনাজপুরের এমপিকে এলাকায় অবাঞ্ছিত করার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কারণ জানতে এবং দোষী প্রমাণ হলে চূড়ান্ত শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দলের পদ পদবি নিয়ে থাকবে, আবার দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করবে তাদের দলে রাখার দরকার নাই। এদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ পরিস্থিতি তৈরি হবে।’  সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আসাদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ফসিউল চৌধুরী নাদেলকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, দলের প্রাথমিক তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে যে, সিলেট সিটি নির্বাচনে আপনি দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছেন। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আপনার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা লিখিত আকারে ১৫ দিনের মধ্যে জানাতে হবে। জবাব সন্তোষজনক না হলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একইভাবে এমপিদের বিরুদ্ধে যারা অনাস্থা এনেছেন, তাদের বলা হয়েছে, আপনি সংগঠনবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়েছেন। কোনো এমপি, নেতাকে অবাঞ্ছিত বা বহিষ্কার করার এখতিয়ার কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া কারও নেই। আপনাদের কাজে দলের ভিতরে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা লিখিত আকারে জবাব দিন। গত ৫ সেপ্টেম্বর মনোরঞ্জন শীল গোপালকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বীরগঞ্জ ও কাহারোল আওয়ামী লীগের একাংশ। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার বিজয় চত্তরে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে বীরগঞ্জ-কাহারোল আওয়ামী ঐক্য পরিষদ। এ সময় দিনাজপুর-পঞ্চগড় মহাসড়ক দেড় ঘণ্টা অবরোধ করে রাখা হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া জাকা, বীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাবেক এমপি আমিনুল ইসলাম। এ সময় বক্তারা এমপি গোপালের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন। এর একদিন আগে ৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার অনিয়ম, দুর্নীতি, মাদক বাণিজ্য ও অপরাজনীতিসহ ২৪টি অভিযোগে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের একাংশ। জেলার সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর কবিরের নেতৃত্বে বরগুনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এ সময় বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি দেলোয়ার হোসেনসহ বরগুনা জেলা, সদর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারার বিরুদ্ধে নিয়োগ, স্কুল-কলেজ সরকারিকরণ বা শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য টাকা নেওয়া, ত্রাণ বিতরণে স্বজনপ্রীতি, টাকার লেনদেন, জামায়াত-বিএনপির লোকদের আওয়ামী লীগে এনে স্থানীয় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য টাকা নেওয়াসহ আরও বেশ কিছু অভিযোগ তোলা হয়েছে। এসব অভিযোগ দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিতভাবে পাঠানো হয়েছে। গত ৭ মে দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র তোফাজ্জল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কিশমতগণকৈড় ইউপি চেয়ারম্যান আফসার আলী মোল্লা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বানেছা বেগম, ভাইস চেয়ারম্যান জামাল উদ্দীন, পানানগর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আজাহার আলী, আওয়ামী লীগ নেতা ও দেলুয়াবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম, জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সমশের আলী এমপি কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন।

এদিকে সর্বশেষ গতকাল সোমবার বরিশাল-৪ আসনের (মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা, কাজীরহাট) সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘নির্যাতন-সন্ত্রাস-দুর্নীতি-মাদক প্রতিরোধ কমিটি’র ব্যানারে ওই সংবাদ সম্মেলনে মূলত স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাই ছিলেন। এই সংগঠনের সদস্য সচিব হলেন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সাগর, আর আহ্বায়ক ও হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ ইকবাল মাতুব্বর।

সর্বশেষ খবর