মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে বিপিসি চেয়ারম্যান

জ্বালানি তেল আমদানির ছয় উদ্যোগে পাল্টে যাবে দেশের দৃশ্যপট

নিজস্ব প্রতিবেদক

জ্বালানি তেল আমদানির ছয় উদ্যোগে পাল্টে যাবে দেশের দৃশ্যপট

জ্বালানি তেলের আমদানির সোর্স বহুমুখী করতে বর্তমানে ছয়টি উদ্যোগ রয়েছে সরকারের। এগুলো বাস্তবায়ন হলে এ সেক্টর একটি নির্ভরযোগ্য ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে। এ সেক্টরের সক্ষমতায় পাল্টে যাবে বাংলাদেশের দৃশ্যপট। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের গত দুই মেয়াদে বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে আমদানিকৃত তেল মজুদ ক্ষমতা দ্বিগুণে উন্নীত হয়েছে। এটি ভবিষ্যতে আরও বাড়ানো হবে।  বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান মো. আকরাম আল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।

বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহনব্যবস্থা চলমান রাখা, কৃষি সেক্টরে সেচসুবিধা প্রদানসহ জ্বালানি খাতের চাহিদা পূরণে প্রতি বছর প্রায় ৮৬ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল ব্যবহার করা হয়। এত বিপুল পরিমাণ তেল আমাদের বিদেশ থেকে আমদানি করেই চাহিদা মেটাতে হয়। ২০০৮ সালে যেখানে বাংলাদেশের মাত্র ২৫ দিনের তেল মজুদ রাখার ক্ষমতা ছিল সেখানে বর্তমান সরকারের প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাস্তবভিত্তিক বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে এ ক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ৫০ শতাংশ তেল জি টু জি ভিত্তিতে ১১টি দেশ থেকে আমদানি করা হয়। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ টেন্ডারের মাধ্যমে কেনা। দেশের উত্তরাঞ্চলের চাহিদা পূরণের জন্য ভারতের নুমালিগড় থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গ্যাসফিল্ড থেকে প্রাপ্ত কনডেনসেট থেকে দেশের পেট্রল ও অকটেনের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। সিস্টেমলস হ্রাসকরণের উদ্দেশ্যে অটোমেশন ও তেল খালাস সহজীকরণের জন্য এসপিএম প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্রুড অয়েল প্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ইআরএল-২ ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় প্রতিদিন কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে সরকারের। ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ শেষ হলে দেশে পরিশোধন ক্ষমতা বাড়বে। এতে লোকসান কমে আসবে। এখন দেশে অপরিশোধিত ১১ লাখ ৭৪ হাজার ও পরিশোধিত ৫৫ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টন তেল আমদানি করা হচ্ছে। জ্বালানি তেল খালাস সহজ করার জন্য সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল (এসপিএম) করা হচ্ছে।

মহেশখালী-চট্টগ্রাম পাইপলাইন : বিপিসি চেয়ারম্যান জানান, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিবহনে ৪৬ দশমিক ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে চীনের একটি ব্যাংক। প্রতি ডলার সমান ৮০ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা। ‘ইনস্টালেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্পের আওতায় এ ঋণ দিচ্ছে চীন। মহেশখালী থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত দুটি পাইপলাইন নির্মাণ হবে। প্রতিটি পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য হবে ১১০ কিলোমিটার। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলিয়ে বছরে ৯ মিলিয়ন টন তেল পরিবহন করা সম্ভব হবে। গভীর সমুদ্রবন্দর থেকে ছোট জাহাজে চট্টগ্রামে তেল আনতে ১২ দিন লাগে। পাইপলাইন নির্মাণ হলে লাগবে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা। অপরিশোধিত ও পরিশোধিত তেল আমদানিতে যে অপচয় হয় তাও তখন কমানো সম্ভব হবে। ফলে বছরে প্রায় ১০ কোটি ডলার অপচয় কমবে।

ভারত থেকে ডিজেল : বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, ২ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ডিজেল আসছে ভারত থেকে। ভারতে সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে আমদানির এ সিদ্ধান্ত হয়। এর ফলে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ২০১৫ সালের এপ্রিলে ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মধ্যে ১৩৯ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, এনআরএলের শিলিগুড়ি মার্কেটিং টার্মিনাল থেকে পার্বতীপুর বিপিসি ডিপো পর্যন্ত ইন্দো-বাংলা ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন স্থাপন হবে। তবে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত রেল অয়েল ট্যাঙ্কারে করে তেল আনা অব্যাহত থাকবে। বিপিসি চেয়ারম্যান আকরাম আল হোসেন বলেন, ১৫ বছর মেয়াদে আন্তসীমান্ত পাইপলাইনে এ জ্বালানি তেল আনা হবে। ভারত থেকে বার্ষিক আড়াই লাখ থেকে ৪ লাখ টন ডিজেল পাইপলাইনে আমদানি করা হবে। ভারতের নুমালিগড় থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুরের পার্বতীপুর তেলের ডিপো পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার পাইপলাইন করা হবে। এই ‘ইন্দো-বাংলা ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’-এর ১২৫ কিলোমিটার বাংলাদেশে ও ৫ কিলোমিটার ভারতে হবে। বর্তমানে বিদেশ থেকে তেল জাহাজে করে চট্টগ্রামে আসে। সেটি উত্তরবঙ্গে পাঠাতে প্রতি ব্যারেলে ৪ দশমিক ৪ ডলার খরচ হয়। সব মিলিয়ে প্রিমিয়াম দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৬ ডলার।

সে হিসাবে ভারত থেকে আনা তেলের খরচ কম পড়বে।

বিমানের জ্বালানির পাইপলাইন : আকরাম আল হোসেন বলেন, নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জ তথা রূপগঞ্জের কাঞ্চন ব্রিজ থেকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে ‘কুর্মিটোলা অ্যাভিয়েশন ডিপো’তে উড়োজাহজের জ্বালানি তেল পরিবহনে (জেট এ-১) ১৬ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর