বুধবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রযুক্তি বাণিজ্যে বাংলাদেশ টার্গেট যুক্তরাষ্ট্রের

চায় দায়মুক্তি কাল বৈঠক টিকফার

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশের উঠতি বাজারে নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি ই-কমার্স ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিশ্বের বৃহত্তর ই-কমার্স সাইট অ্যামাজন ডটকমের সেবা বাংলাদেশে চালু করার আগ্রহ দেখাচ্ছে। তবে ই-বর্জ্য নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের পরিবেশ মন্ত্রণালয় যে আইন করতে যাচ্ছে, সেটি থেকে নিজেদের প্রযুক্তিপণ্যের ব্যবসাকে দায়মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দেবে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে এ খাতের ব্যবসায় যুক্তরাষ্ট্রকে সুযোগ করে দেওয়ারও প্রস্তাব দেবে তারা। আগামীকাল থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে দুই দিনব্যাপী টিকফা (ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম অ্যাগ্রিমেন্ট) বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে এসব প্রস্তাব দেওয়া হবে বাংলাদেশকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। অনুষ্ঠেয় বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নিচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক, বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু এবং শ্রম সচিব আফরোজা খানসহ উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন মার্কিন বাণিজ্য দফতর ইউনাইটেড ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভের (ইউএসটিআর) বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট ই লাইটহাইজার। টিকফা ফোরামের চূড়ান্ত বৈঠক শুরুর আগে দুই পক্ষ ভিডিও কনফারেন্স ও চিঠি আদান-প্রদানের মাধ্যমে নিজ নিজ পক্ষের ‘অবস্থানপত্র’ চূড়ান্ত করেছে। জানা গেছে, এবারের টিকফা ফোরামের বৈঠকে বাংলাদেশ মার্কিন বাজারে তৈরি পোশাকের রপ্তানিতে ন্যায্যমূল্য দেওয়ার জোরালো আহ্বান রাখবে। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ টানতে এক বা একাধিক ইকোনমিক জোন দেওয়ার প্রস্তাবও থাকবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। এ জন্য বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশ সরকার আইন করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে, তা জোরালোভাবে তুলে ধরবে প্রতিনিধিদল। বিনিময়ে বাংলাদেশের আইসিটি, টেলিকমিউনিকেশন, এনার্জি ও অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ চাওয়া হবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এ দেশে আরও বেশি প্রযুক্তি ও তথ্য বিনিময় করুক এবং বাণিজ্য সম্পর্কিত দক্ষতা উন্নয়নে ভূমিকা রাখুক, এটিও চাইবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে সুনির্দিষ্টভাবে তুলা, ফার্মাসিউটিক্যাল ও মেডিক্যাল ডিভাইস এবং ডিজিটাল ইকোনমির নামে বাংলাদেশে ই-কমার্স খাতে বাজার সম্প্রসারণের প্রস্তাব রয়েছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে বীমা ব্যবসা করার প্রস্তাবও থাকবে দেশটির পক্ষ থেকে। অনুষ্ঠেয় বৈঠকে দেশটি ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্যের আমদানি সনদ বাংলাদেশ যাতে আরও সহজী করার পদক্ষেপ নেয়, সে বিষয়ে প্রস্তাব দেবে। এ ছাড়া মেধাস্বত্ব আইন, বিশেষ করে কপিরাইট আইন কার্যকর করার বিষয়েও বাংলাদেশকে চাপ দেবে তারা। এর বাইরে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের পোশাক খাতে কর্মপরিবেশ এবং শ্রম আইন সংশোধন ও শ্রম অধিকার পরিস্থিতির কতটা উন্নতি ঘটেছে, এ বিষয়ে পর্যালোচনা এবং ব্যাখ্যা চাইবে যুক্তরাষ্ট্র। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘টিকফা ফোরামের বৈঠকে আমাদের দিক থেকে জিএসপি প্রত্যাহার করায় বাংলাদেশ যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটি তুলে ধরা হবে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হবে। আমরা চাইব তারা যেন ডব্লিউটিওর চুক্তি অনুযায়ী শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করে। আমাদের বাণিজ্য সহজীকরণের বিষয়েও দেশটির কৌশলগত সহায়তা চাওয়া হবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা আমাদের দেশে তুলা ও ওষুধ রপ্তানি করে। এ দুটি পণ্য রপ্তানি আরও সহজীকরণ করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। বিশেষ করে তুলা রপ্তানির ক্ষেত্রে যে ‘‘ডাবল ইমিগ্রেশন’’ চালু রয়েছে, সেটি প্রত্যাহার চায় তারা। এ বিষয়ে আমাদের যে আইন রয়েছে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত তুলে ধরা হবে।’ জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম-সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর প্রথম টিকফা কাউন্সিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায় ২০১৪ সালের এপ্রিলে। দ্বিতীয় বৈঠক ২০১৫ সালের নভেম্বরে ওয়াশিংটন ডিসিতে। তৃতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের ১৭ মে ঢাকায়। নিয়ম অনুযায়ী এবারেরটি ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর