বৃহস্পতিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

কেমন সরকার কীভাবে ভোট

অতি বয়স্ক বিতর্কিত বুদ্ধিজীবী ভাবধারার কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে রাখা হচ্ছে না জাতীয় পার্টি ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ থেকে থাকছে প্রতিনিধি । মন্ত্রিসভা হবে ১৫-২৫ সদস্যের । সুষ্ঠু ভোটে ইসিকে সহায়তা করবে সরকার

রফিকুল ইসলাম রনি

কেমন সরকার কীভাবে ভোট

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কড়া নাড়ছে দরজায়। আর মাসদেড়েক পরই গঠিত হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার। ওই সরকার কেমন হবে, ভোট কীভাবে হবে তা নিয়ে সর্বত্র চলছে নানামুখী আলোচনা। নির্বাচনকালীন সরকার যেমনই হোক, এর নেতৃত্বে থাকছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাদ পড়ছেন বর্তমান মন্ত্রিসভায় থাকা অর্ধেকের বেশি সদস্য। এ ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২৫ জনকে নিয়ে গঠন করা হবে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’। বর্তমানে ৩৩ মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী, দুজন উপমন্ত্রী ও মন্ত্রীর পদমর্যাদায় পাঁচজন উপদেষ্টা রয়েছেন। এবারের নির্বাচনকালীন সরকারে অতিবয়স্ক, বিতর্কিত ও ‘অতিবুদ্ধিজীবী’ ভাবধারার কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে রাখা হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ এবং জোটের শরিক জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ থেকে প্রতিনিধি থাকবে সরকারে। তবে বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যরাই থাকছেন নাকি নতুন কেউ আসবেন সরকারে তা এখনো পরিষ্কার নয়। সবকিছু নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আনার লক্ষ্য দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সে কারণে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার কৌশল, ইশতেহার তৈরিসহ নির্বাচনকেন্দ্রিক কাজগুলো সারছেন তিনি। একইসঙ্গে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের লক্ষ্যে হোমওয়ার্ক শুরু করেছেন। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বর্তমান মন্ত্রিসভাকে ছোট করে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। এ সরকারে কাকে রাখবেন আর কাকে বাদ দেবেন তা তিনি নিজের ল্যাপটপে সংরক্ষণ করছেন। সূত্রমতে, অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে গঠন করা হবে নির্বাচনকালীন সরকার। এ সরকার তখন রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। সূত্রমতে, দরজায় ভোট কড়া নাড়লেও নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা হয়নি। এ নিয়ে দেশের প্রধান দুই দল দুই মেরুতে অবস্থান করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি বলছে, বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোট দিতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনকালীন সরকার ছোট বা বড় সেটা বড় কথা নয়, এ সরকারকে হতে হবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। তা না হলে ভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একধরনের সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি হবে। এ প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার হতে হবে জনগণ ও যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে সেই দলগুলোর পছন্দের। মন্ত্রিসভার আকার ছোট না বড় তার চেয়ে সরকারে যারা থাকবেন তাদেরকে জনগণের আস্থাভাজন হতে হবে।’ নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে যে দায়িত্ব দেওয়া আছে, নির্বাচন কমিশন সেভাবেই দায়িত্ব পালন করবে। ভোটারদের কেন্দ্রে আনা, একটি গ্রহণযোগ্য, অবাধ-সুষ্ঠু ভোট জাতিকে উপহার দেওয়াই ইসির কাজ।’ নির্বাচনকালীন সরকারে কারা থাকছেন— জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারে কারা থাকবেন বা কারা থাকবেন না তা নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর। তিনি যাকে ভালো মনে করেন তাকেই রাখবেন আবার যাকে খুশি বাদও দিতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পর মেজর কোনো ডিসিশন গ্রহণ করা হবে না। নিয়মিত রুটিন কাজগুলো করবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন।’ সূত্রমতে, নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় কারা থাকছেন তা নিয়ে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলে। যারা বর্তমানে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন তাদের মধ্যে কৌতূহলটা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেখা-সাক্ষাতের সময় একে অন্যকে জিজ্ঞাসা করছেন ‘থাকছেন নাকি মন্ত্রিসভায়?’ আবার অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকারে যারাই থাকুন ভোট হবে কীভাবে? ইভিএম প্রক্রিয়ায় ভোট নাকি পুরনো পদ্ধতিতে হবে? নির্বাচন কমিশন কি প্রভাবমুক্ত নির্বাচন দিতে সক্ষম হবে? আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী একটি সরকার থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকটি সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। আর নির্বাচনের সময় আগের নির্বাচিত সরকারই তার দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ক্ষেত্রে সরকারের কর্তব্য হবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনকে সহায়তা করা। নির্বাচনের সময় সরকারের আকার ছোট করা বা কেবল নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে সরকার গঠনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে সরকারের আকার ছোট বা বড় করার এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে। এটা তাঁর সাংবিধানিক ক্ষমতা। তিনি যে কোনো সময় তা করতে পারেন। সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই অযোগ্য করিবে না।’ এর অর্থ হচ্ছে যিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, তিনি নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত সপদে বহাল থাকবেন। অর্থাৎ এ বিধান অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সপদে বহাল রেখেই নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবে। সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয়সহ সব ধরনের নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে সংবিধানে বলা আছে, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনীয় কর্মচারী নিযুক্ত করবেন। সরকারের নির্বাহী বিভাগ ইসিকে দায়িত্ব পালনে সহায়তা করবে। সংবিধানের এ দুই বিধানের আলোকে সরকারের ইসিকে সহযোগিতা করা ও নির্বাচনকালে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ইসির পরামর্শ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর