শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

গুলিবিদ্ধ তিন লাশ মিলল পূর্বাচলে, পকেটে ইয়াবা

ডিবি পরিচয়ে বাস থেকে ধরে নেওয়া হয়, দাবি স্বজনদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর অদূরে পূর্বাচল উপশহরের পথের ধারে তিন যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ মিলেছে। গতকাল সকালে আলমপুর ১১ নম্বর ব্রিজ এলাকা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরা তিনজনই ঢাকার বাসিন্দা। তারা হলেন— মহাখালীর শহীদুল্লাহর ছেলে সোহাগ (৩২), মুগদা এলাকার আবদুল মান্নানের ছেলে শিমুল (৩০) এবং একই এলাকার আবদুল ওয়াহাব মিয়ার ছেলে নূর হোসেন ওরফে বাবু (৩০)। এর মধ্যে শিমুল ও বাবু সম্পর্কে ভায়রা।

নিহতদের স্বজনদের অভিযোগ, গত ১২ সেপ্টেম্বর দিবাগত মধ্য রাতে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় পূর্বাশা পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তিনজনকে নামিয়ে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ ছিলেন। তবে পুলিশের দাবি, গ্রেফতার সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। নিহতরা মাদক ব্যবসায়ী ও থানায় মামলা রয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছে। এ ছাড়া নিহত একজনের প্যান্টের পকেটে ৬৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া গেছে।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফারুক হোসেন বলেন, ‘সড়কের পাশে তিন যুবকের লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকার লোকজন পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ লাশগুলো মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।’

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, সোহাগ ভূঁইয়ার নামে বনানী থানায় চারটি মাদক ও একটি হত্যা মামলাসহ মোট পাঁচটি মামলা ছিল। শিমুল আজাদের নামে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়িতে মাদকের একটি মামলা ছিল। নূর হোসেনের নামে সম্ভাব্য দুটি মাদক, দুটি বিস্ফোরক ও একটি অন্য মামলা আছে। পূর্বাশা পরিবহনের সুপারভাইজার আশরাফুল ইসলাম জানান, গত ১২ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ৯টায় বাসটি চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে ছেড়ে আসে। ওই তিনজন কালিগঞ্জের লালপুর কাউন্টার থেকে গাড়িতে ওঠেন। পরে ভোর সাড়ে ৩টার দিকে পাটুরিয়া জিরো পয়েন্ট এলাকায় ১৭/১৮ জন ডিবি পরিচয়ে ওই তিনজনকে তুলে নেয়।

শিমুলের স্ত্রী আয়েশা আক্তার আন্নী বলেন, গত বুধবার বেড়াতে গিয়ে ফেরার পথে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রীবাহী বাস থেকে তার স্বামীসহ অন্যদের সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। দুটি মাইক্রোবাস ও একটি গাড়িতে করে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে শিমুলসহ তিনজন নিখোঁজ ছিলেন। তার সেলফোন  বন্ধ ছিল। খবর পেয়ে থানায় এসে তিনি স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন। তার স্বামী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন বলে জানান তিনি। সোহাগের ভাই মো. শাওনের তথ্য মতে, গত বুধবার বেড়াতে গিয়ে তার বড় ভাই নিখোঁজ হন। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ফেসবুকে ছবি দেখে তারা রূপগঞ্জ থানায় যেয়ে মরদেহ শনাক্ত করেন। তার ভাই ফাস্টফুড বার্গার ও স্যাটেলাইট ক্যাবল নেটওয়ার্কের ব্যবসা করতেন। রূপগঞ্জ থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, শুক্রবার সকালে পূর্বাচল ১১ নম্বর ব্রিজ এলাকায় সড়কের পাশে তিন যুবকের মরদেহ দেখে স্থানীয় লোকজন। পরে তারা পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ওই এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ মরদেহগুলো উদ্ধার করে। নিহত তিন যুবকের পরনে প্যান্ট, শার্ট ও গেঞ্জি ছিল। তিনজনেরই মাথা ও শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওসি বলেন, ‘সেখানে জেলা পুলিশের কোনো অভিযান চালানো হয়নি। অন্য কোনো বাহিনী তাদের আটক করেছিল কি না, সে তথ্য আমাদের কাছে নেই।’

সর্বশেষ খবর