শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সরাইলে দাফন জীবিত উদ্ধার নারায়ণগঞ্জে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে লাশ দাফনের সাত দিন পর উপজেলার অরুয়াইলের আসাদ উল্লাহকে (৩৮) পুলিশ জীবিত উদ্ধার করেছে নারায়ণগঞ্জ থেকে। গতকাল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থেকে তাকে জীবিত উদ্ধার করে সোনরগাঁ থানা পুলিশ। পরে সোনারগাঁ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জাকির হোসেন মোবাইল ফোনে আসাদ উল্লাহকে জীবিত উদ্ধার করার বিষয়টি সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়াকে জানান। সাত সন্তানের জনক আসাদ উল্লাহ সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের অরুয়াইল গ্রামের উত্তরপাড়ার আলী আকবরের ছেলে। ৬ সেপ্টেম্বর উপজেলার চুন্টা থেকে অর্ধগলিত অজ্ঞাতনামা যুবকের লাশকে আসাদ উল্লাহর (৩৮) বলে শনাক্ত করে তার পরিবার। স্থানীয় জনগণ, পুলিশ ও মামলাসূত্রে জানা গেছে, সরাইলের অরুয়াইল-ধামাউড়া সড়কের পাশে ৫২ শতক জমি ইজারা নিয়েছিলেন আসাদ উল্লাহ। এর মূল্য প্রায় কোটি টাকা। এ জায়গার পাশে রয়েছে হরিপদ নামের এক হিন্দু লোকের জায়গা। ইজারা নেওয়া জায়গার দখলকে কেন্দ্র করে হরিপদের সঙ্গে বিরোধের সৃষ্টি হয় আসাদের। হরিপদের অভিযোগ, সরকারি জায়গা দখল করে তার কিছু জায়গাও দখল করেছেন আসাদ। আর আসাদের দাবি, তিনি সরকারি জায়গাই দখল করেছেন। এ জায়গা নিয়ে একসময় উভয় পক্ষই মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ে। পরে আসাদ ওই জায়গার কিছু অংশ বিক্রি করে দেন। এ নিয়ে অরুয়াইলে দুটি পক্ষের সৃষ্টি হয়।

৫ আগস্ট আসাদ উল্লাহ সরাইল থানায় একটি জিডি করেন। জিডিতে তিনি অরুয়াইল ইউনিয়নের ধামাউড়া গ্রামের আক্তার মিয়ার ছেলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী শফিকুল ইসলাম (৩৫), একই এলাকার তাজুল ইসলামের ছেলে মোখলেছ মিয়া (৩৫), এলাছ উদ্দিনের ছেলে কাপ্তান মিয়া (৪৫), এন্তাজ আলীর ছেলে আলী মিয়া (৪০) ও রানিদিয়া গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে আক্কাস মিয়ার (৩৫) বিরুদ্ধে তাকে মারধর ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেন। তদন্তের পর ওই জিডিটি ৯ আগস্ট ননএফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার পর সরাইল সদরের উচালিয়াপাড়া মোড় থেকে আসাদ উল্লাহ অপহরণ হয়েছেন মর্মে সরাইল থানাকে মৌখিকভাবে অবহিত করেন তার স্বজনরা। ২০ আগস্ট আসাদ উল্লাহর মেয়ে মোমেনা বেগম বাদী হয়ে আদালতে একটি অপহরণ মামলা করেন। মামলায় কাপ্তান মিয়া, গাজী শফিকুল ইসলাম, মোখলেছ মিয়া ও আক্কাস মিয়াকে আসামি করা হয়। ৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে অরুয়াইল বাজারে একটি প্রতিবাদ মিছিল ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেবের সভাপতিত্বে হয় পথসভা। সভায় বক্তারা মোমেনার দায়েরকৃত মামলাকে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানান। ৬ সেপ্টেম্বর উপজেলার চুন্টা উত্তরপাড়ার শ্মশানের কাছে হাওরের পানিতে ভেসে ওঠা অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে সরাইল থানা পুলিশ। খবর পেয়ে থানায় আসেন আসাদ উল্লাহর স্বজনরা। তারা লাশটি আসাদ উল্লাহর বলে দাবি করেন। ময়নাতদন্ত শেষে লাশটি গ্রহণ করেন আসাদের মেয়ে মোমেনা।

পরে বাড়িতে নিয়ে জানাজা শেষে দাফনও করা হয়। এ ঘটনায় গত শুক্রবার মোমেনা বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলামকে প্রধান এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাতজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ-ছয় জনকে আসামি করে।

এ ব্যাপারে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া আসাদ উল্লাহকে জীবিত পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তার সঙ্গে কথা বলে ব্যাপক তদন্ত শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর