শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ন্যূনতম মজুরি মানছেন না গার্মেন্ট শ্রমিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ন্যূনতম মজুরি মানছেন না গার্মেন্ট শ্রমিকরা

গার্মেন্ট শ্রমিকদের ঘোষিত মজুরি ৮ হাজার টাকা প্রত্যাখ্যান করে ১৬ হাজার টাকা করার দাবিতে গতকাল রাজধানীতে মিছিল বের করে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র —বাংলাদেশ প্রতিদিন

গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামো কেউ মানছেন না। সরকার প্রস্তাবিত ন্যূনতম ৮ হাজার টাকার ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে দেশের ক্রিয়াশীল বেশির ভাগ শ্রমিক সংগঠন একে অবাস্তব বলে বিক্ষোভ সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে। বৃহস্পতিবার ঘোষণার পর গতকাল রাজধানীতে বিভিন্ন সংগঠন এর প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এর মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট ও গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। গার্মেন্ট, টেক্সটাইল ও লেদার ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সম্মেলনে মজুরি ঘোষণার সিদ্ধান্ত অবাস্তব বলে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গতকাল গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট ও গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন নিম্নতম মজুরি ৮ হাজার টাকা ঘোষণার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। সমাবেশে জানানো হয়, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টসহ স্কপভুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনগুলোর জোটের (জি-স্কপ) নেতৃত্বে গার্মেন্ট শ্রমিকরা নিম্নতম মজুরি ১৮  হাজার টাকা নির্ধরণ করার দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করছে। সরকার মালিকদের সঙ্গে আঁতাত করে একটি অন্যায্য সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে। এই অন্যায্য সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবি জানান তারা। গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি আহসান হাবিব বুলবুলের সভাপত্বিতে সমাবেশে বক্তব্য দেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুর রাজ্জাক, গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের নেত্রী মোশরেফা মিশু, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, যুগ্মসম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম গোলক, সাংগঠনিক সম্পাদক সৌমিত্র কুমার দাস, অর্থ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, দফতর সম্পাদক হাসনাত কবির প্রমুখ। এ সময় গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার ৮ হাজার টাকার যে মজুরি ঘোষণা করেছে তার মধ্যে মূল মজুরি ৪ হাজার ১০০ টাকা। ২০১৩ সালে গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত নিম্নতম মূল মজুরি ৩ হাজার টাকা; ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ বছর পর বিদ্যমান মূল মজুরি ৩ হাজার ৮২৮ টাকা। অর্থাৎ নতুন মজুরি ঘোষণায় শ্রমিকদের মূল মজুরি মাত্র ২৭২ টাকা বাড়ানো হয়েছে; যা প্রমাণ করে মজুরি বোর্ড শ্রম আইন, ২০০৬-এর ১৪১ নম্বর ধারার মানদণ্ড কিংবা আইএলও কনভেনশন ১৩১-এর মজুরির মাপকাঠিকে কোনো মূল্য দেয়নি। সরকার এই ঘোষণার মাধ্যমে সমাজে বৈষম্য বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করছে। এদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ গার্মেন্টস, টেক্সটাইল ও লেদার ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের কাউন্সিলে ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে দ্রুত ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানানো হয়। কাউন্সিলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক জাফরুল হাসান বলেন, একই সময়ে শ্রম আইন সংশোধন ও ওয়েজ ঘোষণা করা হয়েছে। দুটিই আগের চেয়ে আরও খারাপ হয়েছে। শ্রম আইনে ৮ ঘণ্টা ডিউটির পরিবর্তে ১০ ঘণ্টা করা হয়েছে। আবার নতুন ওয়েজে শ্রমিকের বেতনে বেসিক কমানো হয়েছে।

 ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ ভাগ আসে গার্মেন্ট শিল্প থেকে। কিন্তু এ খাতের শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হয় না। বড় আন্দোলনে যাওয়ার আগেই ১৬ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। গার্মেন্ট, টেক্সটাইল ও লেদার ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি কুতুবউদ্দিনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন ডেনিস ফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী গেলেন সোয়ানসন, শ্রমিকনেতা হাবিবুর রহমান, আবদুল মান্নান, রহিমা খাতুন প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর