রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইসির সামনে শুধুই চ্যালেঞ্জ

সংসদের পর উপজেলা নির্বাচন, ইভিএম বাস্তবায়ন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করা, সারা দেশের সমন্বয় করা, প্রশাসন ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে ভোটের সময় নিয়ন্ত্রণ, অভ্যন্তরীণ বিরোধ থেকে নিজেদের দূরে রাখা

গোলাম রাব্বানী

ইসির সামনে শুধুই চ্যালেঞ্জ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে ১০টি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে নির্বাচন কমিশন। সংসদ নির্বাচন শেষ করেই দেশব্যাপী উপজেলা নির্বাচন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিতকরণ, ভোটের সময় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ এবং অভ্যন্তরীণ বিরোধ থেকে নিজেদের দূরে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা নির্বাচন কমিশনের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন হবে, তাই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা, অক্টোবরের পর নির্বাচনকালীন সরকারের সময় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আরোপ, ভোটের সময় সারা দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়ের পাশাপাশি নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রমাণে কমিশনকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।

আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে লক্ষ্যে জোর প্রস্তুতি চলছে নির্বাচন কমিশনে। ৬ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত হয়েছে ভোট কেন্দ্রের তালিকা। সংসদীয় আসনের সীমানা অনুযায়ী ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুতির কাজ শেষ। ২৫ সেপ্টেম্বর ভোটার তালিকা মুদ্রণ শুরু হবে। চলতি মাসের মধ্যে নির্বাচনী আইন সংস্কারের কাজও শেষ করতে চায় ইসি। আগামী সংসদ নির্বাচনে আংশিকভাবে ইভিএমে ভোট গ্রহণের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। ইসিসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আরপিও সংশোধনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের ‘নোট অব ডিসেন্ট’, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘ফোরাম অব ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিস অব সাউথ এশিয়া’র (ফেমবোসা) নবম সম্মেলনসহ বেশকিছু বিষয় নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, যা দিন দিন প্রকাশ্য রূপ নিচ্ছে। তবে নির্বাচনের আগে কমিশনারদের নিজেদের বিরোধ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন এক সাবেক নির্বাচন কমিশনার। সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের সামনে    কী কী চ্যালেঞ্জ থাকে— জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়। সেগুলোকে চ্যালেঞ্জ বলব না, তবে ইসির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে সব কাজের সমন্বয় করাটাই বড় বিষয়। কেননা সমন্বয় ভালো হলে নির্বাচন ভালো হয়। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের মালপত্র কেনা, সীমানা নির্ধারণ, ব্যালট ছাপানোসহ অন্যান্য মুদ্রণকাজ, ভোট কেন্দ্র নির্ধারণসহ অনেক কাজ করতে হয়।’ ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র নির্ধারণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রিটার্নিং অফিসাররা এটা করেন। তবে কমিশনকে মনিটরিং করতে হয়।’ নির্বাচনকালীন সরকারের সময় ইসির করণীয় কী— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভালো নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের পক্ষ থেকেও ভালো সহযোগিতা প্রয়োজন হয়।’ তিনি বলেন, ‘ইভিএম ভালো প্রযুক্তি। ইভিএম নিয়ে বর্তমান কমিশনে সমন্বয়হীনতা রয়েছে।’ সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে ভিন্নমত থাকতে পারে তবে তা সবার সামনে আনা ঠিক হবে না। আমি মনে করি, সংসদ নির্বাচনের আগে কমিশনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’ সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা ও নির্বাচনের সময় প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করা। কমিশনের নিরপেক্ষতা ও বলিষ্ঠতা না থাকায় প্রশাসনও নিরপেক্ষ থাকে না। পাঁচ সিটিতে আমরা দেখেছি কমিশন তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারেনি।’ নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসির আসল চ্যালেঞ্জ সামনে। বিএনপিসহ সব দলকে আনাটাই তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় বিদেশিরাও সব দলের অংশগ্রহণে একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রত্যাশা জানিয়ে আসছেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে কমিশনের। জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমা। এ লক্ষ্যে তফসিল ঘোষণার আগে-পরে দুই ধাপের অন্তত ৯০টি কাজ চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী এগোচ্ছে ইসি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর