রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের যাত্রা, কার্যকর গণতন্ত্রের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঁচ দাবি ও ৯ লক্ষ্য ঘোষণার মধ্য দিয়ে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের’ যাত্রা শুরু হলো। কোথাও অনুমতি না পেয়ে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বৃহত্তর ঐক্য গঠনেরও ঘোষণা দেন যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যের নেতারা। বিকালে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘একটা বৃহত্তর ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে আমরা যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া যৌথ ঘোষণা তুলে ধরলাম। এটাতে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ঐক্য করতে চাই। আমরা কার্যকর গণতন্ত্র চাই। পাড়ায় পাড়ায়, গ্রামে গ্রামে, ঘরে ঘরে এই ঐক্য গড়ে উঠুক, যাতে দেশের জনগণ তাদের মালিকানা ফিরে পায়।’ জাতীয় ঐক্যের নেতারা জানান, কয়েক দফা অনুমতি চাইলেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাদের অনুমতি দেয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে সিদ্ধান্ত হয় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সেখানেও বাধা দেয় পুলিশ। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার পক্ষ থেকে মাইক টাঙানো হলে পুলিশ কেড়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করা হয়। পরে বাধ্য হয়ে প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে কর্মসূচি সমাবেশ থেকে লক্ষ্য ও দাবি ঘোষণা করা হয়। পাঁচ দাবি ও ৯ লক্ষ্য ঘোষণা করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। এ সময় পাশে ছিলেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, সাবেক ডাকসু ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ। এ সময় তারা সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়েই কর্মসূচি সমাপ্ত করেন। তবে অনুষ্ঠানে যোগ দেননি বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। কর্মসূচিতে আসার পথে মগবাজারে ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অনুষ্ঠানে নেতারা বলেন, শহীদ মিনারে কর্মসূচি করতে দেওয়া হবে না জানতে পেরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান ডা. বি. চৌধুরী। নির্ধারিত সময়ে সমাবেশ করতে গিয়ে কিছুটা বিশৃঙ্খলাও সৃষ্টি হয়। শহীদ মিনারে অনুমতি না পাওয়ায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ নেতা-কর্মীরা সমবেত হতে শুরু করেন। সেখান থেকেই কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানান তিনি। কিন্তু একপর্যায়ে সেখান থেকে হাই কোর্টের রাস্তা ধরে যাত্রা শুরু করেন আ স ম আবদুর রব। অন্যদিকে ড. কামাল হোসেন প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে গিয়ে বসে থাকেন। তখনো আসেননি বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। এমন অবস্থায় মান্নাও চলে যান তার দলীয় অফিসে। পরে সেখান থেকে আবারও প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এসে নিজেই কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। ঘোষণাকালে অবশ্য বিকল্পধারার সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুককে দেখা যায়। তবে বিকল্পধারার অন্য কোনো নেতা-কর্মী চোখে পড়েনি। অনুষ্ঠানে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আজকে পাঁচ দাবি ও ৯ লক্ষ্যের মাধ্যমে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের যাত্রা শুরু হলো। এ ক্ষেত্রে আমরা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতা চাই। সংবিধান অনুযায়ী দেশের মালিক জনগণ। তাদের চাওয়া-পাওয়াই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয়, আজ জণগণের ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল নেতা নির্বাচনই আমাদের লক্ষ্য।’ তিনি বলেন, ‘এখন যে ঐক্য গড়ে উঠেছে সেটাকে কাজে লাগাতে হবে। প্রকৃত অর্থে জনগণের যারা প্রতিনিধি তারাই দেশ শাসন করবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিদের নির্বাচিত হতে হবে। এ দেশের মালিক দেশের জনগণ। এটাকে কার্যকর করতে হবে। দেশের মানুষ কার্যকর গণতন্ত্র দেখতে চায়। আমরা পাড়ায় পাড়ায়, গ্রামে গ্রামে জাতীয় ঐক্য চাই।’ আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘ঐক্য প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়ার পক্ষ থেকে আমরা কর্মসূচি তুলে ধরেছি। আমাদের লক্ষ্য একটাই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শান্তি ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ। হানাহানি মারামারি, হত্যা, গুম, খুন, অনাচার, ঘুষ, দুর্নীতির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। হেলমেট গণতন্ত্র আমরা চাই না। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন, সুশাসন, ন্যায়বিচার ও মানুষের মৌলিক অধিকার চাই। শহীদ মিনারে সমাবেশের অনুমতি যারা দেননি তাদের প্রতি আমরা ঘৃণা ও নিন্দা প্রকাশ করছি। তবে আগামী দিনে বাধা দিয়েও লাভ হবে না। আমরা ধাক্কাধাক্কিতে যাব না।’

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোগে কয়েকটি কর্মসূচিরও ঘোষণা দেন ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর খুলনার হাদিস পার্ক, ২২ সেপ্টেম্বর মহানগর নাট্যমঞ্চ, ২৯ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর, ৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ এবং ১৪ অক্টোবর রাজধানীর মিরপুরে জনসভা করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।’

নির্বাচনকালীন সরকার ও সংসদ ভেঙে দেওয়াসহ পাঁচ দাবি তুলে ধরে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। ওই সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক  যোগাযোগমাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রছাত্রীসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আনা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। গ্রেফতার ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে হবে। এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী গ্রেফতার করা যাবে না। নির্বাচনের এক মাস আগে থেকে নির্বাচনের পর ১০ দিন পর্যন্ত মোট ৪০ দিন প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা ও পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর যুগোপযোগী সংশোধন করতে হবে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।’

সর্বশেষ খবর