সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল আরও পাঁচ বিভাগে

দ্রুত নিষ্পত্তি হবে পেট্রলবোমায় মানুষ হত্যাসহ সহিংসতার সাত হাজার মামলা

আরাফাত মুন্না

সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল আরও পাঁচ বিভাগে

ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর এবার আরও পাঁচটি বিভাগীয় শহরে হচ্ছে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। এসব ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর দশম সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে বাসে পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যাসহ বিভিন্ন সহিংসতার প্রায় সাত হাজারেরও বেশি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির পথ খুলবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। ট্রাইব্যুনালগুলো গঠনের জন্য এরই মধ্যে বিচারকসহ ৩০টি পদ সৃজন করা হয়েছে।

আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুরে নতুন এসব ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনও পাওয়া গেছে। এখন সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন ও প্রশাসনিক অন্যান্য কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরই নতুন ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ। বিচারক নিয়োগের পরই এসব ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হবে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য শিগগিরই ট্রাইব্যুনালগুলো গঠন করা হবে। ট্রাইব্যুনাল গঠনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলাগুলো বিশেষভাবে বিচার হলে বিচারব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা আরও বাড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন পাঁচ ট্রাইব্যুনালের সৃজন করা ৩০টি পদের মধ্যে রয়েছে—পাঁচজন জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারক, পাঁচজন সাঁটলিপিকার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর, পাঁচজন বেঞ্চ সহকারী, পাঁচজন আউটসোর্সিং গাড়িচালক, পাঁচজন আউটসোর্সিং জারিকারক এবং এমএলএসএসের পাঁচটি আউটসোর্সিং পদ। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে পাঁচটি ট্রাইব্যুনালের প্রতিটিতে একটি করে কার, কম্পিউটার, ফটোকপিয়ার ও ফ্যাক্স মেশিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত বছরের এপ্রিলে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এ-সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়, ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের আওতায় থাকবে ঢাকা মহানগরী এলাকাসহ সমগ্র ঢাকা জেলা এবং চট্টগ্রামে ট্রাইব্যুনালের আওতায় থাকবে স্থানীয় মহানগরী এলাকাসহ সমগ্র চট্টগ্রাম জেলা। এ ছাড়া বিভাগীয় শহরের মহানগরী এলাকাসহ অন্তর্ভুক্ত জেলার বিচারাধীন মামলাগুলো যে আদালত বা ট্রাইব্যুনালেই বিচারাধীন থাকুক না কেন, প্রজ্ঞাপন জারির ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এই ট্রাইব্যুনালের অধীনে চলে আসবে। স্থানান্তরিত কোনো মামলা বিচারের ক্ষেত্রে মামলাটি যে পর্যায়ে স্থানান্তরিত হবে, সেই পর্যায় থেকেই তার বিচারকাজ শুরু করবেন ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া যে আদালত থেকে মামলা স্থানান্তর করা হবে, সেই আদালতের গ্রহণ করা সাক্ষ্য-প্রমাণ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষ্য বলে বিবেচিত হবে। সুবিচারের জন্য প্রয়োজন না হলে এমন সাক্ষ্য-প্রমাণ পুনরায় নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করেন, ২০০৯ সালে গঠিত সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধিত) আইনের ২৮ ধারায় করা মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হলে দেশে সন্ত্রাস দমন করা অনেক সহজ হবে। জেলা ও দায়রা জজরা এসব মামলার কাজ বর্তমানে তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পালন করায় মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হচ্ছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের (সংশোধন) ২৭(১) ধারায় বলা হয়েছে, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠিত না হওয়া পর্যন্ত এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ এবং দায়েরকৃত মামলাগুলো এখতিয়ারসম্পন্ন দায়রা জজ বিচার করতে পারবেন। এই আইনের ২৮(১) ধারায় বলা হয়েছে, সরকার সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের দ্রুত ও কার্যকর বিচারের উদ্দেশ্যে এক বা একাধিক সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে।

সর্বশেষ খবর