সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তির সুপারিশ

চিকিৎসকরা সরকারপন্থি : মোশাররফ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তির সুপারিশ করেছে পাঁচ সদস্যের সরকারি মেডিকেল বোর্ড। বিএসএমএমইউ পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। অন্যদিকে, মেডিকেল বোর্ডে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত কোনো চিকিৎসক না রাখায় তার সমালোচনা করেছে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল বলেছেন, তাঁরা এই মেডিকেল বোর্ড নিয়ে সন্তুষ্ট নন। সরকারের গঠিত মেডিকেল বোর্ডের দ্বারা উপযুক্ত ও সঠিক চিকিৎসা হবে না। আগে যারা বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করতেন, তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুনভাবে মেডিকেল বোর্ড গঠনেরও দাবি জানান তিনি। এর আগে বিএসএমএমইউ-এর পরিচালক সংবাদ সম্মেলনে জানান, কয়েকটি সুপারিশসহ মেডিকেল বোর্ড তাদের প্রতিবেদন গতকাল কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে। এতে মেডিকেল বোর্ডের পর্যবেক্ষণ হলো— খালেদা জিয়ার অসুস্থতা কারাগারে থাকার কারণে নয়। কারাবন্দী হওয়ার আগে থেকে বেশ কিছু সমস্যা ছিল। বর্তমানে তাঁর হাত, পা ও চোখে সমস্যা আছে। কিন্তু তা গুরুতর কিছু নয়। গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএসএমএমইউ পরিচালক এ তথ্য জানান। পরিচালক বলেন, মেডিকেল বোর্ড আরও সুপারিশ করেছে— যে হাসপাতালে সব রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে, সেখানে বেগম খালেদা জিয়াকে ভর্তি করাতে। সেক্ষেত্রে তারা বিএসএমএমইউর নামও সুপারিশে উল্লেখ করেছে। একই সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার কিছু স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতেও সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। অপরদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা মনে করি না সরকারদলীয় সমর্থক চিকিৎসকদের দিয়ে বেগম জিয়ার উপযুক্ত চিকিৎসা হবে । আগে যারা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করতেন, তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন করে মেডিকেল বোর্ড করার দাবিও জানান তিনি। গত ৯ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বৈঠকের কথা উল্লেখ করে সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ওই দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত কিছুসংখ্যক চিকিৎসক এবং সরকারের কিছু চিকিৎসক নিয়ে সমন্বয় করে মেডিকেল বোর্ড করবেন। কিন্তু এভাবে বোর্ড গঠন করায় আমরা হতাশ হয়েছি। কারণ যখন মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে, তখন দেখা গেল শুধু সরকারের দেওয়া ডাক্তারদের দিয়ে এই বোর্ড করা হয়েছে। আমরা মনে করি, সরকার-সমর্থিত চিকিৎসকদের দিয়ে যে মেডিকেল বোর্ড করা হয়েছে, সেই বোর্ডের পরামর্শে সঠিক চিকিৎসা হবে না। সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, বিএসএমএমইউ-এর অধ্যাপক আবদুল জলিল চৌধুরীর নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডের পাঁচ সদস্য শনিবার বিকালে কারাগারে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে দেখে আসেন। গতকাল তারা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাঁদের ব্যবস্থাপত্র প্রদান করেন। অবশ্য বিএনপির পক্ষ থেকে বেগম জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির দাবি জানানো হচ্ছে আগে থেকেই। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে— বিএসএমএমইউ কিংবা সিএমএইচেই তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হবে। পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের অপর সদস্যরা হলেন, অধ্যাপক হারিসুল হক (কার্ডিওলজি), অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী (অর্থোপেডিক সার্জারি), সহযোগী অধ্যাপক তারেক রেজা আলী (চক্ষু) ও সহযোগী অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ (ফিজিক্যাল মেডিসিন)। তাদের মধ্যে তিনজন সরাসরি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং দলীয় বিভিন্ন পদে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।

মির্জা ফখরুলের জাতিসংঘ সফরে উৎকণ্ঠা : নয়াপল্টন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জাতিসংঘ সফরের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উৎকণ্ঠায় আছেন। আর সেই জন্য তিনি জাতিসংঘ সফর নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। এ সফর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনামূলক বক্তব্যের জবাবে ড. মোশাররফ বলেন, বিএনপি মহাসচিব জাতিসংঘে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টেও গেছেন। নিশ্চয়ই সেটি কোনো না কোনোভাবে প্রধানমন্ত্রীকে আঘাত করেছে। হয়তো এটি তার হতাশা ও উৎকণ্ঠার কারণ। চার দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বেগম জিয়া গত বছর বলেছেন, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সরকারকে পদত্যাগ এবং সেনা মোতায়েন করতে হবে। এখন আমরা অত্যন্ত খুশি ও আশাবাদী যে, বিএনপি ও ২০-দলীয় জোটের বাইরেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তি আমাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করছেন। এগুলো এখন শুধু বিএনপির দাবি নয়, জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর