মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

থাকছে না আর কোটা

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে না রাখার সুপারিশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কোটা না রাখার সুপারিশ করেছে কোটা পর্যালোচনাসংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি এ দুই শ্রেণিতে সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করতে সুপারিশ করেছে। কমিটি গতকালই তাদের সুপারিশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়েছে। গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে কোটা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ সুপারিশ জমা দেওয়ার কথা জানান।

এদিকে উচ্চ পর্যায়ের কমিটির করা সুপারিশকে স্বাগত জানিয়েছে আন্দোলনকারী বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। সংগঠনের যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল হক নুর গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কমিটির করা প্রাথমিক সুপারিশকে আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। আমরা চাই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এর বাস্তবায়ন করা হোক। আমাদের অন্য দাবি অর্থাৎ ছাত্রদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান— এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’ সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে অর্থাৎ নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বাতিলের সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা অত্যন্ত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের। এটা যত দ্রুত হয় ততই মঙ্গল।’

কমিটির সুপারিশ সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোটা নিয়ে রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে আজ (সোমবার) সাবমিট করে দিয়েছি। আমাদের ফাইন্ডিংস হলো নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত যে প্রাথমিক নিয়োগ হয়, সে নিয়োগে কোনো কোটাই থাকবে না। কমিটির এ সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেলে মন্ত্রিসভায় উপস্তাপন করা হবে। মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেলে আগামী মাসেই তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হতে পারে।’ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চতুর্দশ থেকে বিংশতম গ্রেডে নিয়োগের ক্ষেত্রে আগের নিয়মই বহাল থাকবে। সরকারি কর্ম কমিশন ইতিমধ্যে ৪০তম বিসিএসের যে বিজ্ঞাপন দিয়েছে, তার ওপর এই সুপারিশের কোনো প্রভাব পড়বে কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে বলা আছে সরকার যদি ভিন্নরূপ সিদ্ধান্ত নেয় সে অনুযায়ী কোটা নির্ধারণ হবে। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কিংবা প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা অন্য কোনোভাবে রাখা যায় কিনা তা ভাবা হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তারা যাচাই-বাছাই করে দেখেছেন, এখন কোটা না হলেও চলতে পারে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে আদালতের একটি নির্দেশনা আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মতামত চাওয়া হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার মতামত সরকারকে জানান। তিনি বলেন, আমাদের ফাইন্ডিংস অনেক ছোট, তবে রিপোর্ট অনেক বড়, আমরা আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছি। তারা বলেছেন এটি সরকারের পলিসি ডিসিশন, কোনো সমস্যা নেই। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটা ভিত্তিতে সংরক্ষিত। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০, নারী ১০, জেলা ১০, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৫ ও প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ। সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার পরিমাণ ৫৬ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে কয়েক মাস আগে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। তাদের সে আন্দোলন ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ এপ্রিল সংসদে বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতিই আর রাখা হবে না। তবে পরে সংসদে তিনি বলেন, কোটা পদ্ধতি থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ রাখতে হাই কোর্টের রায় আছে। পরবর্তীতে কোটা নিয়ে নতুন করে আন্দোলন দানা বাঁধার প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে ২ জুন একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করে সরকার। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে গতকাল বিকালে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ফাইল চালাচালি না করে প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানান। একই সঙ্গে তারা আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে কোটা আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, সচিব যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন, তাকে তারা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল সব চাকরির ক্ষেত্রে যে কোটা পদ্ধতি রয়েছে তার একটি যৌক্তিক সংস্কার। সচিব কমিটি নবম থেকে তেরতম গ্রেড পর্যন্ত বাতিলের যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। পাশাপাশি আমরা দাবি জানাচ্ছি অন্য যে গ্রেডগুলো রয়েছে সেখানে যৌক্তিকভাবে কোটার সহনীয় সংস্কার করা হোক।’ কোটা সংস্কার প্রজ্ঞাপন আকারে জারি না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। আন্দোলনকারীদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক হোসেন তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন হলেই তাদের আন্দোলনে ইতি টানা হবে বলে ঘোষণা করেন। তিন দফা দাবি হলো- ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক সব মামলা প্রত্যাহার করা; হামলাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা এবং পাঁচ দফার আলোকে কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন দেওয়া।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর