শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিচার চলবে খালেদার অনুপস্থিতিতেই

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার পরবর্তী যুক্তি ২৪ সেপ্টেম্বর

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিচার চলবে খালেদার অনুপস্থিতিতেই

পুরনো কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার চলবে বলে আদেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান এ আদেশ দেন। বিচারক বলেন, ‘এক বছর ৯ মাস মামলাটি যুক্তিতর্কের পর্যায়ে থাকায় এবং আসামি বেগম খালেদা জিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতে হাজির না হওয়ায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০(এ) ধারায় প্রসিকিউশনের দরখাস্তটি ন্যায়বিচারের স্বার্থে গ্রহণ করা যায়।’ পরে এ মামলার পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপনের জন্য আগামী ২৪, ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করেন তিনি।

আদেশে বলা হয়, এ মামলার আসামি খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত হাজিরা অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য মওকুফ করা হলো।

মামলার কার্যক্রম যথারীতি চলবে। তার আইনজীবীরা চাইলে আদালতে তার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে পারবেন। আসামিপক্ষ এদিন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার আবেদন করলে বিচারক কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। গতকাল শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রসিকিউশন তাদের পিটিশনের পক্ষে তেমন কোনো যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেনি। আদালত প্রসিকিউশনের পক্ষ হয়ে বিভিন্ন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে আদেশ দিয়েছে। আমরা এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।’ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। অসুস্থতার কারণে তাকে গত সাত মাসে একবারও আদালতে হাজির করতে না পারায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ করতে সরকারের নির্দেশে আদালত স্থানান্তর করা হয় কারাগারের ভিতরে। ৫ সেপ্টেম্বর বিশেষ জজ আদালতের এই অস্থায়ী এজলাসে শুনানির প্রথম দিন খালেদা জিয়া নিজের অসুস্থতার কথা জানিয়ে বিচারককে বলেছিলেন, তিনি বারবার আদালতে আসতে পারবেন না, বিচারক তাকে যত দিন খুশি সাজা দিতে পারেন। এরপর ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর শুনানির নির্ধারিত দিনে কারা কর্তৃপক্ষ খালেদাকে আদালত কক্ষে আনতে ব্যর্থ হলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০(এ) ধারা অনুযায়ী তার অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চালানোর আরজি জানান দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। বিচারক আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করে দেন। সে অনুযায়ী গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন তার দুই আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও সানাউল্লাহ মিয়া। আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার পক্ষে অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম এবং মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে আইনজীবী মো. আক্তারুজ্জামান ছিলেন শুনানিতে। আর মামলার বাদী ও তদন্তকারী সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর আদালতের বিশেষ পিপি আবদুল্লাহ আবু রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন। বিচারক বলেন, সাত বছর ধরে এ মামলার বিচার চলছে। মামলার বিচার চলার সময় শুরু থেকে আসামিরা ৪০ বার, যুক্তি-তর্ক চলার সময় ৩২ বার সময় নিয়েছেন। এভাবে সময় পেছানো হলে মামলাটি দীর্ঘদিন অনিষ্পন্ন থেকে যাবে। এ ধরনের ক্ষেত্রে আসামির হাজিরা মওকুফের উদাহরণ দিতে গিয়ে ভারতের রাজস্থান, উড়িষ্যা ও অন্ধ্র প্রদেশের তিনটি রায়ের প্রসঙ্গ টানেন বিচারক। তিনি বলেন, ‘কোনো পক্ষ আবেদন না করলেও আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে ন্যায়বিচারের স্বার্থে এবং বিচার যেন বিলম্বিত না হয় সে জন্য হাজিরা মওকুফ করতে পারে। কেউ দরখাস্ত না দিলেও ৫৪০(এ) ধারায় কারও মৌখিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কারও হাজিরা মওকুফ করতে পারে আদালত।’ আর এ মামলার আসামি খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে বিচারক বলেন, ‘নথিপত্র থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আসামি ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতে হাজির হচ্ছেন না। এটা বিচার বিঘ্নিত ও বিলম্বিত করতে পারে।’ এ সময় সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, তিনি অসুস্থ। তার পক্ষে আদালতে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ বলেছে, তিনি অনিচ্ছুক। তিনি আমাদের বলেছেন, অন্য আসামিদের যুক্তি-তর্ক তিনি শুনতে চান। তিনি আদালতে উপস্থিত থাকতে চান। তিনি সুস্থ হলে অবশ্যই আদালতে আসবেন। তার জামিন বৃদ্ধি করে দেন। তিনি সুস্থ হলে আদালতে আসবেন।’ খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বিচারককে বলেন, ‘আপনি তার জামিন বৃদ্ধি করে দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলেছে, খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী তার চিকিৎসা হোক।’ এ বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বাদানুবাদ চলে। এরপর বেলা ১টা ২০ পর্যন্ত শুনানি চলার পর বিচারক খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার চালানোর আদেশ দিলে আদালত বিরতিতে যায়। বেলা ২টার পর আবার আদালত বসলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে আসামিপক্ষের নতুন একটি আবেদনের ওপর মিনিট দশেক শুনানি হয়। আদেশে বিচারক কারাবিধি অনুযায়ী খালেদার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলেন। খালেদা জিয়ার মামলার বিচারের পাশাপাশি আশুরার তাজিয়া মিছিলের কারণে গতকাল সকাল থেকে পুরনো কারাগার এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়।

সর্বশেষ খবর