শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সেমিনার

বৈশ্বিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের আরও সক্রিয়তা প্রয়োজন

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা সংকট যাতে দীর্ঘস্থায়ী না হয় সেজন্য এর আশু সমাধান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে কাজ করতে হবে। যেহেতু এ সংকট বৈশ্বিক তাই বিশ্ব সম্প্রদায়কেই এর সমাধান করতে হবে। এজন্য বৈশ্বিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের আরও সক্রিয়তা প্রয়োজন আছে। গতকাল ঢাকায় রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এক সেমিনারে অংশ নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশ্লেষক এ মন্তব্য করেন। তবে সেমিনারে উপস্থিত পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানিয়েছেন, কূটনৈতিক  প্রচেষ্টার দিক থেকে বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে। রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিনে বেসরকারি থিঙ্কট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (আইক্ল্যাডস) আয়োজিত এ সেমিনারের শিরোনাম ছিল ‘রোহিঙ্গা সংকট : আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা’। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক শাফায়েত আহমেদ। আয়োজক সংস্থার চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমিরের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ছাড়াও বক্তব্য দেন ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ডেভরিম অজতুর্ক, কানাডার হাইকমিশনার বেনোই প্রিফনটেইন, সেফ দ্য চিলড্রেনের আবাসিক প্রতিনিধি মার্ক পিয়ার্স, আইসিআরসির ডেপুটি হেড ওয়াল্টার জিনটি, আইএলও কর্মকর্তা আসিফ মুনীর, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন (অব.), সাবেক পুলিশ পরিদর্শক নুরুল হুদা, সাংবাদিক মনজুরুল ইসলাম, ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিংস কমিটির আহ্বায়ক ডা. এম এ হাসান, নিরাপত্তা বিশ্লেষক আইক্ল্যাডসের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল আবদুর রশীদ (অব.) প্রমুখ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধে প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের আস্থা অর্জন ও সংকট সমাধানে বিশ্বকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশের আরও সক্রিয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো রোহিঙ্গা সংকটের রাজনৈতিক সমাধানে আহ্বান জানিয়ে বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের দায় মিয়ানমারের। এ সমস্যাও মিয়ানমারের। এতে বাংলাদেশের কোনো দায় নেই। তাই রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান করতে হবে মিয়ানমারকেই। এ নীতির ওপর ভিত্তি করে জাতিসংঘ সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সংকট সমাধানে কাজ করছে। তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ডেভরিম অজতুর্ক বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। এ সংকট সমাধানে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে তুরস্ক যে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। এ ছাড়া বিশ্ব সম্প্রদায়কে সংকট সমাধানের জন্য উদ্যোগী হতে প্রেসিডেন্ট এরদোগান বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি। কানাডার হাইকমিশনার বেনোই প্রিফনটেইন বলেন, রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের ভূমিকাকে সম্মান করে কানাডা। এ সংকট সমাধানে পশ্চিমা বিশ্বে কানাডা সক্রিয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংকটের শেষ পর্যন্ত কানাডা বাংলাদেশের পাশে থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন (অব.) বলেন, মিষ্টি কথায় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে না। কেননা এ সংকট এখন দুই বছরে পা দিয়েছে, তাই মিয়ানমারকে চাপ না দিলে সমাধান আসবে না।

সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, মিয়ানমারের বৌদ্ধরা যে কত নৃশংস কাজ করতে পারে, তা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। মিয়ানমারের বৌদ্ধদের নৃশংসতার মুখোশ উন্মোচন করা প্রয়োজন। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সরকার দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উভয় পর্যায়েই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতিক, কূটনীতিক, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, শিক্ষক, সাংবাদিক, গবেষক, অর্থনীতিবিদদের অংশগ্রহণে দীর্ঘ এ সেমিনার সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক মিথিলা ফারজানা এবং স্বাগত বক্তব্য দেন মেজর জেনারেল আবদুর রশীদ (অব.)।

সর্বশেষ খবর