রবিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সব বাধা কাটল থার্ড টার্মিনালের

নিজামুল হক বিপুল

সব বাধা কাটল থার্ড টার্মিনালের

অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। গত এপ্রিলে এ প্রকল্পের কাজ শুরুর কথা থাকলেও মামলার কারণে এতদিন ধরে ঝুলে ছিল এটি। শেষ পর্যন্ত মামলার নিষ্পত্তি হওয়ায় গত সপ্তাহেই প্রকল্পের নির্মাণকাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এখন এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই কাজ শুরু হবে বহুল প্রতীক্ষিত থার্ড টার্মিনালের নির্মাণকাজ। তবে বর্তমান সরকারের মেয়াদে কাজ শুরুর আর কোনো সম্ভাবনা নেই।

শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে তৃতীয় টার্মিনাল ভবনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এ সরকার। এরই অংশ হিসেবে ২০১৭ সালের ১১ জুন প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে বেবিচক। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— জাপানের নিপ্পন কায়ো ও ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট গ্লোবাল, সিঙ্গাপুরের সিপিজি কনসালট্যান্ট ও বাংলাদেশের ডিজাইন কনসালট্যান্টস লিমিটেড। ওই সময় বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা বর্তমান সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জানান, ২০১৮ সালের এপ্রিলে থার্ড টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হবে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের সফট ওপেনিং এবং ২০২১ সালের এপ্রিলে এর নির্মাণকাজ শেষ হবে। ওই সময় বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন আরও জানান, বিদ্যমান বিমানবন্দরের যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি ও কার্গো হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি ক্রমেই কমে আসছে। যার ফলে কার্গোজট নিত্য লেগে আছে। আর চলতি বছরে যাত্রী ক্যাপাসিটিও শেষ হয়ে যাবে। এই চিন্তা থেকেই শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরের যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে ৮০ লাখ এবং কার্গো হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি ২ লাখ টন করা হবে। তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্প  হাতে নিয়েছে সরকার। থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের পর শাহজালালে যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্ষমতা বছরে ২ কোটি এবং কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা বছরে ৫ লাখ টনে উন্নীত হবে। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং সিভিল এভিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জুনে চুক্তির পর চুক্তিবদ্ধ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সমীক্ষা প্রতিবেদন ইতিমধ্যেই জমা দিয়েছে। টার্মিনালের বিস্তারিত ডিজাইন ও মূল নির্মাণকাজের দরপত্রের খসড়াও তৈরি করেছে তারা। কিন্তু বিমানবন্দরের ভিতরে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিশেষ করে বেঙ্গল এভিয়েশনের হ্যাঙ্গারসহ আরও কয়েকটি হেলিকপ্টার পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা রয়েছে। পদ্মা অয়েল ডিপোসহ একাধিক হেলিকপ্টার সেবাপ্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘমেয়াদে লিজ দেওয়া হয়েছে। থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ করতে হলে এসব প্রতিষ্ঠানের স্থাপনাসহ বর্তমান কার্গো ভিলেজ, ভিভিআইপি কমপ্লেক্সসহ বেশকিছু অবকাঠামো অপসারণ করতে হবে। এগুলো অপসারণ করতে গেলেই বিপত্তি বাধে। একাধিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনা সরানোর বদলে আদালতে মামলা ঠুকে দেয়। ফলে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। যার ফলে ইচ্ছা থাকলেও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের জন্য কোনোরকম দরপত্র আহ্বান করতে পারেনি। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানিয়েছে, চলতি মাসের শুরুর দিকে এসব মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। সিভিল এভিয়েশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, প্রকল্পে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ৫৩টি পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল। জাইকার সেই পর্যবেক্ষণগুলো ইতিমধ্যে সমাধান হয়ে গেছে। মামলাও শেষ হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের জন্য গত সপ্তাহেই দরপত্র আহ্বান করেছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। মন্ত্রণালয় ও সিভিল এভিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে তৃতীয় টার্মিনাল ভবনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ১৩ হাজার ৬১০ কোটি ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাইকা। থার্ড টার্মিনাল ভবনের আয়তন হবে ২ লাখ ২৬ হাজার বর্গমিটার। এ টার্মিনাল ভবন তৈরি করতে গিয়ে নতুন করে নির্মাণ করতে হবে কার্গো ভিলেজ। তার আয়তন হবে ৪১ হাজার ২০০ বর্গমিটার। ভাঙতে হবে ভিভিআইপি কমপ্লেক্স। নতুন কমপ্লেক্সের আয়তন হবে ৫ হাজার ৯০০ বর্গমিটার। পার্কিং অ্যাপ্রোন রাখা হয়েছে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। এ ছাড়া র‌্যাপিড এক্সিট অ্যান্ড কানেকটিং ট্যাক্সিওয়ে ও টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে বিমানবন্দর মূল সড়কের সংযোগ তৈরি করা হবে।

নতুন টার্মিনাল থেকে বর্তমান ভিভিআইপি গেটের বিপরীতে নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে একটি সাবওয়ে (আন্ডারপাস)। এ সাবওয়ের মাধ্যমে তৃতীয় টার্মিনাল থেকে যাত্রীরা গাড়ি নিয়ে সরাসরি চলে যেতে পারবেন এক্সপ্রেসওয়েতে। এতে সময় বাঁচবে, যানজটেও পড়তে হবে না। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের বর্তমান অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল থেকে শুরু করে ক্যান্টনমেন্টের কুর্মিটোলা গলফ মাঠের সীমানা পর্যন্ত, অর্থাৎ বিমানবন্দরের সীমানা যেখানে শেষ হয়েছে সেখান পর্যন্ত বিস্তৃত হবে তৃতীয় টার্মিনাল।

সর্বশেষ খবর