মঙ্গলবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সুদ-ঘুষখোর, খুনি-দুর্নীতিবাজ সবাই ঐক্য করেছে : প্রধানমন্ত্রী

রুহুল আমিন রাসেল ও কাজী শাহেদ, নিউইয়র্ক থেকে

সুদ-ঘুষখোর, খুনি-দুর্নীতিবাজ সবাই ঐক্য করেছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দলের ভিতরের বেইমানদের কারণেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ড হয়েছে। আর এখন সুদখোর, ঘুষখোর, খুনি ও দুর্নীতিবাজ সবাই এক জায়গায় হয়েছে। দুর্নীতিবাজদের নিয়ে এখন কামাল হোসেনরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়বেন। তিনি বলেন, জনগণ তাদের ভোট দিলে দেবে। এরা আগে দেশের সম্পদ লুটে খেয়েছে, আবার এরা ক্ষমতায় গেলে স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে মিলে দেশ ধ্বংস করবে। কাজেই জনগণকে তাদের সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে। জাতিসংঘের ৭৩তম অধিবেশনে যোগ দিতে এসে নিউইয়র্কের হিলটন হোটেলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার স্থানীয় সময় রাত ৮টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া ওই নাগরিক সংবর্ধনায় আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ। এতে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যারা পরিবর্তন করতে চায়, তারা দেশের উন্নয়ন করতে পারবে না। খাবে তো লুটপাট করে। আমার চাচা কামাল হোসেন সাহেব, তিনি এক হয়েছেন। তার সঙ্গে গেছে বিএনপির তারেক জিয়া ও মওদুদ আহমদ। তাদের সঙ্গে এক হয়েছে জিয়াউর রহমান ও এরশাদের সুনজরে থাকা মাহমুদুর রহমান মান্না। এরা জোট বেঁধেছে চোরদের নিয়ে। ছেলেও চোর, মাও চোর। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ড. কামাল হোসেন এবং অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সরকারবিরোধী জোটের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে নিয়ে তারা কীভাবে দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করবেন? তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া এবং তার পুত্র তারেক রহমান দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। তারা যে অর্থ বিদেশে পাচার করেছিলেন তা আমরা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এখন ড. কামাল হোসেন, ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং মাহমুদুর রহমান মান্না এই দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে নিয়েই লড়াইয়ে নেমেছেন।’ প্রধানমন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এবং বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ নতুন জোটকে সমর্থন দিয়েছেন কিন্তু অতীতে তারা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মইনুল হোসেন কাকরাইলের বাড়ির জমি দখল করেছিলেন, সে জায়গা নিয়ে মামলা আছে। সাজু হোসেন বনাম রাষ্ট্র। ওই মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত। আর ‘ভুয়া’ আমমোক্তারনামা তৈরি করে এক মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি নিজের ভাইয়ের নামে দখল নেওয়ার ঘটনায় বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ অভিযুক্ত। কিন্তু তৎকালীন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ তাকে ক্ষমা করে দিয়ে নিজের সরকারে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলা দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার প্রিয় ব্যক্তিরা তারই বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এতিমের টাকা মেরে দেওয়ার মামলায় শাস্তি হয়েছে। তারেক ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে। এসব দুর্নীতিবাজকে নিয়ে ড. কামাল হোসেন এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবেন। দেখেন, কারা এক হয়েছে। এই চরিত্রের লোকগুলো ক্ষমতায় এলে দেশ লুটেপুটে খেতে পারবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটালের ভালো দিক আছে, খারাপ দিকও আছে। এটা নিরাপদ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করেছি। যদিও এর বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, সাংবাদিকরা শুধু তাদের নিজেদের স্বার্থ দেখছে। সামাজিক সমস্যা যে সৃষ্টি হচ্ছে, সেটিতে সাংবাদিকদের দৃষ্টি নেই। সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই আমাদের এই ডিজিটাল আইন। এটা সাংবাদিকদেরও বোঝা উচিত। খালি নিজেদের স্বার্থ দেখলে চলবে না। সাংবাদিকদের সমাজের স্বার্থও দেখতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে প্রবাসীদের কাছে আমার অনুরোধ, আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কার বিজয় নিশ্চিত করুন। এখন আর অন্য কোনো চিন্তা নেই। এখন একটাই চিন্তা, সেটা হলো সমগ্র দলকে ঐক্যবদ্ধ করে, আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমার সততাই আমার শক্তি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই কারণে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করেছি। ড. ইউনূসের বন্ধু হিলারির অনুরোধে আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দেওয়া হয়। বিশ্বব্যাংকের সব তথ্য ভুয়া বলেছে কানাডার আদালত। রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। তাদের খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি। সবরকম ব্যবস্থা তাদের জন্য করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রীর ৩ প্রস্তাব : এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান রোহিঙ্গা সংকট অবসানে বিশ্বনেতাদের সামনে তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তিন প্রস্তাবে বলেছেন, এক. মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আইন ও নীতি বাতিল এবং বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে। রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক স্থানান্তরিত করার প্রকৃত কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। দুই. মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নাগরিক সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে একটি ‘সেইফ জোন বা নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিন. জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সুপারিশের আলোকে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নৃশংসতার হাত থেকে বাঁচাতে হবে।

সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে শরণার্থী সংকট নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সভায় রোহিঙ্গা সংকটের ভুক্তভোগী দেশের সরকারপ্রধান হিসেবে এই প্রস্তাবনা বিশ্ব নেতাদের কাছে উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি।

সর্বশেষ খবর