মঙ্গলবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

খালেদার চিকিৎসার রিট শুনানি আজ

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আদালতে অনাস্থা দুই আসামির

নিজস্ব প্রতিবেদক

খালেদার চিকিৎসার রিট শুনানি আজ

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেশের বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের ওপর আজ শুনানির দিন নির্ধারণ করেছে হাই কোর্ট। আদালত বলে, ‘তাঁর (খালেদা জিয়া) চিকিৎসার বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই এ বিষয়ে মঙ্গলবার শুনানির দিন ধার্য রাখা হলো।’ গতকাল বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ দিন অ্যাটর্নি জেনারেল মামলাটির ওপর শুনানি করতে আদালতের কাছে সময়ের আবেদন করেন। কিন্তু এ বিষয়ে আপত্তি জানান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। কায়সার কামাল বলেন, ‘সরকার বেআইনিভাবে খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটক রেখেছে। তিনি সেখানে বিনা চিকিৎসায় রয়েছেন। চিকিৎসা পাওয়া তার সাংবিধানিক ও আইনগত অধিকার। সেই অধিকার থেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরকার তাকে বার বার বঞ্চিত করছে। এর প্রতিকার চেয়ে আমরা হাই কোর্টে একটি রিট দায়ের করেছি।’ এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর রিট আবেদনটি দায়েরের পর ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, রিটে বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার নির্দেশনা এবং এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে চিকিৎসা দাবি করে আসছেন তাঁর আইনজীবীরা।

বিচারকের প্রতি দুই আসামির অনাস্থা : জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন এ মামলার দুই আসামি। গতকাল আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে আইনজীবীরা ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের প্রতি এ অনাস্থা আবেদন দেন। আদালত ও বিচারক পরিবর্তনের জন্য হাই কোর্টে আবেদন করা হবে জানিয়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার শুনানি ২০ কার্যদিবস মুলতবির আবেদন করেন তারা। বিচারক আখতারুজ্জামান বিষয়টি শুনে মঙ্গলবার (আজ) আদেশের জন্য রেখেছেন। সেইসঙ্গে আসামি মুন্নার জামিন বাড়ানোর আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এদিন এ মামলার প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার আবেদন করলে বিচারক আগের মতোই কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে মামলাটির বিচার চলছে। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন তার দুই আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও সানাউল্লাহ মিয়া। জিয়াউল ইসলাম মুন্নার পক্ষে আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ও মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে আইনজীবী মো. আক্তারুজ্জামান শুনানি করেন। অন্যদিকে মামলার বাদী ও তদন্তকারী সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। এ ছাড়া ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন। আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর মামলার প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া মামলার মুলতবি চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে উল্লেখ করেন, খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাকে মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার আবেদন করা হয়। এ সময় খালেদা জিয়ার জামিন বৃদ্ধির আরেকটি আবেদনও করা হয়। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করে খালেদা জিয়াকে জেল কোড অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন এবং জামিন বৃদ্ধি করেন। অন্যদিকে আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে মামলার কার্যক্রম মুলতবি চেয়ে আবেদন করেন তাদের আইনজীবী। আবেদনে বলা হয়, গত ২০ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে মামলা চলবে বলে আদালত আদেশ দেয় যা আইনসম্মত হয়নি। এতে মামলা পরিচালনায় কোরাম সংকট হবে। তাই আমরা এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব এবং দুই আসামির জামিন আবেদন করছি। এদিকে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল মামলার যুক্তি উপস্থাপন করার আবেদন করেন। কাজল বলেন, আসামিপক্ষ যদি যুক্তি উপস্থাপন না করে তাহলে রায়ের জন্য দিন ধার্য করা হোক। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত দুই আসামির মামলার কার্যক্রম মুলতবির আবেদন নামঞ্জুর করে। এ সময় মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আদালতের প্রতি অনাস্থার আবেদন দেন। এ সময় অনাস্থার আবেদন দেওয়া হবে কিনা সে প্রসঙ্গে আসামি মনিরুল ইসলাম খানের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ চান আইনজীবী আক্তারুজ্জামানও। বিচারক সেই সুযোগ নাকচ করলে আইনজীবী আক্তারুজ্জামান উচ্চৈঃস্বরে অনাস্থা আছে কিনা জানতে চান মনিরুলের কাছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের দিক থেকে হট্টগোলের মধ্যেই অনাস্থার আবেদন জমা দেন আক্তারুজ্জামান। এরপর আইনজীবী কাজল আদালতকে বলেন, উনারা জামিন চাইবেন, আবার অনাস্থার আবেদন করবেন, তা হতে পারে না। আপনি জামিন নামঞ্জুর করে দেন। আর আদালতের কার্যক্রম বন্ধ করতেও আপনি বাধ্য নন। তখন অনাস্থার আবেদনের বিষয়ে আদেশ দিতে মঙ্গলবার দিন ধার্য করে জিয়াউল হক মুন্নাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে এজলাস ছাড়েন বিচারক। এ মামলার কার্যক্রম চলছে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভিতরে বসানো পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে। এ কারাগারেই আরেকটি ভবনে গত ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দী জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ‘অসুস্থতার কারণে’ তাকে গত সাত মাসে একবারও আদালতে হাজির করতে না পারায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ করতে সরকারের নির্দেশে সেপ্টেম্বরের শুরুতে আদালত স্থানান্তর করা হয় কারাগারের ভিতরে। কিন্তু তার পরও খালেদাকে আদালতে আনতে না পেরে ২০ সেপ্টেম্বর তার অনুপস্থিতিতেই বিচার চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেন বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান। সেদিন এ মামলার অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক শুনানি আবার শুরু করার জন্য ২৪, ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর তারিখ রেখে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুনানির সময় ঠিক করে দিয়েছিলেন বিচারক। সে অনুযায়ী গতকাল আদালত বসলেও আসামিপক্ষে বিভিন্ন আবেদনের ওপর আলোচনায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন আর শুরু হয়নি।

সর্বশেষ খবর