বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঢাকায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি আওয়ামী লীগ বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাস আগেই গরম হতে শুরু করেছে রাজপথ। মাঠ দখলে নিতে শুরু হয়েছে পাল্টাপাল্টি মহড়া। ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সমাবেশ করতে চায় ক্ষমতাসীন ১৪ দল। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি দুই দিন পিছিয়ে দিয়ে একই দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করবে বিএনপি। দুই দলই সাংগঠনিক শক্তি দেখাতে চায় ওই দিন। পাল্টাপাল্টি ঘোষণায় রাজনীতিতে ঝড়ের পূর্বাভাস দেখছেন বিশ্লেষকরা।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকার রাজপথ কাউকে দখল নিতে দেবে না আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের পূর্বাপর অভিজ্ঞতায় একাদশেও মাঠ দখলে রাখার সব ধরনের কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা দখলের ঘোষণা দিয়েছে ১৪ দল। ওই দিন রাজধানীতে বড় ধরনের জমায়েত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করা হয়েছে। ঢাকার পাশের জেলা থেকেও নেতা-কর্মীরা আসবেন রাজধানীতে। অন্যদিকে সরকারের বিরুদ্ধে এখন থেকেই মাঠে নামতে চায় মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। এজন্য ২৯ সেপ্টেম্বর জনসভায় ব্যাপক জমায়েত করে সরকারকে তাদের সাংগঠনিক শক্তির জানান দিয়ে ১ অক্টোবর থেকে সরকার পতনের আন্দোলন নিয়ে মাঠে থাকবে তারা। সরকার ও দলের নীতিনির্ধারক সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের নামে কাউকে বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হবে না। কারণ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজধানীতে বিএনপি মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশের নামে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, বিশৃঙ্খলা করেছিল। এবার যাতে ও রকম কিছু ঘটাতে না পারে সেজন্য সতর্ক রয়েছে সরকারের নীতিনির্ধারকরা। ২৯ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সমাবেশের ডাক দিয়েছে। একই দিন সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির এ সমাবেশ ২৭ সেপ্টেম্বর করার কথা ছিল। দুই দিন পিছিয়ে সমাবেশ করার ঘোষণাকে ‘পায়ে পাড়া দিয়ে বিবাদ’-এর সঙ্গে তুলনা করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তারা বলছেন, ১৪ দলের কর্মসূচি পূর্বনির্ধারিত। দুই দিন পিছিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, বিএনপি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ চায় না। তারা নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্ট করতে চায়। কিন্তু ওই দিন কোনো অপশক্তিকে মাঠে নামতে দেওয়া হবে না। গতকাল কেন্দ্রীয় ১৪ দলের এক সভায় সংগঠনের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ১৪ দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পাড়া-মহল্লায় আপনারা প্রস্তুত থাকবেন। ওই অপশক্তি যেন মাঠে নামতে না পারে। ওদের মাঠে প্রতিহত করবেন, রাস্তায় প্রতিহত করবেন। আগে থেকেই ঢাকা দখলে ছিল, ভবিষ্যতেও ঢাকা আমাদের দখলে থাকবে।

 শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশ শেখ হাসিনার দখলে থাকবে। তিনি বলেন, আগামী একটি মাস আপনাদের কোনো কাজ নেই। ১৪ দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পাড়া-মহল্লায় আপনারা সজাগ থাকবেন। কোনো চক্রান্ত-নৈরাজ্য হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ইনশা আল্লাহ আমরা প্রতিহত করব।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, দেশে যখনই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসে, তখনই বিএনপি ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে। কারণ সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটে ক্ষমতায় আসার মতো সুযোগ ও জনপ্রিয়তা তাদের নেই। তাই তারা দেশে-বিদেশে নানামুখী চক্রান্ত করে। এখন ‘ছোট দলের বড় নেতা’দের সঙ্গে ঐক্য করে সরকার পতনের স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু দেশের জনগণ তাদের সুযোগ দেবে না। অতীতেও জনগণ বিএনপির আন্দোলনে সাড়া দেয়নি, এবারও দেবে না। কারণ তাদের বড় নেতাদের জনপ্রিয়তা শূন্য, ভোট শূন্য; শূন্য প্লাস শূন্য ইকুয়াল টু শূন্যই হয় অর্থাৎ জিরো প্লাস জিরো সমান জিরোই হয়। তাদের সরকার পতনের আন্দোলনের নতুন খোয়াব কখনো বাস্তবায়ন হবে না।

‘ঢাকা যার রাজপথ তার’ এ নীতিতে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে ঢাকার রাজপথ দখলে ছিল ক্ষমতাসীনদের। একাদশের আগে রাজধানী বিএনপিকে দখলে নিতে দেবে না শাসক দল। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘১৪ দল অনেক আগেই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এখন দুই দিন পিছিয়ে বিএনপি কর্মসূচি ঘোষণা করল। তারা তাদের মতো কর্মসূচি করবে, আমরা আমাদের মতো কর্মসূচি পালন করব। সরকারি দল হিসেবে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া হবে। কিন্তু যদি কর্মসূচির নামে কোনো ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি করতে চায় তাহলে উচিত জবাব দেওয়া হবে।’

এদিকে রাজধানীর নয়াপল্টন বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি জনসভার যে ঘোষণা দিয়েছিল তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ২৯ সেপ্টেম্বর শনিবার বেলা ২টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ জনসভা করতে চায় দলটি। গতকাল সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপির উদ্যোগে ২৭ সেপ্টেম্বরের (বৃহস্পতিবার) পরিবর্তে ২৯ সেপ্টেম্বর (শনিবার) বেলা ২টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা হবে।

এদিকে ঘরে বসে না থেকে ‘সরকার পতনের আন্দোলন’-এর জন্য ১ অক্টোবর থেকে নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে এবং আগামী নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমরা এ সরকারকে অপসারণ করব। শান্তিপূর্ণভাবে ভোটের মাধ্যমে, কোনো ভায়োলেন্সের মাধ্যমে নয়।

সর্বশেষ খবর