বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সরকার চায় ভোটে আসুক সব দল : প্রধানমন্ত্রী

মিয়ানমারেও রোহিঙ্গা শিশুদের সুরক্ষায় বিনিয়োগের আহ্বান

রুহুল আমিন রাসেল ও কাজী শাহেদ, নিউইয়র্ক

সরকার চায় ভোটে আসুক সব দল : প্রধানমন্ত্রী

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ বিষয়ক মন্ত্রী জেরেমি হান্ট সোমবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক জানান, জাতিসংঘ সদর দফতরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক কক্ষে জেরেমি হান্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্র সচিব এ সময় জানান, বৈঠকে আগামী নির্বাচন সম্পর্কে বলতে গিয়ে জেরেমি হান্ট বলেন, তারা বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটি অংশগ্রহণমূলক অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ব্রিটিশ মন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এ বৈঠকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে সমস্যাটা কোথায়, তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান জেরেমি হান্ট। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চুক্তি হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, চুক্তি করলেও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। মিয়ানমারে গণহত্যা চলছে বলে অভিযোগ আছে, এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া উচিত হবে কিনা, তা জানতে চান জেরেমি হান্ট।

শান্তি এখনো অধরা : জাতিসংঘ সদর দফতরে নেলসন ম্যান্ডেলা শান্তি সম্মেলনে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্ব শান্তির জন্য বিশ্বনেতাদের সব বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি করতে হবে। শান্তি এখনো অধরা, তাই সব পরিস্থিতিতে দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলতে হবে।

সোমবার নিউইয়র্ক সময় সকালে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা বাড়াতে হবে, সহনশীলতাকে উৎসাহিত করতে হবে। বৈষম্য ও শোষণ থেকে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে হবে। সন্ত্রাসবাদের মতো বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলায় সন্ত্রাসীদের অর্থ ও অস্ত্রের সরবরাহ বন্ধের জন্য বিশ্বনেতাদের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করুন। যে কোনো পরিস্থিতিতে মানবাধিকার উন্নয়নে ও সুরক্ষার জন্য শান্তি ও অহিংসার সংস্কৃতির চর্চা করুন। মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা, যার জন্য ম্যান্ডেলার মতো নেতারা লড়াই করেছিলেন, তা এখনো সুরক্ষিত নয়।

রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষায় বিনিয়োগ করুন : রাখাইনে ফিরে যাওয়ার পর রোহিঙ্গা শিশুরা যাতে আগের মতো শিক্ষাসহ অন্যান্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না থাকে, সে জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ সদর দফতরে ‘ইনভেস্টমেন্ট ফর এডুকেশন অব উইমেন অ্যান্ড গার্ল’ শীর্ষক এক আলোচনায় বাংলাদেশের সরকারপ্রধান এ আহ্বান জানান।

জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা হচ্ছে : দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাসের পর এবার জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সংস্থা প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়াধীন থাকার কথা জাতিসংঘকে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা অপর বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে শেখার আশা করি।’ তিনি বিশ্বনেতাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারের ঝুঁকি বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের অবশ্যই আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও সুলভ সাইবার বিশ্ব গঠনের জোরালো রাজনৈতিক সংকল্প ব্যক্ত করা উচিত।’ গতকাল (মঙ্গলবার) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ১২টায় জাতিসংঘ নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক দফতর (ইউএনওডিএ) ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন যৌথভাবে আয়োজিত ‘সাইবার নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের সেমিনারে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতিসংঘের আন্ডারসেক্রেটারি জেনারেল ও নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক প্রতিনিধি ইজুমি নাকামিত্সু, সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণাণ, এস্তোনিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী পল টিসালু এবং জাপানের সাইবার পলিসি বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওতাকাও। আইসিটি ফর পিসের সিনিয়র অ্যাডভাইজর এনিকেন টিকের সঞ্চালনায় সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, ইউএনওআইসিটির গ্লোবাল সার্ভিস ডিভিশনের ডিরেক্টর সালেম আভান এবং মাইক্রোসফটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড পলিসি বিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর অ্যাঞ্জেলা ম্যাককেইও। সমাপনী বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বিশ্বকে অধিকতর নিরাপদ করে তুলতে জাতিসংঘ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া তথ্যের নিরাপত্তা বিধানে নীতিমালা প্রণয়নের কার্যক্রম অব্যাহত থাকা দরকার। শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছু দেশ আইসিটিকে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের বিষয়ে কাজ করছে। সন্ত্রাসী ও সহিংস উগ্রবাদীরা এটি তাদের বিষাক্ত বক্তব্য প্রচারে ব্যবহার করছে। আইসিটি খাতে আমাদের কষ্টার্জিত সাফল্যকে নিরাপদ রাখা প্রয়োজন।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০ বছর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার প্রথম মেয়াদে আমি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে শান্তির সংস্কৃতির ধারণা উপস্থাপন করেছিলাম। দায়িত্ব পালনের তৃতীয় মেয়াদের শেষ দিকে এসে আমি জাতিসংঘ এবং অন্য সব স্থানে সাইবার নিরাপত্তা সংস্কৃতি প্রসারে বাংলাদেশের সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে জাতিসংঘের একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন এর গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হতে পারে।’

সর্বশেষ খবর