বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যমন্ত্রী বৈঠক

অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তিতে ঐকমত্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়তা বাড়াতে একটি ব্যাপকভিত্তিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট বা সিপা) স্বাক্ষরে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে (ডব্লিউটিও) আরও শক্তিশালী করার বিষয়েও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায় দেশ দুটি। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও ভারতের পক্ষে দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী সুরেশ প্রভু নেতৃত্ব দেন। শেষে দুই মন্ত্রী সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। যৌথ ব্রিফিংয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার ফলে ভারত আমাদের যে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দিচ্ছে তা ২০২৭ সাল পর্যন্ত পাওয়া যাবে। তার পরও যাতে এ সুবিধা অব্যাহত থাকে সেজন্য আমরা কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ চুক্তির বিষয়ে একমত হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে শুল্কসুবিধা পেতে যেমন “জিএসপি প্লাস” সুবিধার প্রস্তাব দিয়েছি, ভারতের এ চুক্তিও ঠিক সে রকম।’

প্রকৃতপক্ষে দুই দেশের মধ্যে আর কোনো দ্বিপক্ষীয় সমস্যা নেই— এমন মন্তব্য করে তোফায়েল বলেন, ‘এখন আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক চমৎকার। দুই দেশের মধ্যে ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্য হচ্ছে। যদিও এটা ভারতের পক্ষে তবু ক্ষতি নেই। কারণ আমরা আমাদের প্রয়োজনেই ভারতের কাছ থেকে বেশি আমদানি করি।’ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী সুরেশ প্রভু বলেন, এটা যেমন আধুনিক তেমনই বাস্তবসম্মত। কয়েক বছরের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে। তখন দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা ও বাণিজ্য বাড়াতে নতুন দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রয়োজন হবে। দুই দেশের জাতীয় স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে উভয়ে যাতে উপকৃত হয় সেই নীতিতেই চুক্তিটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান তিনি। পর্যটন ও সেবা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে দুই দেশের যৌথভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে সুরেশ প্রভু বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে আরও বেশি কর্মসংস্থান, আরও বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উন্নয়ন এবং আরও বেশি টেকসই বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে আগ্রহী। সেজন্য পর্যটন ও সেবা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ অঞ্চল সুন্দরবন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অবস্থিত উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি পর্যটনের বিকাশে যৌথভাবে কাজ করি তবে এটি দ্রুত কর্মসংস্থান বাড়াতে সহায়তা করবে।’ ডব্লিউটিওকে শক্তিশালী করার বিষয়ে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাণিজ্য এখন কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাও এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। তবে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের স্বার্থেই ডব্লিউটিওকে কার্যকর রাখা দরকার। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সংস্থাটির মূলনীতি ঠিক রেখে এটিকে আরও কার্যকরের জন্য দুই দেশ যৌথভাবে কাজ করব।’

পরে দ্বিপক্ষীয় এ বৈঠক নিয়ে বিকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি যৌথ ঘোষণাপত্র পাঠানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, দেশের উদ্যোক্তা, করপোরেট ব্যক্তিত্ব ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি সিইও ফোরাম গঠন এবং খুব শিগগিরই সেই ফোরামের মধ্যে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। আগামী অক্টোবর অথবা নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠেয় যৌথ বিনিয়োগ ফোরামে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল অংশ নেবে। পাটপণ্যের ওপর ভারত কর্তৃক যে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কারোপ হয়েছে দুই দেশের পাট ব্যবসায়ীদেও বৈঠকের মাধ্যমে সে সমস্যা সমাধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। চামড়া, পাট, ওষুধ ও বস্ত্রশিল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে আলোচনা ও তথ্য আদান-প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত বন্দরে ট্রাকজট ছাড়াতে ১৫ অক্টোবর থেকে ওয়ান টাইম পুশের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশের ২১টি পণ্য ভারতে রপ্তানির ক্ষেত্রে বিএসটিআইর টেস্টিং রিপোর্ট গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে ১৫টি পণ্যের রিপোর্ট গ্রহণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৬টি পণ্যের রিপোর্ট গ্রহণ করতে ভারত সম্মত হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৬টি পণ্যের রিপোর্ট গ্রহণ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। দুই দেশের সীমান্তে ৪টি বর্ডার হাট চালু রয়েছে। আরও ৬টি বর্ডার হাট দ্রুত চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে শেরপুরের নাকুগাঁও ও ডালু সীমান্তে নির্মাণাধীন বর্ডার হাটটি আগামী মাসেই চালু হবে বলে জানানো হয় যৌথ ব্রিফিংয়ে। বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ও ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব শেফালী জুনিগা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর