শনিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

উদ্বোধনী জুটি ছিল অন্যরকম

ক্রীড়া প্রতিবেদক, দুবাই থেকে

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে শর্টমিড উইকেটে স্টিভ ওয়াহর সহজ ক্যাচ ফেলেছিলেন হার্শেল গিবস। ক্যাচটি ফেলে বিমর্ষ চিত্তে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিলেন প্রোটিয়াস ওপেনার। জীবন পেয়ে উদ্ভাসিত অসি অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ তখন হাসিমুখে নিচু স্বরে বলেছিলেন, ‘বিশ্বকাপ ট্রফিটাই ফেলে দিলে! বিশ্বকাপের ট্রফিটা জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। ১৯ বছর পর লর্ডস ফিরে আসে দুবাইয়ে। গতকাল এশিয়া কাপের ফাইনালে লিটন দাসের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন ভারতীয় লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল। লিটন তখন ব্যাট করছিলেন ৫২ রানে। ওই ক্যাচ মিসের পর ৩০ হাজার আসনের স্টেডিয়াম চুপসে যায় বেলুনের মতো। ভারত থেকে কাভার করতে আসা মিডিয়ার লোকজন বলতে শুরু করেন, চাহালের ক্যাচ মিসে এশিয়া কাপের ট্রফিটাও মিস হয়ে গেল! স্বপ্ন পূরণ করে বাংলাদেশ এশিয়া কাপের শিরোপা জিতল কি না, সেটা পরের বিষয়। কিন্তু ওই ক্যাচ মিসে গোটা বাংলাদেশকে সাঁঝবাতির হাজার রঙে রাঙিয়েছেন লিটন দাস। ভুবনেশ্বর, বুমরাহ, চাহাল, জাদেজাদের সব প্রতিরোধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে খেলেছেন অনবদ্য ইনিংস। তুলে নিয়েছেন কারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে ছাপিয়ে নতুন ক্রিকেট যুদ্ধের নাম এখন বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ। দুই দলের ম্যাচকে ঘিরে যে আবহের তৈরি হয়, সেটা কোনো অংশেই অ্যাশেজের চেয়ে পিছিয়ে নয়। বরং আবেগের লড়াইয়ে অন্য সবাইকে পেছনে ফেলছে যোজন যোজন। ভারতের বিপক্ষে এর আগেও ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। মুখোমুখি হয়েছে কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল এবং ফাইনালেও। কিন্তু এবারের ফাইনালের আবহ পেছনে ফেলেছে অন্য সবগুলোকে। প্রায় সাড়ে ছয় মাস আগে কলম্বোতে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে শেষ বলে হেরে বেদনায় নীল হয়েছিল গোটা বাংলাদেশ। এবার প্রতিশোধের মিশন দুবাইয়ে। যদিও সুপার ফোরের লড়াইয়ে বড় ব্যবধানে হেরেছিল টাইগাররা। কিন্তু গতকাল মুমিনুলকে বসিয়ে নাজমুল অপুকে নিয়ে একাদশ সাজানো হয়। শুধু তাই নয়, ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয় ব্যাটিং অর্ডারেও। ওপেনারদের টানা ব্যর্থতায় ৮ নম্বর পজিশন থেকে টেনে তুলে ওপেনার বানানো হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে। ৩২ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। কিন্তু ১৭ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো করতে নেমে আস্থা, বিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছেন দলকে। লিটনের সঙ্গে ওপেন করে ২০.৫ ওভারে ১২০ রানের জুটি গড়ে দলকে শক্ত ভিত দেন। কেদার যাদবের মামুলি অফ স্পিনে শর্ট পয়েন্টে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মিরাজ। মিরাজের বিদায়ের পরও লিটন ব্যাটিং করেছেন হিমালয়সম দৃঢ়তায়। দুজনে শুধু আস্থাই ফেরাননি গোটা দলের, ভারতের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে গড়েছেন রেকর্ডও। দুজনের ১২০ রানের জুটি প্রথম উইকেটে ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৫ সালে বাইলেটারাল সিরিজের প্রথম ম্যাচেই তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার আরও আগ্রাসী ব্যাটিং করে ১৩.৪ ওভারে ১০২ রানের জুটি গড়েছিলেন। তামিম করেছিলেন ৬০ এবং সৌম্য ৫৪। ইনজুরিতে পড়ে খেলছেন না তামিম। সৌম্য খেলছেন। তবে ব্যাটিং অর্ডার অনেক পেছনে।

 উদ্বোধনী জুটিতে অবশ্য সবচেয়ে বেশি স্কোর ১৭০, শাহরিয়ার নাফিস ও মেহরাব জুনিয়রের জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। আসরের প্রথম ম্যাচ থেকেই ওপেন করছেন লিটন। কালই প্রথম মিরাজ। সেটা আবার আগের দিন কোচ, অধিনায়ক ও ম্যানেজারের সঙ্গে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তিনিই ঠিক করে দেন মিরাজের ওপেনের বিষয়টি। একই সঙ্গে লিটনকে অনুরোধ করেন সাবলীল ক্রিকেট খেলার। ম্যাচের আগের রাতে অবশ্য ওপেনে চমক থাকবে বলে জানিয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। কাল তার চমকে বাজিমাত। ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক। ৮ রানের ইনিংসটি আগামীর ইঙ্গিত দেয়নি তখন। কিন্তু সিরিজের পরের দুটো ম্যাচে ৩৪ ও ৩৬ রানের ইনিংস বলেছিল ভবিষ্যতে একজন তারকা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু শুরুর সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি। অভিষেক বছর ৯টি ওয়ানডে খেলার পর হারিয়ে যান। ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম্যান্স করে ফেরেন দলে। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে ফিরলেও আবার ব্যর্থ হন। তারপরও সুযোগ পান এশিয়া কাপে। কিন্তু গতকালের আগে আবার ব্যর্থ সবগুলো ম্যাচে। এর মধ্যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাস্ট উইন ম্যাচে ৪৩ বলে ৪১ রানের ইনিংস খেলে ফিরে আসার ইঙ্গিত দেন। অবশেষে ফাইনালে খেলেন বীরের মতো। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝেই বীরদর্পে ব্যাটিং করে তুলে নেন ১৮ ম্যাচ ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চার ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়ে ভারতীয় বোলারদের নাভিশ্বাস তুলে দেন।  লিটনের ব্যাটিং এবং মিরাজের দৃঢ়তায় আস্থা ফিরে পায় বাংলাদেশ। স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন এশিয়া কাপ জয়ের।

সর্বশেষ খবর