সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

রেলের হুইসেলে ঘুম ভাঙবে গোপালগঞ্জবাসীর

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

রেলের হুইসেলে ঘুম ভাঙবে গোপালগঞ্জবাসীর

দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে রেলের হুইসেলে ঘুম ভাঙতে যাচ্ছে গোপালগঞ্জবাসীর। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের এ রেল সার্ভিস চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই উদ্বোধন করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এজন্য নবনির্মিত রেললাইনে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালিয়ে লাইন পরীক্ষার কাজও শেষ করা হয়েছে। এ খবরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে গোপালগঞ্জে। গোপালগঞ্জবাসী এখন দারুণভাবে উজ্জীবিত। কারণ এ রেল চলাচল শুরু হলে গোপালগঞ্জ তথা দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপন হবে। এতে করে গোপালগঞ্জ তথা দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া অতি স্বল্প খরচে ব্যবসায়ীরা তাদের মালামাল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করতে পারবেন। এতে সময় এবং অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে। মালামাল পরিবহন সহজ হলে পণ্যের দামও কমবে। পাশাপাশি এ রেল সংযোগ দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের মানুষের সঙ্গে সেতুবন্ধন তৈরি করবে। যে কোনো প্রয়োজনে এ এলাকার মানুষ  রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্বল্প খরচে যাতায়াত করতে পারবেন। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা সহজেই গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার জন্য যাতায়াত করতে পারবে। সবমিলে এ রেল সংযোগ যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী পরিদর্শক খন্দকার শহীদুল ইসলাম জানান, ১ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থেকে গোবরা পর্যন্ত ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইনটি নির্মিত হয়েছে। ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ নির্মাণ কাজ করেছে। ২০১৫ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং এ বছরের জুনে কাজ সম্পন্ন হয়। নবনির্মিত কাশিয়ানী থেকে গোপালগঞ্জ চর বয়রা পর্যন্ত নতুন রেল নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সেতু, কালভার্ট, রেলগেট-রেলক্রসিং, স্টেশন, ট্রেন চলাচলের সিগন্যালসহ সব কিছু এখন প্রস্তুত। উদ্বোধনের পর এ রেলপথে গোপালগঞ্জ থেকে রাজশাহী সরাসরি মেইল ট্রেন চলাচল করবে। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ফরিদপুর-রাজবাড়ী এবং গোপালগঞ্জ জেলার মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্পের আওতায় কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া পরিত্যক্ত রেললাইন পুনর্নির্মাণসহ কাশিয়ানী রেলস্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার সমপ্রসারিত রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প ২০১০ সালে সরকারিভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। অবশেষে সরকার সেই রেল চালুর পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করায় গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী, গোপালগঞ্জ সদর, টুঙ্গীপাড়া, চিতলমারী, মোল্লাহাট, নাজিরপুরসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। এ জন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার বলেন, ‘গোপালগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন  বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। রেল চলাচল শুরু হলে এ অঞ্চলের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রে উন্নয়নের প্রসার ঘটবে।

সর্বশেষ খবর