মঙ্গলবার, ২ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
সরকারি নির্দেশনা মানছে না ব্যাংকগুলো

বড় খেলাপিদের তালিকা টানাতে গড়িমসি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বড় ঋণখেলাপিদের হালনাগাদ তালিকা শাখায় শাখায় দৃশ্যমান স্থানে টানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দেওয়া হয়েছিল ২৭ দফা সুপারিশ, বলা হয়েছিল সেসব সুপারিশ কার্যকর করে যেন তিন মাস পর পর অর্থ মন্ত্রণালয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঠায়; এখন বড় খেলাপিদের তালিকা টানানোর সে নির্দেশনা তো মানছেই না ব্যাংকগুলো, উপরন্তু তারা অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঠাতেও গড়িমসি করছে।

বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ থেকে তিন দফা তাগিদপত্র পাঠানো হলেও কাজ হয়নি। সম্প্রতি আরেক দফা তাগিদপত্র পাঠানো হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। বলা হয়েছে, ‘কর্মশালায় গৃহীত ২৭টি সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে এবং প্রতি তিন মাস পর বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু অদ্যাবধি সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।’ এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংক অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঠালেও ঋণখেলাপিদের তালিকা টানানোর বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে। সরকারি একটি ব্যাংক এ-সংক্রান্ত অগ্রগতি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ‘এটি স্পর্শকাতর বিষয়। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করলে ব্যাংকের পক্ষে বিষয়টি বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।’

সরকারের সুপারিশ ছিল—বড় ঋণখেলাপিদের হালনাগাদ তালিকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যাংকের ওয়েবসাইট, নোটিস বোর্ড বা অন্যরূপ দৃশ্যমান স্থানে প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। ব্যাংকিং বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ‘রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের অবস্থা পর্যালোচনা : চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায়’ বিষয়ে গত বছর ২৬ আগস্ট কর্মশালা হয়। ওই কর্মশালা থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ যাচাই-বাছাই করে ২৭টি সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়, যার মধ্যে বড় ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশের বিষয়টিও ছিল। অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে সেই সুপারিশ পাঠানোর পরও ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন পাওয়া যাচ্ছে না। দু-একটি ব্যাংক দায়সারাভাবে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে, যা থেকে ২৭টি সুপারিশের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি পর্যালোচনা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশসহ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক তো কোনো আপত্তি জানায়নি। তাই সরকারের এসব নির্দেশনা মানতে কোনো ধরনের গড়িমসি করতে পারে না বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বরং যে ব্যাংকগুলো নির্দেশনা মানবে না তাদের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কঠোর হওয়া উচিত বলে মনে করেন সাবেক এই ব্যাংকার। প্রসঙ্গত, ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশ ছাড়াও ঋণপ্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ ও ঋণ অনুমোদনের বিদ্যমান নীতিমালা সংশোধন করা, সর্বোচ্চ তিন ধাপে ঋণপ্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণসহ অনুমোদন দেওয়া, খেলাপি ঋণ আদায়ে সফলতার জন্য প্রণোদনা এবং ব্যর্থতার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ, ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ণ, ঋণশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণকাঠামো জোরদার করা এবং অনলাইন ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ মোট ২৭টি সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে।

সর্বশেষ খবর