একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও ভোটের অলআউট প্রচারণায় মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অতি সম্প্রতি ভোটের বার্তা নিয়ে নির্বাচনী ট্রেন ও সড়ক পথেও কেন্দ্রীয় নেতারা ঘুরে এসেছেন দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ঢাকায় গণসংযোগের কাজ করছে চারটি টিম। এ মাসেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা পর্যায়ে উন্নয়নের বার্তা তুলে ধরে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে জনসভা করবেন। দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত ১ অক্টোবর থেকে ‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকুন, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করুন’— এই স্লোগান নিয়ে রাজধানীর অলিগলিসহ তৃণমূলে যাচ্ছেন নেতারা। একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত উন্নয়নের এ চিত্র তুলে ধরে মাঠে থাকবেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘উন্নয়ন বার্তা নিয়ে আওয়ামী লীগ মানুষের ঘরে ঘরে যাচ্ছে। আমরা বিগত সাড়ে নয় বছরে কী করেছি, আগামীতে কী করতে চাই দেশবাসীর কাছে সেগুলো তুলে ধরছি। একই সঙ্গে বিগত সময়ে বিএনপি-জামায়াতের উন্নয়ন আর বর্তমান সরকারের উন্নয়নের পার্থক্যগুলো তুলে ধরছি। গত ১ অক্টোবর থেকে চারটি টিমে ভাগ হয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ ীয় নেতারা রাজধানীতে এবং জেলা-উপজেলায় এমপি-মন্ত্রী ও জেলা-উপজেলার শীর্ষ নেতারা প্রচারণা চালাচ্ছেন। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব।’ সূত্রমতে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট বিপ্লব ঘটাতে দেশের উন্নয়ন প্রচারে গুরুত্ব দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা, নাশকতাও তুলে ধরা হচ্ছে। লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে হাট-বাজার ও মাঠেঘাটে। গত ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে ৭ দিনের বিশেষ কর্মসূচি। আওয়ামী লীগের কেন্দ ীয় টিম রাজধানীতে সকাল-বিকাল প্রচারণা চালাচ্ছে। জেলা-উপজেলায় স্থানীয় এমপি, নেতা-কর্মীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। রাজধানীতে সাত দিন প্রচারণা শেষ হলে ঢাকার বাইরে যাবেন কেন্দ ীয় নেতারা। তারা নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। তুলে ধরবেন সরকারের উন্নয়ন। প্রযুক্তিগত প্রচারণা আর তরুণ সমাজের জন্য নানা প্রতিশ্রুতিও থাকছে নির্বাচনী বার্তায়। দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত কয়েকটি সিটি নির্বাচনে সরকারের উন্নয়ন প্রচার করে সাফল্য এসেছে। জনগণের সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে পারলে বিজয় আসবে। সে কারণে উন্নয়ন প্রচারে জোর দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। এ প্রচারে এবার গ্রামাঞ্চলকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ অনুন্নত এলাকার মেঠো পথটিও আজকে পিচঢালাই করা হচ্ছে। বিদ্যুতের সুবিধার আওতায় ৯০ ভাগ এলাকা। ইউনিয়ন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট সুবিধা। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী ফোরামের নেতারা মনে করছেন, বর্তমান সরকার সাড়ে নয় বছরে যে উন্নয়ন করেছে, তার সঠিক চিত্র গ্রাম পর্যায়ে তুলে ধরতে পারলে আগামীতেও জনগণ নৌকাকে বেছে নেবে। সে কারণে আওয়ামী লীগ সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তার ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রচার করা হচ্ছে।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহ থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ ীয় নেতারা তৃণমূলের গ্রামগঞ্জে প্রচারণায় যাচ্ছেন। এতে প্রচার-প্রচারণা ছাড়াও অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হবে। পূর্বগঠিত সাংগঠনিক টিমের নেতারা সারা দেশ চষে বেড়াবেন। বিভাগীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন। পুরো প্রচারণাতেই অভিনবত্ব আর চমক থাকবে। তারা তিন মাধ্যমে প্রচারণা চালাবেন। ছাপা (মুদ্রিত), অডিও-ভিডিও সম্প্রচার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালাবেন সমানতালে। দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ভিডিও প্রচারণা। এতে তুলে ধরা হবে জাতীয় সংসদের আসনভিত্তিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র। বিলবোর্ডে দৃষ্টিনন্দন স্লোগান লিখে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করা হবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি এসব বিলবোর্ড ও পোস্টার-ব্যানারে বিএনপির বিগত শাসনামলের নানা চিত্র তুলে ধরা হবে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের শাসনামলে যুদ্ধাপরাধীর বিচার করা, জঙ্গি দমন, মানুষের আয় ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি, একটি বাড়ি একটি খামার, ডিজিটাল বাংলাদেশ, কমিউনিটি ক্লিনিক, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, নারীর ক্ষমতায়ন, সবার জন্য শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়নের বিষয় তুলে ধরা হবে।