চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৭ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে এজন্য আর্থিক খাতে কিছু সংস্কার আনার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। সেই সঙ্গে বলেছে, খেলাপি ঋণের কারণে আগামী বছরের বাজেট চাপের মুখে পড়বে। ফলে আর্থিক খাতের সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। গতকাল বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্থনীতির হালনাগাদ চালচিত্র (বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট) প্রকাশকালে এ তথ্য দিয়েছে সংস্থাটি। প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং রফতানি ও রেমিটেন্সের ইতিবাচক ধারায় বছর শেষে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখন ভালো অবস্থানে আছে। আমাদের জিডিপির পরিমাণ ৭ বা ৬ শতাংশ বড় কথা নয়, আমাদের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হবে। মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিম্নগামী। এটা ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দেশে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকে এর পরিমাণ ৪৮ শতাংশ। এতে বাংলাদেশে মূলধন ঘাটতি দেখা দেবে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। বিশাল পরিমাণ এই খেলাপি ঋণের কারণে আগামী বাজেটে চাপ আসবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। একইসঙ্গে বাজেটে চাপ মোকাবিলায় আর্থিক খাত সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, বাংলাদেশে মূলধন ঘাটতি মোকাবিলায় ব্যাংক ঋণের সুদহার কমানো, সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো ও রাজস্ব ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে রেমিটেন্স ধরে রাখতে হবে। তাছাড়া রফতানি ও ব্যক্তি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব বাধা আছে তা দূর করতে হবে। সরকার চলতি অর্থবছরের বাজেটে সাত দশমিক আট শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই হার ছিল সাত দশমিক ৮৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বরের শেষে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে এ বছর সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে। অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান ছাড়াও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। চিমিয়াও ফান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে। এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। এ জন্য আর্থিক খাতের বেশ কিছু ইস্যুতে সংস্কার আনা প্রয়োজন। অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর বলেন, আমাদের দেশে মেগা প্রকল্প সব ঋণের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক হতে হবে। এখন বিলিয়নের হিসাব চলছে কিন্তু আমরা চাই সবুজের সঙ্গে থাকতে, লালের সঙ্গে না। আমরা যেন অন্য দেশের মতো ঋণগ্রস্ত হয়ে না পড়ি এ বিষয়ে সব থেকে গুরুত্ব দিতে হবে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, প্রতিটি প্রকল্পে শুরু থেকে যা ব্যয় দেখানো হয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বহুগুণে এর বাজেট বেড়ে যায়। আমরা এখন ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের দিকে যাচ্ছি। আমরা মধ্যম আয়ের কথা বলছি, অথচ আমাদের দেশে এখনো ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ দরিদ্র। তাদের উন্নয়নে কাজ করতে হবে।