বুধবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নারীর ক্ষমতায়নে এটা নতুন অর্জন

জয়শ্রী ভাদুড়ী

নারীর ক্ষমতায়নে এটা নতুন অর্জন

প্রথম নারী মেজর জেনারেল সুসানে গীতি

‘যে কোনো নতুন কিছু শুরু করার মধ্যে একটা অন্য রকম আনন্দ থাকে। আমাকে দিয়ে যখন এই যাত্রা শুরু হয়, তখন সেই অনুভূতি সত্যি অভাবনীয়। মেজর জেনারেল পদে প্রথম নারী হিসেবে পদোন্নতি নারীর ক্ষমতায়নে নতুন অর্জন হিসেবে যুক্ত হলো। কাজের ক্ষেত্রে কোনো রকম ছাড় না দিয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তা করার চেষ্টা করেছি। স্বপ্নগুলো সময়ের স্রোতে এখন সত্যি হয়ে ধরা দিচ্ছে।’ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের স্বপ্ন আর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন সশস্ত্র বাহিনীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম নারী মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি পাওয়া ডা. সুসানে গীতি।

মেজর জেনারেল সুসানে গীতি ১৯৮৫ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নারী ডাক্তার হিসেবে ক্যাপ্টেন পদবিতে যোগ দেন। সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা কীভাবে তৈরি হলো—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর সুশৃঙ্খল জীবন আমার আগে থেকেই পছন্দ ছিল। কর্তব্যবোধ, দেশপ্রেম আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার সময় আমাদের পরিচালক ছিলেন একজন সেনা কর্মকর্তা। তিনি অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে কলেজ পরিচালনা করতেন। প্রতিটা কাজ গুছিয়ে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতেন তিনি। এ বিষয়গুলো আমার মধ্যে সেনাবাহিনীর প্রতি আগ্রহবোধ আরও বাড়িয়ে দেয়। তখন ইন্টার্নশিপের আবেদন করি। পরবর্তী সময়ে নিজের পছন্দের জায়গা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আমার কাজের সুযোগ তৈরি হয়।’ নারীদের বর্তমান অবস্থান বিষয়ে মেজর জেনারেল ডা. সুসানে গীতি বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে এগিয়ে আসছে বাংলাদেশের নারীরা। শিক্ষিত মা শিক্ষিত সমাজ উপহার দেবে। শিক্ষিত সমাজের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাবে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি। সশস্ত্র বাহিনীতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। তরুণ শিক্ষিত নারীরা এগিয়ে আসছে। তাদের লেফটেন্যান্ট কর্নেল হওয়ার সুযোগ ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। তারাও সেনাবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতি পেয়ে একসময় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের এই অগ্রযাত্রায় আমরা গর্বিত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নে অর্জিত হয়েছে বিস্ময়কর সাফল্য। জাতীয় সংসদের স্পিকার একজন নারী। প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে নারীরা নিজেদের অবস্থান তৈরি করছেন।’ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে দায়িত্ব পালনকালে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশকে সবাই ভীষণ পছন্দ করে। কারণ আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেন। প্রতি বছর সেখানে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। ব্যানমেডে আমরা মেডিকেল কোর থেকে প্রথম গিয়েছিলাম। একটা কন্টিনজেন্টে নারী হিসেবে আমরা প্রথম গিয়েছিলাম। ব্যানমেডে ওরা বাংলাদেশকে খুব পছন্দ করত। আমরা একটা ফ্রি প্রাইভেট ক্লিনিক পরিচালনা করতাম। গ্রামে গ্রামে গিয়ে ওদের বিভিন্ন অসুখে আমরা সেবা দিতাম। বিপদে-আপদে আমাদের পাশে পাওয়ায় বাংলাদেশ ওদের কাছে ভালোবাসার আরেক নাম। তারা আমাদের এত ভালোবাসত যে আমাদের কাছে এসে বাংলা শিখে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তা পরিবেশন করত। বাংলায় গান গাইত তারা।’ নতুন প্রজন্মের জন্য পরামর্শ জানতে চাইলে ডা. সুসানে গীতি বলেন, ‘বি ডেডিকেটেড টু ইওর সার্ভিস। মানুষের সেবা হওয়া উচিত মূল লক্ষ্য। চিকিৎসক হিসেবে বলব, রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।’ * বিস্তারিত পড়ুন ‘শনিবারের সকাল’-এ

সর্বশেষ খবর