বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিদেশি নয়, জনগণের শক্তিতেই বিশ্বাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদেশি নয়, জনগণের শক্তিতেই বিশ্বাসী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কারও মুখাপেক্ষী হয়ে রাজনীতি করি না। আমার জোর হচ্ছে দেশের জনগণ। জনগণ আমাকে চায় কিনা, জনগণ আমাকে ভোট দেবে কিনা, তা-ই বিবেচ্য বিষয় আমার কাছে। যদি বলেন, কারও সহযোগিতা নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে হবে, তাহলে আমি বলব আমার ক্ষমতায় না থাকাই ভালো।

গতকাল বিকালে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর যোগদান শেষে দেশে ফিরে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। লিখিত বক্তব্যে ঘণ্টাব্যাপী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন  তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বিরোধীদলীয় একজন নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগকে পরাস্ত করতে তারা প্রয়োজনে শয়তানের সঙ্গেও ঐক্য করবেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাও এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারত যেন আওয়ামী লীগকে সমর্থন না দেয়। এ প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কি আপনাকে কিছু বলেছেন? জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধী দল থাকবেই। যারা শয়তানের সঙ্গে হাত মেলাবে, তাদের সমর্থন দিতে দেশবাসী প্রস্তুত কিনা, তাও দেখতে হবে। নিশ্চয়ই এই দেশের মানুষ শয়তান চায় না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রথম একজন সংখ্যালঘু থেকে আমরা প্রধান বিচারপতি বানিয়েছিলাম। তিনি সেই পদটিকে সেভাবে সম্মানজনকভাবে ধরে রাখতে পারেননি। এখানে আমাদের কিছু করার ছিল না। শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি অনুরোধ করেছেন আমাকে সমর্থন না দিতে। এ রকম তিনি কেন, সবাই করেছে। এই যে বিএনপি যাচ্ছে (ভারতে), সবাই যাচ্ছে (ভারতে), গিয়ে অনুরোধ করে আসছে। তিনি বলেন, ২০০১ সালে আমেরিকাকে গ্যাস দেওয়ার গোপন চুক্তিতে সম্মতি না দেওয়ায় সরকার গঠন করতে পারিনি। গ্যাস দিতে চাইলে আমি ক্ষমতায় আসতাম। দেশের সম্পদ বিক্রি করে আমার ক্ষমতায় থাকার দরকার নেই। আমার দেশের মানুষের শক্তিটা হচ্ছে আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। সেই শক্তি যদি না থাকে, আর দেশের মানুষ যদি না চায়, কে আমাকে ক্ষমতায় এনে বসাবে? ওই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রাজনীতি আমি করি না।

বিশ্ব নেতারা চান আবার ক্ষমতায় আসি : প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল, আপনি যখন জাতিসংঘে ছিলেন, তার কয়েক দিন আগে বিরোধী দলের কয়েকজন নেতা সেখানে গিয়েছিলেন নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আলাপ করতে। জাতিসংঘের কেউ বা বিশ্বনেতারা কি কোনো পরামর্শ দিয়েছেন নির্বাচন নিয়ে? জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,  দেশের রাজনীতি নিয়ে বিশ্ব নেতারা কোনো পরামর্শ দেননি। এ সময় গণভবনে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা হাততালি দিলে তিনি বলেন, তালি বাজানোর কিছু নেই। জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘে গিয়েছি, ওখানে যতজন হেড অব স্টেট, হেড অব দ্য গভর্নমেন্ট এবং যতজনের সঙ্গে দেখা হয়েছে, প্রত্যেকে কিন্তু আমাকে কেবল একটা মেসেজই দিয়েছেন, আমরা কেবল আপনাকেই দেখতে চাই। আপনি ক্ষমতায় আসেন, সেটা চাই। আমি তখন বলিনি, আপনারা আসেন, আমাকে ক্ষমতায় বসিয়ে যান। বলেছি, দেশের মানুষ যদি ভোট দেয়, তাহলে আছি, না দিলে নাই। তাহলে এটাই আপনাদের সঙ্গে আমার শেষ দেখা।’ 

মিথ্যা তথ্য না দিলে সাংবাদিকদের উদ্বেগের কিছু নেই : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব সাংবাদিক মিথ্যা কথা লেখেন না, তাদের উদ্বেগের কিছু নেই। উদ্বিগ্ন তারা বেশি হবেন, যারা আমাদের বিরুদ্ধে একটার পর একটা লেখা তৈরি করে আছেন, স্তূপ সাজিয়ে বসে আছেন। কখন ছাড়বেন তার অপেক্ষায় আছেন তারা। তারা এখনো মাঝেমধ্যে আমাদের দলের নেতা-এমপিদেরর বিরুদ্ধে লিখছেন। তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে কোনো তথ্য কিংবা সংবাদ প্রকাশ করলে তা প্রমাণ করতে হবে। প্রমাণ করতে না পারলে সেই সাংবাদিক কিংবা সংশ্লিষ্টদের শাস্তি পেতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় আমার বিরুদ্ধে কত মিথ্যা খবর লেখা হলো। পদ্মা সেতু নিয়ে এত মিথ্যা নিউজ হলো। যার বিরুদ্ধে লেখা হলো, সেটা যদি পরে মিথ্যা হয়, তখন যার বিরুদ্ধে লেখা হলো, তার তো যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যায়। কিন্তু যারা লেখেন তারা তো বহাল তবিয়তে থেকে যান।

নতুন আইনের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধিতে বিভিন্ন অপরাধের বিচারের বিষয়ে বলা ছিল। সেগুলোর সঙ্গে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে অপরাধের বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের আইনও আমরা দেখেছি। অনলাইনে ছিল। অনেক আলোচনাও হয়েছে। এরপর এসে হঠাৎ উদ্বিগ্ন হয়ে গেলেন, কীসের জন্য। সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে সম্পাদক পরিষদের বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, যারা আলোচনায় গেছেন, আমি দেখেছি। যারা একটার পর একটা লেখা তৈরি করে আছেন, কখন ছাড়বেন আমার বিরুদ্ধে।

সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাইবার সিকিউরিটি (নিরাপত্তা) প্রত্যেক দেশে বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সেখানে সামাজিক, পারিবারিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আমরা সে লক্ষ্যে উদ্যোগ নিয়েছি।

আইন নিজের গতিতে চলবে : প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল, সাবেক প্রধান বিচারপতি ‘সিনহার বিচার করবেন কিনা’। সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়ে তিনি বলেন, ‘ল উইল টেইক ইটস ওঅন কোর্স (আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে)।’ জবাবটা অতি সংক্ষেপ এবং ইঙ্গিতে হলো কিনা, এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে গুঞ্জনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হাসতে হাসতে বলেন, বেশি কথা বললে বলবেন বেশি কথা বলি, আর কম বললে বলবেন, কম বলি।

সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহার বই লেখা এবং ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও দেশটির অন্য নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন, শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন না দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। বলেছেন, যদি ভারত সরকার আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়, তাহলে ‘দে উইল লুজ বাংলাদেশ’। তিনি এমনও বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে, হিন্দুদের মন্দির ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘে মোদির কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন কিনা- প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান এক সাংবাদিক। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি চিকিৎসার জন্য বাইরে গেলেন, বললেন, মেয়েদের দেখতে যাচ্ছি। তারপর সেখানে থেকে গেলেন। যে কথাগুলো তিনি বলেছেন, এখানে আমার কমেন্ট করার কিছু নেই। শেষ পর্যন্ত কী করেন, আমি দেখি। আমি অবজার্ভ করছি। শেখ হাসিনা আরও বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে বিচারপতি সিনহাকে বিচারাঙ্গনের সর্বোচ্চ পদে নিলেও তিনি তার ‘মান রাখতে’ পারেননি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপিলেট ডিভিশনের কয়েকজন বিচারপতি মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে দেখা করে তারাই কিন্তু অভিযোগগুলো পেশ করেন। তারা এ কথাও বলেছিলেন, তিনি কোর্টে থাকলে তারা কোর্টে বসবেন না। সমস্যাটা কিন্তু এখানেই সৃষ্টি। এখানে আমরা কিছু করিনি। 

লিটনের বিরুদ্ধে নোংরা প্রচারণায় বিকৃত মানসিকতা : প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে এশিয়া কাপ চলাকালে ক্রিকেটার লিটন কুমার দাসের আক্রমণের শিকার হওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন এক অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ জন্যই তো আমরা সাইবার সিকিউরিটি আইনটি পাস করেছি। এটা আপনাদের জানা দরকার। এসব নোংরামি যাতে না হয়, সেটি মাথায় রেখেই এ আইনটি করা হয়েছে।

লিটন দাসের আক্রমণের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই ছেলেটা এত চমৎকার খেলেছে। একটা বল... একটা রান (শেষ বলে হেরে যাওয়া প্রসঙ্গে)। আমি বলব আমাদের দুর্ভাগ্য। তারপরও তাকে গালি দেওয়ার কী থাকতে পারে, আমি ঠিক বুঝলাম না। আমি ঠিক জানি না ফেসবুকে কে কী লিখেছে, আমি ওই সময়ে ব্যস্ত ছিলাম। তাছাড়া আমি ফেসবুক ব্যবহার করি না। কেউ যদি আমাকে পাঠায়, তখনই দেখা হয়। কিন্তু যারা এ ধরনের (সাম্প্রদায়িক আক্রমণ) কাজ করে তারা কীভাবে এটা করে বুঝে আসে না। তারা বিকৃতমনা। এই উগ্রবাদ-মৌলবাদের বিরুদ্ধেই আমাদের সরকার কাজ করছে।  

সমাবেশে লোক দিতে প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল, দেশের জোট রাজনীতির সম্প্রসারণ হচ্ছে, আপনার মহাজোট বড় করার দরকার আছে কিনা? আবার আপনি সরকারবিরোধী জোট বড় হওয়ায় ভয় পাচ্ছেন কিনা? জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, একটা জোট হচ্ছে আমি খুব খুশি। তাদের জোট করার জন্য যদি সহযোগিতা করা লাগে তবে তা আমি করব। কারণ আমরা জানি, বাংলাদেশে ভোট আছে দুই পক্ষে। একটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও আরেকটি এন্টি আওয়ামী লীগ। এখন এন্টি আওয়ামী লীগ ভোটগুলোকে তো একটি জায়গায় যেতে হবে। তাদের জন্য একটি জোট হচ্ছে এবং সেখানে বড় বড় মানুষও আছেন। জোট হওয়া তো ভালো কথা। আমার কথা হচ্ছে শত ফুল ফুটতে দিন। শেখ হাসিনা বলেন, জোট গঠন নির্বাচনের জন্য ভালো। তবে শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে আসবেন কিনা বা আসার সামর্থ্য তাদের আছে কিনা বা সে সাহস তাদের আছে কিনা সেটিও কিন্তু একটি প্রশ্ন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছি। আমি বলেছি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটা জায়গা করে দিন, যে যত খুশি বক্তব্য দিক। আরও দু-একটি জায়গা পাওয়া যায় কিনা তাও দেখছি। এটি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। তারা যদি সমাবেশে মানুষ চায়, সে ব্যবস্থাও আমরা করে দিতে পারি। তাদের এসব সমাবেশ নিয়ে আমার ভয়ের কিছু নেই।

ইভিএমের পক্ষে মত : আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। আপনি সবচেয়ে প্রিয় জিনিস টাকা মোবাইল ফোনে পাঠাতে পারেন। ভোটটাও আপনার প্রিয় জিনিস, তো ভোটটাও কেন আপনি ইভিএমে দিতে পারবেন না? আমি ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে। তিনি বলেন, বরং এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করা উচিত, যেন মোবাইল থেকেও মানুষ ভোট দিতে পারে। তাহলে আর ভোট কেন্দ্রে যাওয়া লাগবে না। ইভিএমটা হোক। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ) প্রজেক্ট পাস করে দিয়েছি। যেহেতু আমরা পাস করে দিয়েছি, তাহলে বুঝতেই পারেন, আমাদের মানসিকতা কী। জনগণের প্রতি আমাদের আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। তাদের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত করা আমাদের দায়িত্ব। আর সেটা মনে করেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইভিএম ব্যবহারে আমার কোনো আপত্তি নেই।

সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে : আগামী জাতীয় নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে বলে আশার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ২০১৪ সালের মতো কেউ বর্জন করলে সরকারের কিছু করার নেই, তাও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপনি নিজেও চান সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হোক, কিন্তু আপনি কতটা আশাবাদী? জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এটা মনে করি, এবার সব দলই আসবে। তবে যদি কেউ না আসে, সেটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। সেখানে আমাদের কোনো কিছু একটা করণীয় নেই। এখানে এত দল, সেখানে কোন দল আসবে আর কোন দল আসবে না, তা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। তাদের সিদ্ধান্ত তো আর আমি নিতে পারি না। এটা তাদের নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪-এর নির্বাচনের আগে আমার একটা চেষ্টা ছিল যে, তখনকার যারা প্রধান বিরোধী দল ছিল বা অন্যান্য বিরোধী দল, আমি তাদের একটা আস্থার জায়গা সৃষ্টি করার জন্য আহ্বান করেছিলাম যে আসুন সবাই মিলে একটা সরকার গঠন করে নির্বাচন করি। তখন বিরোধী দল সাড়া দেয়নি। অন্য যেসব দল সাড়া দিয়েছিল, আমরা তাদের নিয়েই একটা নির্বাচন করি। সেই নির্বাচন ঠেকানোর নামে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারা। মানুষকে যারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে, যারা মানুষের ওপর এত জুলুম করতে পারে, তাদের জন্য এত কান্নাকাটি, এত মায়াকান্না কেন, আমি বুঝতে পারি না। শেখ হাসিনা বলেন, এতিমের সামান্য টাকার লোভ যারা সামলাতে পারে না, আর মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে, তাদের জন্য এত দরদ, এত সিমপ্যাথি, এত কান্নাকাটি, তাদেরকে আনার জন্য এত ব্যস্ত কী কারণে?

আগামী নির্বাচন পরিচালনার জন্য সরকার গঠনে দু-একটা দলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা এটা ঠিক করব। কেবিনেট হয়তো ছোট করে নিয়ে করতে পারি।

আবার কোটা চাইলে শক্ত আন্দোলন করুক : কোটা বাতিল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোটা বিষয়টা আমাদের নজরে আগে থেকেই ছিল। প্রতি বছরই বিষয়টি আমি মনিটরিং করছিলাম। কোনো সরকারি চাকরিতে যদি কোটা পূরণ না হয়, তাহলে মেধাতালিকা থেকে সেই পদ পূরণ করার জন্য আমি নির্দেশ দিয়েছিলাম। এর মধ্যে আন্দোলন শুরু হলো, ভিসির বাড়িতে হামলা হলো। আমি সারারাত জেগে ছিলাম। মেয়েরা হল থেকে বের হয়ে আসছে, মিছিল করছে, সব দেখলাম। কিন্তু অনেক ধরনের মানুষ তো আছে। এই রাতে মেয়েদের যদি কিছু হয়ে যায়? আমি সবাইকে নির্দেশ দিলাম, মেয়েরা যেন নিরাপদে হলে ফেরে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তো কোটা পূরণ না হলে শূন্যপদ মেধাতালিকা থেকেই পূরণ করছিলাম। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি বলে, আমি কোটা চাই না। মেয়েরা বলছে, তারা প্রতিযোগিতা করে আসবে। তাহলে তো আর কোনো অসুবিধা নাই। কোটা না থাকলে আর সংস্কার নিয়েও আন্দোলন হবে না। তাই কোটাই বাতিল করে দিলাম। তিনি বলেন, কিন্তু কোটা বাতিল করেও আরেক মুশকিল। এবার বলে, আমরা বাতিল চাই না, সংস্কার চাই। একবার বলে বাতিল, একবার বলে সংস্কার। কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে আর কোনো কোটা থাকবে না। এখন কারও যদি কোটা দরকার হয়, সেটা বলুক আমাদের এই কোটা চাই। আন্দোলন ছাড়া আর কোটা দেব না। কোটা চাইলে শক্ত আন্দোলন করুক, আবার দেব।

কওমি শিক্ষার ভবিষ্যৎ ঠিকানা করে দিয়েছি : কওমি শিক্ষার স্বীকৃতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কওমি মাদ্রাসার ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ ছিল না। তারা কী করত কোথায় যেত কোনো ঠিকানা ছিল না। আমি তাদের জন্য ভবিষ্যৎ ঠিকানা করে দিয়েছি। হেফাজতের আমির আল্লামা শফী হুজুরের প্রশংসা করা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার কোনো শত্রু ছিল না। তবে হ্যাঁ ওই হেফাজতের ঘটনার রাতের আগে খালেদা জিয়া সবাইকে আহ্বান জানালেন আপনারা সবাই ঢাকা চলে আসেন। আমার মতো চেষ্টা করেছি, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। ওই রকম পরিস্থিতি যেন বাংলাদেশে না ঘটে। খালেদা জিয়া তাকে ওপেন সমর্থন দিয়েছিলেন, জামায়াত আল্লামা শফীকে সমর্থন দিয়েছিল। তিনি বলেন, ওই রাতে মতিঝিল শাপলা চত্বরসহ মানুষ যে টেনশনে ছিল তাদেরকে তো টেনশনমুক্ত করেছি। এজন্য আমি তো ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। সে সময় অনেকে বলেছেন, আমি তো ধর্মেই বিশ্বাস করি না। এরকম একটা ভাবনা অনেকের মধ্যে ছিল। তিনি বলেন, আপনারা যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন, উপমহাদেশে শিক্ষার যাত্রা মাদ্রাসা দিয়ে, হিন্দুদের টং থেকে। কাজেই এটাকে একবারে বাদ দেওয়া যাবে না। কারণ ১৪ থেকে ১৫ লাখ ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখছে।

সর্বশেষ খবর