বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অনলাইন টিভি রেডিও নিয়ন্ত্রণে এবার আসছে সম্প্রচার আইন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাসের পর এবার ‘সম্প্রচার আইন, ২০১৮’ নামে আরও একটি আইন দ্রুত অনুমোদনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার, যেটি দিয়ে অনলাইন গণমাধ্যম, বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও ইত্যাদি সম্প্রচারমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। জানা গেছে, আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করে ‘অনতিবিলম্বে’ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া খসড়ায় উল্লিখিত বিষয়গুলো অন্যান্য আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন ও সংসদ বিষয়ক বিভাগকে সহায়তা করতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানায়, প্রস্তাবিত সম্প্রচার আইনের খসড়া দ্রুত চূড়ান্ত করার জন্য সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির বৈঠক হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাহান আরা বানুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে খসড়াটি মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়। তবে ওই বৈঠকে এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন মন্ত্রিসভায় পাঠানোর আগে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।

সভায় উপস্থিত সূত্রগুলো জানায়, প্রস্তাবিত আইনের সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ প্রায় ১৭টি আইনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ফলে অন্যান্য আইনের সঙ্গে এই আইন যেন সাংঘর্ষিক না হয় সে বিষয়টি আরও গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত বলে বৈঠকে অভিমত দেন আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি। একই ধরনের বিভিন্ন আইনের মধ্যে শাস্তির পার্থক্য রয়েছে কিনা তাও পরীক্ষা করে দেখা দরকার বলে আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়। শেষে সিদ্ধান্ত হয়, সম্প্রচার আইনের খসড়ায় বর্ণিত বিষয়গুলো অন্যান্য আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা সে বিষয়টি যাচাই করে দ্রুত এটি চূড়ান্ত করতে হবে। সম্প্রতি ওই সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য এর কার্যবিবরণী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে পাঠানো হয়েছে। ২০১৪ সালে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রকাশ করে সরকার। এরপর ওই নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য এ সংক্রান্ত একটি আইন প্রণয়নে ৪০ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি বিভিন্ন  বৈঠকে মিলিত হয়ে একটি খসড়া প্রণয়ন করে। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর প্রস্তাবিত খসড়াটি মতামতের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়। প্রস্তাবিত খসড়া অনুযায়ী এই আইনের ধারা লঙ্ঘন করলে ৩ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অনধিক ৫ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। উপরন্তু সম্প্রচার আইনে অপরাধ চলতে থাকলে প্রতিদিনের জন্য অপরাধীকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানার সুযোগও রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনের অধীনে সাত সদস্যের একটি সম্প্রচার কমিশন গঠন করবে সরকার। এ কমিশন সম্প্রচারের লাইসেন্স ছাড়াও সম্প্রচার যন্ত্রপাতির লাইসেন্স দেবে। কমিশনের অনুমতি ছাড়া সম্প্রচার লাইসেন্স হস্তান্তর করলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। অনুমতি নিয়েও ৪৯ শতাংশের বেশি শেয়ার হস্তান্তর করা যাবে না। নির্ধারিত ফি দিয়ে লাইসেন্স নবায়ন করা যাবে। এই কমিশনই আলোচ্য আইনে শাস্তির বিধান নিশ্চিত করবে। খসড়ার ২৬ (৮) ধারায় বলা হয়েছে, কমিশন নিজ উদ্যোগে সম্প্রচারকারী বা নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানকে অনধিক ৫ কোটি টাকা জরিমানা করতে পারবে। যদি কমিশনের বিশ্বাস জন্মায় যে, সম্প্রচারকারী বা নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান পরিচালনা আচরণ নিয়ন্ত্রণ বিধি বা শৃঙ্খলাবিধি বা জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা বা জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা ভঙ্গ করেছে বা এমন কোনো বিষয়বস্তু সম্প্রচার করে যা দেশের নিরাপত্তা ও অখণ্ডতার প্রতি হুমকি হবে; সারা দেশে বা দেশের অংশবিশেষে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, নাশকতা ও সহিংসতা উৎসাহিত করবে বা জনশৃঙ্খলা বিনষ্টের আশঙ্কা সৃষ্টি করবে; অশ্লীল ও অশিষ্ট এবং মিথ্যা ও বিদ্বেষমূলক বলে বিবেচিত হবে।

সর্বশেষ খবর