বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

কুমিল্লায় হত্যা মামলায় খালেদার জামিন নামঞ্জুর

ফখরুলসহ সাত নেতার জামিন

নিজস্ব প্রতিবেদক ও কুমিল্লা প্রতিনিধি

কুমিল্লায় হত্যা মামলায় খালেদার জামিন নামঞ্জুর

নাশকতার মামলায় গতকাল আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির শীর্ষ নেতারা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে আগুন দিয়ে আটজন হত্যা মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নামঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল হত্যা মামলাটির শুনানি শেষে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক বিপ্লব দেবনাথ এ আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকু। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন জেলা পিপি অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান লিটন। এদিকে সরকারবিরোধী উসকানি, পুলিশের কাজে বাধা ও নাশকতার অভিযোগে মামলায় আগাম জামিন পেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সাত শীর্ষ নেতা। অ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকু বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত একাধিকবার হত্যা মামলাটির তারিখ দিয়েছিলেন। আমরা আদালতের চাহিদা অনুযায়ী সব কাগজপত্র প্রদান করেছি। সর্বশেষ আজ (বুধবার) দুই দফা শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার জামিন নামঞ্জুর করেছে আদালত। আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। জামিন পেতে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব। মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে ২০-দলীয় জোটের অবরোধের সময় চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুরে একটি বাসে পেট্রলবোমা ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। এতে আটজন যাত্রী দগ্ধ হয়ে মারা যান, আহত হন ২০ জন। এ ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান বাদী হয়ে ৭৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় খালেদা জিয়াসহ বিএনপির শীর্ষস্থানীয় ছয়জন নেতাকে হুকুমের আসামি করা হয়। ৭৭ জন আসামির মধ্যে তিনজন মারা যান, পাঁচজনকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়। খালেদা জিয়াসহ অপর ৬৯ জনের বিরুদ্ধে কুমিল্লা আদালতে তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ফিরোজ হোসেন চার্জশিট দাখিল করেন।

ফখরুলসহ সাত শীর্ষ নেতার আগাম জামিন : সরকারবিরোধী উসকানি, পুলিশের কাজে বাধা ও নাশকতার অভিযোগে হাতিরঝিল থানার মামলায় হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিন পেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সাত শীর্ষ নেতা। গতকাল বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ও বিচারপতি কাশেফা হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ জামিন মঞ্জুর করে। আগাম জামিনপ্রাপ্ত বিএনপির অন্য নেতারা হলেন— স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। আদালতে বিএনপি নেতাদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবির। পরে জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, নিম্ন আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন জমা হওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপি নেতাদের জামিন দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার হাতিরঝিল থানার এসআই শরিফুল ইসলামের দায়ের করা ওই মামলায় বিএনপির ৫৫ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে সাতজনকে গ্রেফতারের পর আদালতে হাজির করে এক দিনের রিমান্ডেও নিয়েছে পুলিশ। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে রবিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। তাদের ওই বক্তব্যের পর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সেদিন রাতে মগবাজার রেলগেট এলাকায় যান চলাচলে বাধা দেয়, পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং যানবাহন ভাঙচুর করে।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রশ্নে রিটের আদেশ আজ : দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের বিষয়ে আজ আদেশ দেবে হাই কোর্ট। গতকাল বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে আদেশের জন্য এ দিন ঠিক করে। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী ও আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর এই শুনানি ১ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে পর পর দুই দিন শুনানি শেষে রিট আবেদনটি আদেশের পর্যায়ে এলো। গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশেষায়িত হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। রিটটি দায়েরের পর ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, রিটে বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার নির্দেশ এবং এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়। রায় ঘোষণার পর পরই তাকে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।

সর্বশেষ খবর