শুক্রবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

এবার পরিবারতন্ত্রের তুমুল লড়াই

নিজের বিকল্প হিসেবে পরিবারের সদস্যদের চান এমপি মন্ত্রী-নেতারা, দ্বন্দ্ব একাধিক আসনে, ছাড় দিতে নারাজ দলের অন্য নেতারা

মাহমুদ আজহার ও রফিকুল ইসলাম রনি

এবার পরিবারতন্ত্রের তুমুল লড়াই

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যারা নির্বাচন করতে পারছেন না তারা চাইছেন, দলীয় মনোনয়ন যেন তাদের বদলে আর যাই হোক স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, ভাইয়েরা পান। দুই দলেই মনোনয়ন নিয়ে চলছে এবার পরিবারতন্ত্রের লড়াই। অতীতেও কোনো মন্ত্রী-এমপির মৃত্যু বা তাদের শূন্য আসনে উপনির্বাচনে পরিবারের সদস্যরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মনোনয়ন লাভ করেছেন। কেউ কেউ মামলায় কেউ বা শারীরিক অসুস্থতায় অক্ষম বলে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারছেন না বলে মনে করছেন। কিন্তু তাই বলে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের ভাগ্যে মনোনয়ন জুটুক এমনটা কেউ চাইছেন না। কী আওয়ামী লীগ, কী বিএনপি—সব দলেই নিজেদের শক্তি প্রভাব পরিবারের সদস্যদের মনোনয়ন লাভের জন্য বিনিয়োগ, তদবির করছেন। বিএনপিতে সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা এখন মামলায় জর্জরিত। কেউ মৃত কেউ বা অসুস্থ। তাই মামলা বা অন্য কোনো কারণে নির্বাচন করতে না পারলে পারিবারিক সদস্যকেই ‘প্রার্থী’ হিসেবে দেখতে চান তারা। কোনো কোনো আসনে ছাড় দিতে নারাজ দলের অন্য প্রার্থীরাও। এ নিয়ে দুই দলের অন্দর মহলেই চলছে তুমুল মনোনয়ন লাভের লড়াই।

এরই মধ্যে দুই দলেই মনোনয়ন নিয়ে পারিবারিক লড়াই শুরু হয়েছে। কোনো আসনে বাবা-ছেলে, ভাই-ভাই, স্বামী-স্ত্রী, এমনকি বাবা-মেয়েও মনোনয়ন নিয়ে তৎপরতা শুরু করেছেন। অবশ্য হেভিওয়েট প্রার্থীদের ‘বিকল্প’ হিসেবে পরিবারের সদস্যরা নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে কেন্দ্রে আলোচনা-সমালোচনা দুটোই রয়েছে। দুই দলেই অন্তত শতাধিক আসনে পারিবারিকভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছেন না। তারা বলছেন, উত্তরাধিকারের মনোনয়ন গণতন্ত্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। এতে রাজনীতি মেধাশূন্য হয়ে পড়বে। সামন্ততন্ত্র-পরিবারতন্ত্র থেকে বের হয়ে দলগুলোকে গণতান্ত্রিকভাবে মনোনয়ন দেওয়ার অনুরোধও বিশ্লেষকদের। এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন পারিবারিক রাজনীতি চলছে। এতে অনেক মেধাবী তরুণ নেতৃত্ব বের হয়ে আসতে পারছে না। রাজনীতিতে নতুন রক্ত সঞ্চালন হচ্ছে না। এটা গণতন্ত্রের জন্য চরম অমঙ্গলকর ও অশুভ লক্ষণ।’

আওয়ামী লীগ : পিরোজপুর-১ আসনের আওয়ামী  লীগের বর্তমান এমপি এ কে এম আবদুল আউয়াল। তার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা এবং জেলার রাজনীতি একক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় রাজনীতি। ‘আউয়াল বিরোধী’ জোটের নেতৃত্বে আছেন তার আপন ভাই পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক। তারা দুজন পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মালেক নৌকার টিকিট চান। এ জন্য নির্বাচনী এলাকার মাঠ-ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন। এবারের মনোনয়নে আউয়ালের সামনে বড় বাধা তার আপন ভাই। ‘ভাইভীতিতে’ আউয়ালের পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে তাঁর স্ত্রী জেলা মহিলা লীগের সভাপতি লায়লা এরাজও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে। এলাকার মানুষের প্রশ্ন, নৌকার মনোনয়ন কে পাবেন? পারিবারিক এই যুদ্ধে কে জয়ী হবেন? আউয়াল, ভাই মালেক, নাকি স্ত্রী লায়লা? পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের এমপি ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু। তার বয়স হয়েছে। তিনি যদি মনোনয়ন না চান তাহলে তার আসনে ছেলে ঈশ্বরদী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শিরহান শরীফ তমালকে এমপি হিসেবে দেখতে চান। শুধু ছেলেই নয়, এই আসনে তার মেয়ে মেহজাবিন শিরিন পিয়া এবং পিয়ার স্বামী ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টুও নৌকার মনোনয়নের জন্য লড়ছেন। তবে মেয়ে জামাইয়ের সঙ্গে বর্তমান এমপির দূরত্ব রয়েছে বলে জানা গেছে।

ঢাকা-১৬ আসনের বর্তমান এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা। এ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে যে কয়েকজন প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তাদের মধ্যে অন্যতম তার আপন বড় ভাই এখলাস উদ্দিন মোল্লা। দুই ভাই এবার নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী। তারা সমানতালে চালাচ্ছেন জোর প্রচার-প্রচারণা। মনোনয়ন যুদ্ধে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। শুধু ভাই, স্ত্রীই নয়, পিতার আসনে মনোনয়ন চান ছেলে, মেয়ে ও জামাতারাও। ঢাকা-৫ আসনের বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা। তিনি ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এবার এই আসনে দলের মনোনয়ন চান তার ছেলে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সজল। নিজের প্রার্থিতা জানান দিয়ে নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার, বিলবোর্ড সাটিয়েছেন। নিয়মিত গণসংযোগ, কর্মিসভা করছেন নির্বাচনী এলাকায়। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, বয়সের কারণে বর্তমান এমপি নির্বাচন না করলে তার ছেলে সজলই হবেন নৌকার মাঝি। ঢাকা-৭ আসনের বর্তমান এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিম। গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীনকে পরাজিত করে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। সম্প্রতি স্বতন্ত্র এই এমপি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য হাজী সেলিম এমপি বর্তমানে শারীরিকভাবে অসুস্থ। তিনি যদি মনোনয়ন না চান তাহলে এ আসনে তার ছেলে সোলায়মান সেলিমকে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে চান তিনি।

নাটোর-৪ আসনে বর্তমান এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কুদ্দুস। তিনি এ আসন থেকে চারবার নির্বাচিত হয়েছেন। এ আসন থেকে এবার দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন তার মেয়ে যুব মহিলা লীগের সহসভাপতি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি। বাবা আবদুল কুদ্দুস মনোনয়ন না চাইলে তিনি নৌকার মনোনয়ন পেতে পারেন বলে স্থানীয়দের ধারণা।

ফরিদপুর-৪ আসন থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের কাছে পরাজিত হন। তার স্ত্রী বেগম নিলুফার জাফরউল্লাহকে সংরক্ষিত আসন থেকে এমপি করা হয়েছে। এ আসন থেকে কাজী জাফরউল্যাহ এবারও মনোনয়ন চাইবেন। তবে কোনো কারণে না চাইলে নিলুফার জাফরউল্যাহ নৌকা পেতে পারেন বলে জানা গেছে। তারা দুজনই প্রতিনিয়ত নির্বাচনী এলাকায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

নেত্রকোনা-৩ আসন থেকে এবার মনোনয়নযুদ্ধে মাঠে আছেন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। একই আসনে দলের মনোনয়ন চান তার স্ত্রী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল। তারা দুজনই নির্বাচনী এলাকার গ্রামগঞ্জে ঘুরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়, সরকারের উন্নয়নগুলো তুলে ধরছেন। গাজীপুর-৩ আসনের এমপি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলী। বার্ধক্যজনিত কারণে এবার দলের মনোনয়ন না চাইলে এ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন পেতে পারেন তার ছেলে জামিল হাসান দুর্জয়। তিনি এখন নির্বাচনী এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আছেন।  টাঙ্গাইল-২ আসনের বর্তমান এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামানের বয়স হয়েছে। তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন নাও চাইতে পারেন। সেক্ষেত্রে এ আসনে নৌকার হাল ধরতে চান তার ছেলে মশিউজ্জামান রোমেল। দীর্ঘদিন ধরে রোমেল নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ, কর্মিসভা, উঠান বৈঠক, মতবিনিময় করছেন। ফরিদপুর-২ আসনে ছেলে আয়মন আকবরের জন্য মনোনয়ন চান সাজেদা চৌধুরী। অনেকদিন ধরেই তিনি অসুস্থ। ছেলেকে নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতিও বানান তিনি। পরে অবশ্য মা-ছেলেতে বিরোধ দেখা দেয়। তারপরও এ আসনে সাজেদা চৌধুরী মনোনয়ন না পেলে তিন ছেলে আয়মন আকবর, সাজেদ আকবর বা শাহদাব আকবরের যে কারও মনোনয়ন চাইবেন তিনি।

কক্সাবাজার-৩ আসনের এমপি সাইমুন সরওয়ার কমল। এবারও তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন। এ আসন থেকে এবার মনোনয়ন প্রত্যাশী তার বোন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাবেরী সরওয়ার। 

রংপুর-৫ আসনের বর্তমান এমপি এইচ এন আশিকুর রহমান। তিনি এবার দলের মনোনয়ন চাইবেন। তবে কোনো কারণে তিনি মনোনয়ন না চাইলে তার ছেলে রাশেক রহমান এ আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। 

ময়মনসিংহ-৮ (সদর) আসনের বার বার এমপি হয়েছেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের কারণে তাকে আসনটি ছেড়ে দিতে হয়। পুরস্কার হিসেবে অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে ধর্মমন্ত্রী করা হয়। তবে তিনি বয়সের কারণে এবার মনোনয়ন না চাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পিতার আসনে হাল ধরতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন তার ছেলে মোহিত-উর রহমান শান্ত।  নরসিংদী-৫ আসন (রায়পুরা) থেকে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান এমপি রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজুর ছেলে রাজিব আহমেদ পার্থ। বাবার আসনে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে এলাকায় গণসংযোগ করেছেন তিনি।

বিএনপি : দেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের ছেলে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। তিনি বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক। সম্প্রতি পঞ্চগড়ে এক অনুষ্ঠানে নিজের ছেলেকে প্রার্থী হিসেবে নেতা-কর্মীদের কাছে পরিচয়ও করিয়ে দেন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার। ঠাকুরগাঁও-২ আসনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভাই বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মির্জা ফয়সাল আমিন মনোনয়নপ্রত্যাশী। নাটোর-১ আসন থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে নির্বাচন করতে পারেন বিএনপি জোট সরকারের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমান পটলের সহধর্মিণী অধ্যক্ষ শিরিন সুলতানা।

নাটোর-২ আসনে (সদর) বিএনপি থেকে একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। মামলা-সংক্রান্ত বা অন্য কোনো কারণে তিনি প্রার্থী হতে না পারলে ‘বিকল্প প্রার্থী’ হিসেবে তার সহধর্মিণী জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাবিনা ইয়াসমিন ছবির নাম শোনা যাচ্ছে। সাবিনা ইয়াসমিন ছবিও নিয়মিত এলাকায় যাতায়াত করছেন। তবে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে এলাকার নেতা-কর্মীরা নাটোর-৪ আসনেও প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। দুলু নাটোর-৪ আসনে নির্বাচন করলে সাবিনা ইয়াসমিন ছবি সদর থেকে নির্বাচন করতে পারেন।

ঢাকা-১ আসন থেকে লড়বেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান। তার মেয়ের জামাই বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম ঢাকা-৮ আসন থেকেও মনোনয়নপ্রত্যাশী। ঢাকা-২ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান। মামলা-সংক্রান্ত বা অন্য কোনো কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে তার সহধর্মিণী সাবেরা আমান কিংবা তার ছেলে ব্যারিস্টার ইফরান ইবনে আমান নির্বাচন করতে পারেন।

ঢাকা-৩ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। নিজ এলাকাও সেভাবেই প্রস্তুত করছেন তিনি। তবে মামলা বা অন্য কোনো কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে সেখানে তার পুত্রবধূ বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় ওই আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন।

ঢাকা-৫ আসনে বিএনপির সমাজ কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ। তার  ছেলে তানভীর আহম্মেদ রবিনও ঢাকা-৫ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী। সিরাজগঞ্জ সদর আসন থেকে বিএনপির একক প্রার্থী দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। মামলা বা অন্য কোনো কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে তার সহধর্মিণী রোমানা ইকবাল মাহমুদও ওই আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও অংশ নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন রোমানা মাহমুদ।

কক্সবাজার-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য একক প্রার্থী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। মামলা-সংক্রান্ত বা অন্য কোনো কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ নির্বাচন করবেন। ২০০৮ সালেও হাসিনা আহমেদ এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

ময়মনসিংহ-৫ আসনে নির্বাচন করতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ কে এম মোশাররফ হোসেন। তিনি কোনো কারণে নির্বাচন না করতে পারলে তার ছোট ভাই জাকির হোসেন বাবলুও নির্বাচন করতে পারেন। টাঙ্গাইল-২ আসনে বিএনপি থেকে দলের কারাবন্দী ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু মনোনয়ন চাইতে পারেন। কোনো কারণে তিনি নির্বাচন না করতে পারলে তার ভাই যুবদলের  কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু কিংবা তার আরেক ভাই জেলা বিএনপির সভাপতি কৃষিবিদ শামসুল আলম তোফা দলের সম্ভাব্য প্রার্থী। ঢাকা-৬ আসন থেকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক  হোসেন খোকা। মামলার সাজা-সংক্রান্ত বা অন্য কোনো কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে তার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন মনোনয়ন চাইবেন। ঢাকা-৭ আসনে বিএনপির প্রয়াত নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা নির্বাচন করতে পারেন।

ঢাকা-৮ আসন থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নির্বাচন করতে পারেন। একইভাবে তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস ঢাকা-৯ আসন থেকে নির্বাচনে আগ্রহী বলে জানা গেছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন নরসিংদী সদর থেকে নির্বাচন করবেন। তার স্ত্রী বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা ঢাকা-৯ কিংবা নারায়ণগঞ্জের একটি আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী।

যশোর-৩ থেকে শারীরিক অসুস্থতার কারণে নির্বাচন নাও করতে পারেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম। ওই আসন থেকে তার ছেলে দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ভোটযুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।

নোয়াখালী-২ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক। মামলা-সংক্রান্ত বা অন্য কোনো কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে ওই আসনে তার  মেয়ে তামান্না ফারুক নির্বাচন করতে পারেন। একই অবস্থা  নোয়াখালী-৩ আসনেও। সেখানে নির্বাচন করবেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু। মামলা-সংক্রান্ত বা অন্য কোনো কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে তার সহধর্মিণী শামীমা বরকত লাকী নির্বাচনে লড়বেন। বরকত উল্লা বুলুর পাশাপাশি নিয়মিত এলাকায় যাতায়াত করছেন শামীমা বরকত লাকী।  মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচনে লড়তে চান বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের দুই ছেলে খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু ও খোন্দকার আবদুল হামিদ বাবলু। মানিকগঞ্জ-২ আসনে প্রয়াত শিল্পমন্ত্রী শামসুল ইসলাম খানের ছেলে ও জেলা সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল ইসলাম খান শান্ত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

মানিকগঞ্জ-৩ আসনে নির্বাচন করতে পারেন বিএনপির মরহুম ভাইস চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ খান মুন্নুর মেয়ে আফরোজা খান রিতা।

নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি থেকে ২০০৮ সালে মনোনয়ন পান এ এম বদরুজ্জামান খান খসরু। তিনি সম্প্রতি মারা যান। মারা যাওয়ার আগেই ওই আসনে তার ছেলে মাহমুদুর রহমান সুমন আটঘাট বেঁধে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশীদ। আবার তার স্ত্রী আসিফা আশরাফী পাপিয়াও নাটোরের লালপুর থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী।

জয়পুরহাট-১ আসনে বিএনপির এমপি ছিলেন আবদুল আলিম। তিনি মারা যাওয়ায় ওই আসনে তার ছেলে ফয়সল আলীম নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে এমপি ছিলেন ডা. আবদুল মতিন। তিনি মারা যাওয়ায় ওই আসনে তার ছেলে ডা. এমএ মুহিত নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নেত্রকোনা-৪ এ এমপি ছিলেন লুত্ফুজ্জামান বাবর। বর্তমানে তিনি কারাগারে। তার পরিবর্তে স্ত্রী তাহমিনা জামান নির্বাচন করবেন। ঢাকা-১৪ আসনে এমপি ছিলেন এস এ খালেক। বর্তমানে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। তিনি নির্বাচন না করলে তার ছেলে সৈয়দ সিদ্দিক সাজু নির্বাচন করবেন।

কুমিল্লা-১ আসন থেকে লড়তে চান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে ড. খন্দকার মারুফ হোসেন।

কুমিল্লা-২ আসন থেকে লড়বেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নিজেই। তবে সেখানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মরহুম এম কে আনোয়ারের ছেলে মাহমুদ আনোয়ার কায়জারও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে নির্বাচনে লড়তে চান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত শামসুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম বাবু।  চাঁদপুর-১ আসনে লড়বেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন। বর্তমানে তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন। কোনো কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে ওই আসনে মনোনয়ন চাইবেন তার স্ত্রী নাজমুন্নাহার বেবী।   চট্টগ্রাম-২ আসনের এমপি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। যুদ্ধাপরাধের দায়ে তার মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় ওই আসনে তার স্ত্রী ফারহাত কাদের  চৌধুরী অথবা ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী রয়েছেন মনোনয়ন তালিকায়। সিলেট-২ আসনে এমপি ছিলেন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী। তার নিখোঁজ হওয়ার পর নির্বাচনে লড়বেন তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ মারা যাওয়ায় গাজীপুর-৪ আসনে তার ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ফরিদপুর-২ আসনে কে এম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে শামা ওবায়েদ রিংকু নির্বাচন করবেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর হওয়া জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর আসন পাবনা-১। এ আসনে তার ছেলে ব্যারিস্টার নাদিম মোমেনকে জামায়াতের মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া ২০ দলীয়  জোটের অন্য দলগুলোর নেতাদের মধ্যে দিনাজপুর-১ আসনে জাগপা নেতা প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের স্ত্রী রেহানা প্রধান অথবা তার মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধানকে ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি। কুমিল্লা-১১ আসনে প্রয়াত কাজী জাফর আহমদের মেয়ে কাজী জয়া আহমদ নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পিরোজপুর-১ আসনে যুদ্ধাপরাধের দায়ে আজীবন কারান্তরীণ জামায়াতের সাবেক এমপি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বর্তমানে কারাগারে। ওই আসনে তার ছেলে মাসুদ সাঈদী মনোনয়নপ্রত্যাশী।

সর্বশেষ খবর