এবার কোটার দাবিতে সড়কে অবস্থান নেওয়ায় শাহবাগ এলাকা অচল হয়ে পড়েছে। গত বুধবার রাত থেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা এ অবরোধ-অবস্থানে অংশ নিয়েছেন। শাহবাগ অবরোধ করার কারণে গতকাল সারা দিন রাজধানীজুড়েই ছিল তীব্র যানজট। বিশেষ করে শাহবাগ এলাকায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল এবং বারডেম হাসপাতালে আগত রোগী ও তাদের স্বজনদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এদিকে সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বাতিলে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের এক দিনের মাথায় গতকাল এ সংক্রান্ত পরিপত্রও জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলন করছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। এবার আন্দোলনকারীরা শাহবাগ চত্বরের নাম দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চ। ৪২টি সংগঠনের ব্যানারে একত্রিত হওয়া এই আন্দোলনের আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম জামাল উদ্দিন। বেতন কাঠামোর নবম থেকে ১৩তম গ্রেড (আগের ১ম ও ২য় শ্রেণির চাকরি) পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের কোটা বাতিলের প্রস্তাব গত বুধবার মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হওয়ার পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে শাহবাগ অবরোধ করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তারা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান অনলাইন কমান্ড, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের ব্যানারে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল না করলে তারা আগামীকাল শনিবার মহাসমাবেশ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। শাহবাগ মোড়ে এ অবস্থান নেওয়ার ফলে মৎস্য ভবন, টিএসসি এবং ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তায় সব যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কাঁটাবন থেকে শাহবাগ হয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের দিকে যানবাহন চললেও সেখানে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এর ফলে গোটা নগরীতে সাধারণ মানুষকে পোহাতে হয় যানজটের দুর্ভোগ। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ আতিকুর রহমান জানান, তাদের লাগাতার অবস্থান চলবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা শাহবাগ থেকে সরবেন না। একই সঙ্গে দাবি আদায়ে শনিবার বিকাল ৩টায় মহাসমাবেশের ঘোষণাও দেন তিনি। সন্ধ্যায় মোমবাতি জ্বালিয়ে ৩০ শতাংশ কোটা বহাল রাখার দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। এই সিদ্ধান্ত আমাদের হৃদয়ে আঘাত করেছে। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রেখে প্রিলিমিনারি থেকে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এদিকে, বিকালে সরকারি চাকরিতে আদিবাসীদের ৫ শতাংশ কোটা বহালের দাবিতে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদ। এর আগে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। অন্যদিকে গতরাতে শাহবাগ গিয়ে কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এরপর আজ বিকাল ৩টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেন আন্দোলনকারীরা। কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন : গতকাল জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহম্মদের স্বাক্ষরে জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো। এখন থেকে এই দুই পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, সরকার সব সরকারি দফতর, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চ জারি করা কোটা পদ্ধতি সংশোধন করল। বিএনপির প্রতিক্রিয়া : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, কোটা আন্দোলন নিয়ে সরকার দ্বিচারিতা করেছে। একদিকে-সংস্কার চাইলেও কোটা বাতিল করেছে সরকার। অন্যদিকে কোটার পক্ষের লোকদের, বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামানো হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দুর্নীতি যাতে কেউ প্রকাশ করতে না পারে সে জন্য প্রধানমন্ত্রী এই ডিজিটাল আইন পাস করিয়েছেন।
যেভাবেই হোক না কেন- তিনি এই আইনকে বহাল রাখতে চান। গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন রিজভী। এ সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।